আজকের শিরোনাম :

ঢাকার তিন সড়কে রিকশা বন্ধ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৬

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার তিনটি সড়কে রিকশা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন রিকশাচালক ও মালিকেরা। ঢাকার সব সড়কে রিকশা চলাচলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা।

ঢাকার আরো তিনটি ব্যস্ত সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ হয়েছে গত ৭ই জুলাই থেকে। যানজট কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নেয়া এই উদ্যোগ নিয়ে পাঠকেরা বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় তাদের মতামত তুলে ধরেছেন।

'রিকশা বন্ধকে সাধুবাদ'

সড়কগুলোতে রিকশা বন্ধ করে যানজট নিরসন আদৌ কতটা হবে সে প্রশ্ন অনেকের মনে থাকলেও অনেকে এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।

মোহাম্মদ আওয়াল নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন -"সারা বাংলাদেশ থেকে রিক্সা উঠিয়ে দেওয়া উচিত, রিক্সার জন্য আমরা হাঁটা ভুলে গেছি, আমরা কয়েক কদম হাঁটা রাস্তায়ও রিক্সা খুঁজি, রিক্সা না থাকলে আমরা মাইলের পর মাইল আমরা হাঁটাহাঁটি করতে বাধ্য থাকতাম যা আমাদের শরীরে জন্য জরুরী দরকার, হাঁটাহাঁটি না করার কারণে আমরা আমাদের শরীরে অনেক রোগের বাসা তৈরি করতেছি, হাঁটাহাঁটি না করার কারণে আমরা অলস হয়ে গেছি "।

'রিকশা বন্ধকে সাধুবাদ জানাই' লিখে হিসনা পারা নামে এক নারী ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

যানজট কমাতে সড়ক থেকে অতিরিক্ত প্রাইভেট কার তুলে দেবার পক্ষে অভিমত
তবে রিকশা বন্ধই যে যানজট নিরসনের একমাত্র উপায় তা কিন্তু অনেকেই মনে করেন না।

রিকশা তুলে দেয়ার পাশাপাশি গাড়ির পার্কিং নিয়ন্ত্রণ , ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ, ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ, সিসিটিভি দ্বারা সব রাস্তা নিয়ন্ত্রণসহ ট্রাফিক আইন ব্যবস্থার প্রয়োগও জরুরী বলে মনে করেন অনেকে।

যেমনটা মনে করছেন নাজমুল আলম কাজল, তিনি লিখেছেন "ঢাকা অতি দ্রুত যানজট মুক্ত হবে না এটা সত্যি, কিন্তু যানজট একটি সহনীয় মাত্রায় আনা যাবে। রিক্সা তুলে দেয়া এর অনেকগুলো সমাধানের মধ্যে একটি । এটিকে আমি স্বাগত জানাই। তবে আরো যে সম্ভাব্য সমাধান আছে সেগুলোকে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। যেমন : ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা , সকলকে ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করা ইত্যাদি"।

জোছনাময়ী জোছনা মনে করেন যানজট সমাধানের জন্য "আগে প্রাইভেট কার তুলে দিতে হবে"।

একটি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য যদি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন তাহলে সড়কে যানজট কীভাবে কমবে?- এই প্রশ্ন যেমন অনেকে তুলেছেন। অনেকে আবার গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রসঙ্গটিও টেনে এনেছেন জোরালোভাবে।

তানজিনা আফরোজার মতে "যানজট তৈরি করে প্রাইভেট কার। গরীব রিকশাওয়ালাদের পেটে লাথি না দিয়ে এক ফ্যামিলিতে একের অধিক প্রাইভেট কার বাতিল করুন।"

"যানজট নিরাসনে প্রাইভেট কার বন্ধ করে দিন। ভিআইপি লেন বা সড়ক বাদ দিন। রিক্সার লেন আলাদা করে দিন। মধ্যবিত্তদের রিক্সা ছাড়া গতি নাই। রাস্তায় বাস যদি থাকে তিনটি প্রাইভেট কার থাকে তিন হাজার, সাধারণ মানুষ যাবে কিসে? আমি মনে করি রিক্সা নয় প্রাইভেট কার যানজটের জন্য দায়ী। প্রাইভেট কার চলাচল কমিয়ে আনেন"- লিখেছেন এজেড লিঙ্কন।

এখানে উল্লেখ্য গত ৩রা জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এক ঘোষণায় জানান- ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা, খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ এবং আসাদগেট হয়ে মিরপুর রোড হয়ে আজিমপুর পর্যন্ত, সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ পর্যন্ত- এই রাস্তাগুলোতে কোন রিকশা চলাচল করবে না।

এর আগে সিটি কর্পোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী এসব এলাকায় রিকশা ভ্যানও বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

ঢাকা শহরের যানজট কমিয়ে গতি ও শৃঙ্খলা আনতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানায় সিটি কর্পোরেশন।

'রিকশাওয়ালাদের জীবিকার কি কোন ব্যবস্থা করা হয়েছে?'

ঢাকার তিনটি সড়কে রিকশা বন্ধ করে দেয়ার এ সিদ্ধান্তকে তাদের 'রুটি-রুজির ওপর আঘাত' বলে অভিযোগ করছেন রিকশাচালকরা। আর রিকশাচালকের এই অভিযোগকেও সমর্থন করছেন অনেকে।

অনেকে মনে করছেন রিকশাচালকের আয় বন্ধ হয়ে গেলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যেতে পারে। যেমন মোহাম্মদ সুমন মনে করেন সড়কে রিকশা বন্ধ করা "...কোন উপায় হতে পারে না। আরো ভালো চিন্তা করা উচিত, যে চিন্তায় দেশ ও জনগণ বাঁচবে । সবাইকে একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। রিকশাচালক তাদের ইনকামের পথ বন্ধ হয়ে গেলে তারা অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হতে পারে"।

ইইঈ ঘবংি বাংলা এর ফেসবুক পোস্ট স্কিপ করুনইইঈ ঘবংি বাংলা এর ফেসবুক পোস্ট এর শেষ
সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তে আকলিমা জাহান শিমু প্রশ্ন তুলেছেন "এই এলাকার রিক্সাচালকদের জীবিকার কি কোন ব্যবস্থা করা হয়েছে? এই এরিয়াগুলোতে অনেক স্কুল-কলেজ আছে, অফিস আছে। সেখানে তারা যাতায়াত কিভাবে করবে? পাব্লিক পরিবহন কি যথেষ্ট পরিমাণে আছে? বলাবাহুল্য সবারতো আর নিজস্ব গাড়ি নেই। রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার আগে কি কোন ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছিলো, জনগণের সুবিধা-অসুবিধা বোঝার জন্য? হুটহাট সিদ্ধান্ত নিলেতো হবে না। এইগুলো ভাবতে হবে।"

'গ্রামে গিয়ে মাঠে কাজ করুন'

অনেক সময় দেখা যায়, একটু বেশি আয়ের আশায় ঈদের সময় বা কোন উৎসবের সময় ঢাকায় এসে রিকশা চালান অনেকে। যারা হয়তো গ্রামে কৃষিকাজ করেন আর ঢাকায় এসে দুই-তিন মাস রিকশা চালান। এটাও রিকশার যানজট তৈরি করার অন্যতম কারণ বলে করা হয়।

আর নতুনভাবে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে চালকেরা আবার গ্রামমুখী হবেন বলে মনে করছেন অনেকে। ঢাকা শহরে ভালো আয় না করতে পারলে রিকশাচালকেরা গ্রামে ফিরে কৃষিকাজে মনোযোগী হবেন বলেও মন্তব্য অনেকের।

রাজিয়া সুলতানা মনে করেন রিকশা বন্ধ করা যানজট কমানোর অন্যতম একটি উপায় এবং তিনি পরামর্শ দিয়েছেন-"যারা রিকশা চালাতে পারছেন না গ্রামে গিয়ে মাঠে কাজ করুন। সরকারের উচিত তাদের সাহায্য করা।"

তবে ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত করতে হলে শহর থেকে মানুষ কমানোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মন্তব্য অনেক পাঠকের। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ