আজকের শিরোনাম :

বিএনপির ২০ দলীয় জোটে টানাপোড়েন: ভবিষ্যৎ কী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০১৯, ১৮:২৫

বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে হতাশার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তাদের শরিক দলগুলোর অভিযোগ হচ্ছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে জোটের অন্যান্য দলগুলোকে ঠিক মতো মূল্যায়ন করছে না বিএনপি।

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ ২০ দলীয় জোট ছেড়ে দেবার পর এই জোটের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে সম্প্রতি বিএনপি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে মেনে নিতে পারছে না ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।

এই জোটের ভেতরে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাকি দলগুলোর রাজনৈতিক শক্তি তেমন একটা নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অধিকাংশ দলই স্বল্প পরিচিত এবং তারা মূলত বিএনপির উপর নির্ভরশীল।

জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতা সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম মনে করেন, ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট - এ দুটোতে সমানভাবে মনোযোগ দিতে পারছে না বিএনপি।

তিনি বলেন, মনোযোগ দেবার ক্ষেত্রে বিএনপি 'ভারসাম্য' বজায় রাখতে পারছে না।

তবে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে বিএনপি গুরুত্ব দিচ্ছে না - একথা মানতে রাজি নন মি. ইব্রাহিম।

আন্দালিব রহমান পার্থ ২০ দলীয় জোট ছেড়ে দেবার পর যে প্রশ্ন উঠছে সেটি হলো- ২০ দলীয় জোটের কি সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে?

মি. ইব্রাহিম অবশ্য বিষয়টিকে সেভাবে দেখছেন না।

তিনি বলেন, "জোটের রাজনীতি শেষ হয়ে যায় নাই। আমরা আশা করছি ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন হবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এবং ২০ দলীয় জোটকে পুনর্গঠন করে অরিজিনাল লক্ষ্যবস্তু অর্জনের জন্য আমরা এগিয়ে যাব।"

২০ দলীয় জোটের কোন কোন নেতা মনে করেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসুক। কিন্তু মি: ইব্রাহিম সে দাবি তুলছেন না।

তিনি বলেন, "ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে আমাদের আপত্তি নেই। যেমন আমি মনে করি এই ভারসাম্যহীনতার কারণেই পার্লামেন্টে যাওয়া বা না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এরকম ওলট-পালট হয়েছে এবং ঘোলাটে হয়েছে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন মনে করেন, বিএনপি যেহেতু দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে সেজন্য ২০ দলীয় জোটের ছোট-ছোট দলগুলো হয়তো ভাবছে বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত থাকা রাজনৈতিকভাবে তাদের জন্য হয়তো লাভজনক হবে না।

এদিকে বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটের একটি বৈঠক হয়েছে। এরপর এই জোটের কারও সাথে বিএনপির কোন যোগাযোগ হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ২০দলীয় জোট ছেড়ে যাবার বিষয়ে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক কোন চিঠি দেয়নি। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে বিএনপি জানতে পেরেছে বলে উল্লেখ করেন মি: আলমগীর।

তিনি বলেন, "২০ দলীয় জোটের সাথে নির্বাচনের পরে একটা সভা হয়েছিল। তারপরে ২০ দলীয় জোটের কোন নেতা বা কারো সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ হয়নি এবং তারা আমাদেরকে কোন কিছু বলেন নি।"

২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে বিএনপি কোনভাবেই উপেক্ষা করেছে না বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ একবারেই ভিত্তিহীন।

মি. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের সময় ২০ দলীয় জোটের প্রায় সবাইকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বীকার করেন যে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। তবে এই হতাশার পেছনে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন মি: আলমগীর।

তিনি মনে করেন, যে প্রক্রিয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং দেশে যে 'অগণতান্ত্রিক অবস্থা' বিরাজ করছে সেক্ষেত্রে জোটের সদস্যদের মধ্যে হতাশা আসতেই পারে।

রাজনীতি বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন মনে করেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট - এ দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটা বিএনপির জরুরী। কারণ, ঐক্যফ্রন্টের সাথে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বিএনপির একটি সেক্যুলার পরিচিতি থাকবে এবং অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনও দরকার বিএনপির জন্য।

বিএনপি যদি রাজনৈতিক মঞ্চে নিজের মতো করে ফিরে আসতে চায় তাহলে দুটো রাজনৈতিক জোটকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

জোবাইদা নাসরিন বলেন, "কোন একটি জোট ছেড়ে দেয়া আমার মনে হয় না বিএনপির জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দুটো রাজনৈতিক জোটের মধ্যে ভারসাম্য আনা।" বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ