আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

গ্রেনেড হামলা : সেনা মোতায়েনের চিন্তা ছিল বিএনপি সরকারের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৫৮ | আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৯, ১৫:০০

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রায়ই সমাবেশ করত আওয়ামী লীগ। তবে সব সমাবেশে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকতেন না।

২১ আগস্টের সে সমাবেশ শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন- এ কথা আগেই প্রচার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা সে সমাবেশে থাকবেন বলেই দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতারাও সমাবেশ উপস্থিত হয়েছিলেন। একই সাথে দলের কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিও ছিল বেশি।

সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা সবাইকে একদিকে যেমন চমকে দিয়েছিল, তেমনি জনমনে ব্যাপক আতঙ্কও তৈরি হয়েছিল।

ঘটনার পরপরই দেশর বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেন।

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য সিনিয়র নেতাদের অবস্থা জানার জন্য উদগ্রীব ছিলেন দলটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীরা।

ঘটনার পরদিনই দেশের চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম এবং সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় হরতালের ডাক দেয় স্থানীয় আওয়ামী। হরতালের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা ভর করেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের ওপর।

২৪ ও ২৫ আগস্ট দেশজুড়ে হরতালের ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত চলতে থাকে। তখন টানা দিনের হরতাল এতটাই জোরালো ছিল যে, তৎকালীন বিএনপি সরকার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে ওঠে।

দৈনিক প্রথম আলো তখন সংবাদ শিরোনাম করেছিল, ‘স্বতঃস্ফূর্ত হরতালে অচল সারা দেশ।’

আওয়ামী লীগের এ হরতালে সমর্থন দেয় গণফোরাম, জাসদ এবং তাদের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারা দেশে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে। স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের বিশেষ বার্তা দেয়া হয়।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় সেনাবাহিনী মোতায়েনের চিন্তা-ভাবনা ছিল তৎকালীন সরকারের।

গ্রেনেড হামলার কয়েকদিন পরে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে লুৎফুজ্জামান বাবরকে।

গ্রেনেড হামলার পর একদিকে যখন দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে প্রবল চাপের মুখে পড়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার।

বিএনপির সরকারের সময় এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ রা করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, গ্রেনেড হামলায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে থেকে। বিশেষ করে তখন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঠিক তিন মাস আগে সিলেট সফররত ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল।

এদিকে দেশের ভেতরে প্রবল অস্থিরতা এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপ- এই দুই পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু শেখ হাসিনার দিক থেকে কোনো আগ্রহ দেখানো হয়নি।

শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে দৈনিক প্রথম আলো লিখেছিল, ‘আসলে খালেদা জিয়াকে রক্ষার জন্য একটি বিশেষ মহল মাঠে নেমেছে। যারা সমঝোতার কথা বলবে, আমি বলব তারাই খুনি।’

খালেদা জিয়া যখন একদিকে সংলাপের মনোভাব করছিলেন, তখন বিএনপির কোন কোন নেতা গ্রেনেড হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে নানা বক্তব্য দেন।

গ্রেনেড হামলার এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগসহ ১১ দল এবং জাসদ এ সভায় এক দফা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের এই এক দফা ছিল- সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলা।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ