আজকের শিরোনাম :

উদ্ধার হওয়া নবজাতকটিকে কার হেফাজতে দেয়া হবে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ মে ২০১৯, ১৮:২৩

ঢাকার শিশু হাসপাতালের টয়লেট থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতককে আজকের মধ্যে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার ওই কন্যা শিশুটিকে হাসপাতালের একটি টয়লেট থেকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটি এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন আছে।

শিশুটির স্বাস্থ্যের অবস্থা আগের চাইতে ভাল বলে জানা গেছে। তবে শিশুটিকে এখন কার হেফাজতে রাখা হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে কোথায় পাঠানো হবে

শিশু হাসপাতালের গণ সংযোগ কর্মকর্তা এম এ হাকিম জানান, শিশুটিকে হাসপাতালের সমাজসেবা প্রধানের কাছে পুলিশের উপস্থিতিতে আজই হস্তান্তর করা হবে।

এরপর তাকে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন ঢাকার আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেখানেই চলবে তার পরবর্তী পরিচর্যা।

এদিকে শিশুটিকে দেখতে আজও হাসপাতালের ৩০১ নম্বর কেবিনে ভিড় করছেন অনেকেই।

এমন অবস্থায় শিশুটির নিরাপত্তায় তাকে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত কেবিনের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহী অনেকে, পুলিশ কি বলছে?

শিশুটিকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার রাতেই ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ফেসবুক পেজে ছবিসহ একটি পোস্ট দেন। যেন কেউ তার অভিভাবকের খোঁজ পেলে পুলিশকে জানায়।

এরপর থেকেই হাসপাতালে ও পুলিশের কাছে ওই শিশুর দত্তক নেয়ার ব্যাপারে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য ফোন আসতে শুরু করে।

এছাড়া পুলিশের ওই পোস্টে শিশুটির দত্তক নেয়ারআহ্বান জানান আরও অনেকে। তাদেরই একজন তুহিন আফরোজ লাকি।

তিনি জানান, "একটা বাচ্চার জন্য কতোদিন থেকে ট্রাই করছি। আমায় বাবুটা দত্তক দেবেন স্যার, অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো।"

মিসেস লাকির মতো তনভিয়া খানমও বাচ্চার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, "আমি এই বাচ্চাটার দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক। বাচ্চার দায়িত্ব কেউ নিতে না পারলে দুনিয়ায় ওর দায়িত্ব নেয়ার অনেক মানুষ আছে।"

এ ব্যাপারে পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটির অভিভাবকদের না পাওয়া গেলে কেউ যদি শিশুটিকে দত্তক নিতে চায় তাহলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দত্তক নিতে পারেন। তবে সেই এখতিয়ার আদালতের।

তবে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে তার প্রকৃত অভিভাবককে খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

এছাড়া শিশুটিকে টয়লেটে ফেলে যাওয়ার পেছনে কে বা কারা জড়িত সেটা খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করেছে তারা।

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান, শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী।

কেউ ইচ্ছা করেই শিশুটিকে শিশু হাসপাতালের রেখে গেলো, নাকি কোন অসাধু-চক্র শিশুটিকে অন্য কোন জায়গা থেকে চুরি করে এখানে রেখে গেছে সে বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ওসি জানে আলম বলেন, আমরা তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পরে শিশু আইনে আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দত্তক নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের আইন কি বলে:

বাংলাদেশে কোন শিশুকে দত্তক নিতে গেলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আবেদন জানাতে হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৌহিদা খন্দকার।

তিনি জানান, শিশুটির দায়িত্ব যেহেতু সমাজসেবা অধিদফতর নিয়েছে তাই তাকে দত্তক নিতে গেলে আগ্রহীদের সমাজসেবা অধিদফতরে চিঠি লিখে আবেদন জানাতে হবে।

এরপর অধিদফতরের পক্ষ থেকে খোঁজ-খবর নেয়া হবে যে পরিবারটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য যথাযথ কিনা।

এক্ষেত্রে,আগ্রহী পরিবারটির পারিবারিক বন্ধন কেমন, তাদের আয় রোজগার, থাকার পরিবেশ, বাবা মা নি:সন্তান দাবি করে থাকলে সেটা সত্য কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

সেখানে তারা শিশুটিকে দেখভালের জন্য যদি উপযুক্ত প্রমাণিত হয়, তাহলে আদালতের মাধ্যমে শিশুটির গার্ডিয়ানশিপ সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে আগ্রহী পরিবারটিকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।

কিন্তু একবার যদি আদালতের পক্ষ থেকে দত্তকের আবেদন গৃহীত হয় তাহলে পরবর্তিতে যদি শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকেও খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকেও নিজ সন্তানের কাস্টডি নিতে আদালতে আবেদন জানাতে হবে। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ