আজকের শিরোনাম :

ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের দৌড়ে এগিয়ে কারা?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০১৯, ১৮:০৩

এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট কে হতে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্ন এখন থেকেই আলোচিত হচ্ছে ক্রিকেট অঙ্গনে। উঠে আসছে নানা ক্রিকেটারের নাম।

সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় আছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার, ভারতের রোহিত শর্মা, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান।

সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান, ভারতের জসপ্রিত বুমরাহ ও নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন।

ব্যাটিং এভারেজে এক নম্বরে আছেন নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসন, যিনি একাই দলকে অনেকটা টেনে তুলেছেন ফাইনালে।

কারা আছেন দৌঁড়ে?

সাকিব আল হাসান, অলরাউন্ডার, বাংলাদেশ

বিশ্বকাপের শুরু থেকে একেবারে যেদিন বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যায় সেদিন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের দিকে তাকিয়ে আশাবাদী ছিলেন বাংলাদেশের ভক্তরা।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেরা চারে তো উঠতে পারেইনি, আট নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে দলটি।

সাকিব আল হাসানের পরিসংখ্যান ও পারফরম্যান্স এই একটি জায়গাতেই ম্লান হয়ে যায়, কারণ বাদবাকি যারা সব তালিকার ওপরের দিকে আছেন তারা সবাই অন্তত সেমিফাইনাল খেলছে, কয়েকজন ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছেন।

কিন্তু তাদের চেয়ে সাকিব একটা জায়গাতে এগিয়ে থাকবে, সেটা হলো ব্যাটে বলে এমন পারফরম্যান্স আর কেউই দেখাতে পারেনি।

সাকিব মোট আটটি ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন, ৬০৬ রান তুলেছেন, ৮৬.৫৭ গড়ে। সাকিবের গড় টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

বল হাতে সাকিব ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১১টি উইকেট।

অর্থ্যাৎ বল ও ব্যাট উভয় মাধ্যমেই সাকিব দলের তিনটি জয়ে ভূমিকা রেখেছেন।

প্রথম দুটি জয়ের একটিতে সেঞ্চুরি করেছেন, একটিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছেন।

মোট আট ম্যাচ খেলা সাকিব ৭টি ইনিংসেই ন্যুনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন।

বিশ্বকাপে তার সর্বনিম্ন সংগ্রহ ৪১ রান।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ এর ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।

ডেভিড ওয়ার্নার, ওপেনার, অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া মানেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের দাপট।

২০১১ বিশ্বকাপ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই একই দৃশ্য দেখা গেছে।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেনের পর আরো একবার বিশ্বকাপে সেরাটা দেখালেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।

ডেভিড ওয়ার্নার এই বিশ্বকাপে ৩টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন।

শুরুটা ধীরগতির হলেও শেষদিকে রানের গতি বাড়িয়ে দেন ওয়ার্নার।

পাকিস্তানের সাথে ১০৭, বাংলাদেশের সাথে ১৬৬ ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ১২২। আফগানিস্তানের সাথেও ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ওয়ার্নার।

কেইন উইলিয়ামসন, অধিনায়ক, নিউজিল্যান্ড

টুর্নামেন্টের সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকার দিকে তাকালে উইলিয়ামসনের রান খুব বেশি মনে নাও হতে পারে, তবে তিনি যে রান করেছেন তাতে নিউজিল্যান্ড দল বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকবার।

প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয় ছাড়া নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি তেমন উল্লেখ করার মতো রান করতে পারেনি।

এরপরই হাল ধরেন উইলিয়ামসন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭৯, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৮ রান তোলেন নিউজিল্যান্ডের এই অধিনায়ক।

মূলত প্রথম পাঁচ ম্যাচের জয়ই নিউজিল্যান্ডকে সেমিফাইনালে উঠতে সাহায্য করে।

মিচেল স্টার্ক, পেস বোলার, অস্ট্রেলিয়া

মিচেল স্টার্ক ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক, সেবার তিনি নিয়েছিলেন ২২ উইকেট।

২০১৫ বিশ্বকাপেও ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক।

এবার সেমিফাইনাল খেলার আগেই তার নামের পাশে ২৬টি উইকেট রয়েছে।

বিশ্বকাপের মতো আসরে মোট ৩বার পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ডও এখন তার।

মিচেল স্টার্ক চলতি বিশ্বকাপেই ২বার চারটি করে ও ২বার পাচঁটি করে উইকেট নিয়েছেন।

তার গড় মাত্র ১৬.৬১, ইকোনমি রেট ৫.১৮। মিচেল স্টার্কের বিশ্বকাপে উইকেট সংখ্যা ১৭ ম্যাচে ৪৮টি।

জো রুট, ব্যাটসম্যান, ইংল্যান্ড

ইংলিশ টেস্ট অধিনায়ক জো রুট এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।

৯ ম্যাচে ৫০০ রান তুলেছেন তিনি। দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাল ধরেছেন এই ক্রিকেটার।

৯১.৭৪ স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন তিনি।ম্যান অফ দা টুর্নামেন্টের দৌড়ে এগিয়ে কারা?

এছাড়া বিশ্বকাপের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫১ রানের একটি ইনিংস খেলেন তিনি।

একটা জায়গায় জো রুট সবার চেয়ে এগিয়ে, ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ১১টি ক্যাচ ধরেছেন তিনি।

রোহিত শর্মা, ওপেনার, ভারত

বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পাচঁ পাচঁটি সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মাই এই বিশ্বকাপে ভারতের পোস্টার বয়।

ভারতের ব্যাটিংয়ের টোন সেট করার দায়িত্বটা তারই, তবে শুরু থেকে তার ওপর চাপ ছিল পাহাড় সমান।

বিশেষত শেখর ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের টপ অর্ডারের দায়িত্ব কাঁধে নেন রোহিত।

৮৭ গড়ে ৭০৩ রান তুলেছেন রোহিত, তবে জীবনও পেয়েছেন বেশ কয়েকটি, যেসব ম্যাচে রোহিত শর্মার ক্যাচ মিস করেছে প্রতিপক্ষ, অন্তত ফিফটি ও ৩টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি, অর্থাৎ সুযোগের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন রোহিত।

তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ১ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর ভারত সেই ম্যাচেই হেরে যায়, এতে করে বোঝা যায় রোহিত শর্মার ব্যাটের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা।

আগে কারা জিতেছিলো এই পুরষ্কার

বিশ্বকাপে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট দেয়া হচ্ছে ১৯৯২ সাল থেকে।

সেবার টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন মার্টিন ক্রো, ৪৫৬ রান করেছিলেন তিনি। তার দল খেলেছিল সেমিফাইনাল।

১৯৯৬ সালে টুর্নামেন্ট সেরা হন সনৎ জয়সুরিয়া, সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল শ্রীলঙ্কা, ২২১ রানের সাথে ৭টি উইকেট নেন শ্রীলঙ্কান এই ক্রিকেটার।

১৯৯৯ সালে ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট হন ল্যান্স ক্লুজনার, তার দল দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনালে নাটকীয়ভাবে হেরে যায়, ২৮১ রানের পাশাপাশি বল হাতে ক্লুজনার নিয়েছিলেন ১৭টি উইকেট।

২০০৩ সালে ব্যাটিং ইতিহাসে বিশ্বকাপের সেরা একটি পারফরম্যান্স দেখান শচীন টেন্ডুলকার, ৬৭৩ রান নিয়েছিলেন তিনি, ফাইনালে খেলে হেরে গিয়েছিল তার দল ভারত।

২০০৭ সালে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রা ১৭টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার পান।

২০১১ সালে যুবরাজ সিং, ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন, সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। সাকিব আল হাসানের এবারের পারফরম্যান্সের আগে যুবরাজ সিংয়ের এই পরিসংখ্যান ছিল বিশ্বকাপের সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স।

২০১৫ সালে আবারো অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়, আবারো এক অস্ট্রেলিয়ান পেস বোলার পান বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার। ২২টি উইকেট নিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ