আজকের শিরোনাম :

কী প্রভাব ফেলেছে সিরাজগঞ্জের দুধের গ্রামগুলোতে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০১৯, ২০:২৪

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে পোতাজিয়া গ্রাম। এই গ্রামের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস গরুর দুধ বিক্রি। এখানে সবচেয়ে ছোট গরুর খামারিরও অন্তত তিনটি গাভী আছে।

গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে দেখলাম নারী-পুরুষ সবাই গরুর দুধ সংগ্রহ কিংবা গরুর সেবাযতেœ কাজ করছেন।

তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি গবেষণায় শনাক্ত হওয়ার পর সম্প্রতি ঢাকায় হাইকোর্ট তরল দুধ বিপননের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর সুপ্রীম কোর্ট ওই আদেশ আপাতত স্থগিত করেছে। দুধের মান নিয়ে সারাদেশে তুমুল আলোচনা এবং দুধ বিপননে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা গরুর খামারিদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল, তা দেখতেই মূলত এই গ্রামটিতে আসা।

পোতাজিয়া গ্রামে ঢুকেই কথা বলছিলাম একটি গরুর খামারের মালিক ওবায়দুল ইসলামের সাথে। প্রতিদিন তিনি গড়ে ১১৫ লিটার দুধ বিক্রি করেন মিল্কভিটার কাছে।

ওবায়দুল ইসলামের খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯টি গরু আছে। তবে বর্তমানে সাতটি গরু দুধ দিচ্ছে।

গ্রামের এই মানুষটি জানালেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর পোতাজিয়ার মানুষের জীবন অনেকটা থমকে যাবার উপক্রম হয়েছিল, কারণ খামারিদের উৎপাদিত দুধ ক্রয় করছিল না কোম্পানিগুলো।

রাবেয়া বেগম নাম এক খামারির স্ত্রী বলছিলেন, "আমরা দুধ বেইচাই বাঁচি। আইজ কত বছর গরু পালতিছি। এই দুধ বিক্রিই আমাগের সব। কিস্তি-টিস্তি দেয়া থেইকা শুরু করে সব।"

রাবেয়া বেগম এবং ওবায়দুল ইসলামের খামারের মতো প্রায় ৮,০০০ খামার আছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায়। আর এদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে বড় বড় বিপনন কোম্পানি।

প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দুগ্ধ শিল্পের সাথে এই এলাকার প্রায় এক লক্ষ মানুষ জড়িত।

খামারিরা হয়তো মানতে চান না, তবে তাদের কেউ কেউ দুধে কিছু একটা মিশিয়ে জালিয়াতির চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই দুধ সংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে।

তবে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসার অস্তিত্ব নির্ণয়ের কোন প্রযুক্তি এখানে নেই।

প্রাণ কোম্পানির জন্য দুধ সংগ্রহ করে এমন একটি বিক্রয় কেন্দ্রের পরিচালক রাকিবুল মাহমুদ জানান, কিছু খামারি বেশি লাভের আশায় নানা ধরণের অসদুপায় অবলম্বন করে।

বিবিসি বাংলাকে মি: ইসলাম বলেন, "এখানে খামারিরা যখন প্রথমে দুধ নিয়ে আসে, প্রাথমিক অবস্থায় দেখি দুধটা ঠিক আছে কিনা। তারপরে দেখি দুধে পানি মিশাইছে কিনা। অসাধু ব্যবসায়ীরা দুধের মধ্যে পানি দিয়া চিনি মারে। যাতে দুধে পানি মেশাইলেও ধরা না যায়। দুধে ফ্যাট বাড়ানোর জন্য তেল মারে।"

গরুর খামারিদের অনেকেই মনে করেন, তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসার অস্তিত্ব পাওয়ার দাবিটি এক ধরণের ষড়যন্ত্র।

পোতাজিয়া অঞ্চলে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন, "এটা আমাদের ধারণা, এই যে গুড়া দুধের কোম্পানি, বাহিরের থেকে আমদানি করে, এদের কিছু কারসাজি আছে। আমাদের দুধে তো কোন অ্যান্টিবায়োটিক থাকার কথা না।"

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হলেও তরল দুধ নিয়ে আসলে কী হচ্ছে তা নিয়ে ভোক্তাদের মনে নানা প্রশ্নে রয়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, "ট্রাস্ট একবার নষ্ট হলে অবশ্যই প্রভাব পড়বে। সেক্ষেত্রে দুধের চাহিদা কমে যাবে। চাহিদা কমে গেলে দাম কমে যাবে। আলটিমেটলি এটার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খামারিদের উপর।"

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ