আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

চামড়ার বাজারে ধস, ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসা-এতিমখানা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩২

দেশে কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে এবারে যা ঘটেছে সেটি অনেকে ‘বিপর্যয়ের’ সঙ্গে তুলনা করছেন। চামড়ার দাম এতটাই নিম্নগামী হয়েছে যে বিষয়টি অনেকে মধ্যে বেশ হতাশার তৈরি করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বেশ তড়িঘড়ি করে ঈদের পরদিনই ঘোষণা দিয়েছে যে কেউ যদি কাঁচা চামড়া রফতানি করতে চায় তা হলে তাকে অনুমোদন দেয়া হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেবার পরদিনই সোমবার ট্যানারি মালিকরা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি তুলেছেন।

তারা এটা বলেছেন, সরকার কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দামেই তারা চামড়া কিনবেন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলিয়াসুর রহমান বলেন, ‘চামড়া কিনি আমরা ১০ দিন পরে। আমরা ট্যানারি মালিকরা লবণ দেয়া চামড়া কিনি। আমরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফ্যাক্টরি করেছি। কাঁচা চামড়া যদি বিদেশে চইল্যা যায়, আমরাও তো চামড়া পাব না।’

চামড়া রফতানির সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আড়তদাররা।

চামড়া রফতানি করতে পারলে তারা লাভবান হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন অনেকে। কারণ তারা ইতোমধ্যে ‘যথেষ্ট কম দামে’ ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া বিক্রি করে দিয়েছেন। সুতরাং এখন চামড়ার দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের কোনো লাভ নেই।

দেশের অনেক মাদ্রাসা এবং এতিমখানা কোরবানির পশুর চামড়ার ওপর নির্ভর করে। অনেকে তাদের জবাই করা পশুর চামড়া বিনামূল্যে মাদ্রাসা এবং এতিমখানায় দান করে। সে চামড়া বিক্রির মাধ্যমে মাদ্রাসাগুলো অর্থ উপার্জন করে। এবার চামড়ার দামে নিম্নগামী হওয়ায় মাদ্রাসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন সরকার রফতানির অনুমোদন দিলেও মাদ্রাসাগুলোর কোনো লাভ হবে না।

পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি মাদ্রাসার শিক্ষক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এবার তাদের মাদ্রাসায় প্রায় ২১০০ চামড়া এসেছে। গত বছর চামড়া বিক্রি করে তারা যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছিলেন, এবার সেটির অর্ধেকও হবে না।

তিনি বলেন, ‘এবার চামড়ার বাজার এতোটাই বিপর্যস্ত এবং এতটাই নৈরাজ্য হয়েছে যে মাদ্রাসাগুলো অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবার। চামড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যে টাকা খরচ করেছে, সেটা ম্যানেজ করতে পারবে না এই চামড়া বিক্রি করে।’

ঢাকার বাইরে অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সেগুলো মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে বাধ্য হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণা যদি ঈদের আগেই নেয়া হতো তা হলে এ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতো না। মানুষ কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে গরীব এবং অসহায়দের দিয়ে দেয়। এর মানে যত টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর পুরোটাই গরিব এবং অসহায় লোকদের পকেট থেকে গেছে।’

কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা কিংবা ফেলে দেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে বর্ণনা করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এটা কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়নি। লবণ দিয়ে একটা চামড়াকে তিন মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এটা পঁচে যাবে না বা নষ্ট হবে না।’

রফতানির সুযোগ দিলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম বাড়বে। সে জন্যই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বাণিজ্য সচিব উল্লেখ করেন। ‘প্রান্তিক পর্যায়ে যারা উপকারভোগী- মাদ্রাসা, এতিমখানাগুলো যাতে উপকৃত হয় সে বিষয়টাও আমাদের দেখতে হবে।’

বাণিজ্য সচিব দাবি করেন, প্রয়োজনে কাঁচা চামড়া রফতানির জন্য অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি ঈদের আগেই তিনি বলেছিলেন।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ