আজকের শিরোনাম :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজ বাতিল করার দাবি উঠছে কেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৮

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবীতে গত পাঁচদিন ধরে টানা বিক্ষোভ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

দুইদিন ধরে টানা বিক্ষোভে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবনে তারা তালা লাগিয়ে দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবরিনা সুলতানা বলছেন, "অনেক সময় আমাদের শিডিউল ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা সাত কলেজে ভাইভা নিতে যান, তাদের পরীক্ষার খাতা দেখেন।''

''আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষক সাত কলেজের পরীক্ষা কমিটির সদস্য ছিলেন। তাই আমাদের যেকয়টি ক্লাস নেয়ার কথা ছিল সেগুলো নিতে পারেননি। এখন আমরা সিলেবাস শেষ না করে তো পরীক্ষা দিতে পারছি না"। প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলছিলেন।

এসব দাবিতে টানা পাঁচদিন ধরে বিক্ষোভ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতদুই দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে তারা। তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে সব একাডেমিক এবং প্রশাসনিক

২০১৭ সালে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কিন্তু কয়েকমাস আগে এই সাত কলেজের একাংশ শিক্ষার্থী দাবি করে যে, তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে চায়। এই দাবিতে তারাও বিক্ষোভ করে।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান বলছিলেন, একদিনে তারা যেমন সেশন জটে পড়ছেন অন্যদিকে তাদের পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।

মি. রহমান বলছিলেন, "এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাথে একটা তামাশা শুরু করছে। আমাদের কলেজে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে সবাই ফেল করেছে , একজন পাশ করেছে। একটা ক্লাসে সবাই বাজে ছাত্র কীভাবে হয়?"

তিনি আরো বলছিলেন "তারা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) আমাদের ঠিক মত মূল্যায়ন করে করে না। আমাদের খাতা ফেল করে দেয়। আমার সাথে যে বন্ধুরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজে ছিল, তারা এখন বের হয়ে যাচ্ছে অথচ আমাদের কোন অগ্রগতি নেই"।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা সম্পন্ন করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য অসম্ভব হয়ে পরছে। আর তার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলছেন, "আমাদের ক্লাস বাতিল হয়, আমাদের পরীক্ষা হয় না। এমনও হয়েছে যে তাদের (সাত কলেজ)ভাইভার জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে।''

''আরেকটা বিষয় হলো যে , একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। আমরা এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছি কিন্তু এখন মানুষ জানতে চাই কোন কলেজে পড়?" বলছিলেন তিনি।

এক আগে যখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তখন পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়।

এবারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

এমন পরিস্থিতিতে কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ বলছিলেন "সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত, আমরা শুরু সেটা বাস্তবায়ন করেছি।''

''আমরা যেটা করতে পারি, শিক্ষার্থীদের যেসব প্রস্তাব বা দাবী আছে সেগুলো আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারি। যাতে করে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে"।

এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছে তারা এখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হতে পারবে না। কারণ তারা অনেক পিছিয়ে গেছে। তারা এখন দাবী জানাচ্ছে সাতটি কলেজ নিয়ে আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করতে। সূত্র: বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ