আজকের শিরোনাম :

মাদ্রাসা ছাত্রীর গায়ে আগুন: নেপথ্যে কী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৭

ফেনীর সোনাগাজীতে একটি মাদ্রাসার পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে এক শিক্ষার্থীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর দগ্ধ নুসরাত জাহানকে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নুসরাত স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিতে ওই কেন্দ্রে গিয়েছিলেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে সকালে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে প্রবেশের আগে নুসরাতকে কয়েকজন মুখোশ পরা মেয়ে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়।

তারা নুসরাতকে জানায় যে তার এক বান্ধবীকে ছাদে পেটানো হচ্ছে।

পরিবারের অভিযোগ ওই মেয়েরাই নুসরাতকে মিথ্যা বলে, পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বিবিসিকে বলেন, নুসরাত কয়েকদিন আগে তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা করেছিল, সেই ঘটনার জেরে ওই অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীরা তার বোনকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে।

গত ২৭শে মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তার বোনকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে এমন অভিযোগে পুলিশের কাছে মামলা করে নুসরাতের পরিবার।

পরে পুলিশ ওই মামলার জেরে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে এবং আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠায়।

এই ঘটনার পর পর মাদ্রাসায় ওই শিক্ষকের পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে আন্দোলন করতে শুরু করে।

নুসরাতের ভাই মি. হাসানের দাবি, সেই শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা তার বোনকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিয়ে আসছিল।

"আগুন লাগার পর নুসরাত আমাকে জানিয়েছে যে ওই মেয়েরা মামলা তুলে নিতে বলেছিল, নুসরাত মামলা তুলে নেবে না জানালে তারা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।"

তিনি বলেন, "আজ সকালে আমার বোনের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল। এজন্য আমি তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাই।"

"আমি ওকে হলের ভেতরে বসিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোহাম্মদ মোস্তাক আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় নাই।"

"এজন্য আমি তাকে কেন্দ্রের ভেতরে দিয়েই চলে আসি। আমি ভেতরে থাকলে আজ আমার বোনের সাথে এমন কিছু হতো না।"

নুসরাতকে প্রথমে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাঠানো হয় ২৫০ শয্যার ফেনী সদর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান তার শরীরের ৭০% থেকে ৮০% পুড়ে গেছে।

এমন অবস্থায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। মেয়েটি বর্তমানে সেখানেই ভর্তি আছে।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোঃ আবু তাহের জানান, মেয়েটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে, সে খবর পেয়ে তারা সব ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন।

কিন্তু মেয়েটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে চিকিৎসকের সামনে পুলিশের জবানবন্দিতে নুসরাত জানিয়েছেন যে, পরীক্ষার কেন্দ্রের বাইরে তাকে কয়েকটি মুখোশ পরা মেয়ে ডেকে নিয়ে যায় এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নিতে বলে, নুসরাত তাতে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তবে সেই মেয়েদের কোন পরিচয় তিনি শনাক্ত করতে পারেননি।

পুলিশ বলছে, তারা এই ঘটনার ব্যাপারে এখন পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। তবে তদন্ত চলছে।

তদন্তের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সোনাগাজি থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আমরা এই ঘটনার সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। আমরা ভিক্টিমের পরিবার, মাদ্রাসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি যে, "মেয়েটা তার পরীক্ষার হল থেকে পাশের সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে যায়। যখন আগুন লাগে তখন আশেপাশের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে।

"ওইসময় কাউকে ছাদ থেকে নামতে দেখা যায়নি। শুধু ওই মেয়েকে দেখা গেছে"

পুলিশ বলছে, এটি হত্যাচেষ্টা নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা তাছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে ওই অধ্যক্ষের গ্রেফতারের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তার সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে ওই মাদ্রাসার কোন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন না। তাদের কয়েকজনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ