আজকের শিরোনাম :

‘এডিস নয়, কিউলেক্স মশা দমন হয় ঢাকায় ব্যবহৃত কীটনাশকে’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০১৯, ১৫:৩৩

ঢাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যক্রমই নেই, ফলে ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, দআসলে ঢাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আসলে কোনো কার্যক্রমই নেই, যে কারণে এই অবস্থার তৈরি হয়েছে।'’

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কার্যক্রম নেয়া হয়, সেটা শুধু কীটনাশক দিয়ে মশা দমন, যার মাধ্যমে আসলে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ করে। ড্রেন, ডোবা, নালা বা রাস্তার আশেপাশে যে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, সেটা হচ্ছে কিউলেক্স মশা আবাসস্থল। কিন্তু এডিস মশার আবাসস্থল হচ্ছে মানুষের বাড়ি, বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানি।’

অধ্যাপক বাশার বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মী দরকার এবং বিশেষ জায়গায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, সেটা সিটি কর্পোরেশনগুলো আসলে করেনি। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের এলে কোনো প্রশিক্ষিত দলই নেই, যারা এডিস মশার লার্ভা বা পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা চিনতে পারেন বা কোথায় এগুলো জন্মায়, সেটা চিনতে পারেন।

কীটতত্ত্বের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, ২০০০ সালের দিকে যখন বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এডিস মশা সার্ভেইল্যান্স নামের একটি প্রজেক্ট নেয়া হয়েছিল। সেই প্রজেক্ট এক বছর চলে। এর পর সিটি কর্পোরেশনে কিছুটা এডিস মশা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তখন ১৪ জনের একটি টিম ছিল, যারা প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করতো যে, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব কোন জায়গায় কেমন আছে এবং সেগুলো গবেষণাগারে নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখা হতো। সে অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনকে একটি তথ্য দেয়া হতো। সেই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি কর্পোরেশন তাদের কার্যক্রম চালাত। কিন্তু এক বছর পরেই সেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশ যখন ডেঙ্গুর প্রকোপে ভুগছে, তখন কলকাতা শহরে ডেঙ্গু গত কয়েকবছর ধরেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।

কলকাতা কর্পোরেশন বলছে, তারা সারা বছর ধরে নিবিড় নজরদারি চালায় যাতে কোথাও পানি না জমে থাকে।

কবিরুল বাশার বলছেন, কলকাতার মতো পদ্ধতি এখন আমাদের অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সঙ্গে এডিস মশা দমনের পদ্ধতি এক করা যাবে না। এ দুটি আলাদা ধরনের। সুতরাং আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেজন্য মশক নিয়ন্ত্রণ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।

তিনি জানান, কলকাতা এ ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে, কারণ তাদের সারা বছর ধরে নজরদারি রয়েছে। শুধু ডেঙ্গুর মৌসুমে নয়, তারা সারা বছর ধরে প্রতি ওয়ার্ডে তদারকি করে। কলকাতায় প্রতি ওয়ার্ডে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পেশাল টিম রয়েছে। যেটা ঢাকার সিটি কর্পোরেশনগুলোয় নেই।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, বর্তমানে যখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি এরকম সংকটজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তখন বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এখন কিছু ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। আসলে কীটনাশক দিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এর বাইরে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, সরাসরি ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সচেতনতা তৈরি করে তাদের সম্পৃক্ত করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

তিনি বলেন, কলকাতায় এক ধরনের জরিমানা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটাও ঢাকায় করা যেতে পারে।’

আসলে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে বলে বলছেন কবিরুল বাশার।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ