আজকের শিরোনাম :

ফায়ার ব্রিগেড বা সার্ভিসের নাম বাংলায় 'দমকল' হল যেভাবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৯, ২০:১১

আগুন লাগলেই যাদের কথা মনে পড়ে, তারা হলেন অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী, ইংরেজিতে ফায়ার ব্রিগেড অথবা ফায়ার সার্ভিস।

কিন্তু বাংলা ভাষায় এর পরিচিতি দমকল হিসেবে। অর্থাৎ বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ওইসব নামগুলো ব্যবহার না করে বলে থাকেন দমকল।

আগুন নেভানোর কাজ অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দমকল নামটা কোথা থেকে এলো?

ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে প্রায় দেড়শো বছর পিছিয়ে যেতে হল।

উনবিংশ শতাব্দীর প্রসিদ্ধ সংগীতকার রূপচাঁদ পক্ষী, যিনি সেই সময়ে নানা ধরণের ধর্মসঙ্গীত, টপ্পার সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়েও রসিয়ে গান লিখতেন।

তিনি লিখেছিলেন:

"অগ্নিদেব হলে প্রবল, নির্বাণ করে দমকল,

গোরাদের চেহারা দেখে ভয়ে পালায় বৈশ্বানর,

পাল্লে জল যোগাতে, সাধ্য মতে

সাধ্য কী যে পোড়ে ঘর।

শিল্প ঐতিহাসিক ও কলা সমালোচক দেবদত্ত গুপ্ত বলছিলেন, রূপচাঁদ পক্ষীর ওই গানেই লুকিয়ে রয়েছে দমকল নামের ইতিহাস।

তিনি বলেন, "যে মেসিনে দম দেওয়ার কথা লিখেছিলেন তিনি, সেগুলো আসলে ফায়ার ব্রিগেডকে সতর্ক করার একটা যন্ত্র। বিভিন্ন রাস্তায় বসানো থাকত লাল রঙের লোহার বাক্স।"

"ভেতরে, কাঁচে ঢাকা একটা খোপে থাকত হাতল ঘুরিয়ে দম দেওয়ার একটা যন্ত্র। ওই হাতল ঘোরালেই খবর চলে যেত কাছের দমকল দপ্তরে।"

অধ্যাপক গুপ্তের কথায়, আগুন লাগলে সতর্ক করার এই ব্যবস্থার আগেও আরেকটা ব্যবস্থা করেছিলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। সবে গড়ে ওঠা কলকাতা শহরের বেশীরভাগ বাড়িই ছিল খড়ের চাল দেওয়া।

তিনি বলেন, মাঝে মাঝেই আগুন লেগে যেত। কলকাতা পুলিশই তখন আগুন নেভানোর কাজ করত। কিন্তু কোথায় আগুন লাগছে, সেই খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছতে সময় লেগে যেত।

তাই উঁচু বাঁশের মাচায় একজন করে লোক বসিয়ে রাখা হত, যার দায়িত্বই ছিল চারদিকে নজর রাখা যে কোথাও থেকে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে কী না! ধোঁয়া দেখলেই সেই লোক শিঙা ফুঁকে সতর্ক করত - বলছিলেন তিনি।

ওই দম দেওয়া যন্ত্র, যার হাতল ঘোরালেই মাটির নীচে পাতা তারের মাধ্যমে ফায়ার ব্রিগেডের কাছে খবর চলে যেত, সেই থেকেই বাহিনীর নাম দমকল - দম দেওয়া কল দিয়ে ডাকা হয় যে বাহিনীকে, তা-ই দমকল।

এক ব্রিটিশ অফিসার, ক্যাপ্টেন বার্নাড অ্যান্সন ওয়েস্টব্রুক ওই যন্ত্রটা তৈরী করিয়েছিলেন।

সেটাই সম্ভবত ভারতে প্রথম ফায়ার অ্যালার্ম।

পশ্চিমবঙ্গ ফায়ার অ্যান্ড এমারজেন্সি সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক গোপাল ভট্টাচার্য অবশ্য বলছিলেন যে ওই দম দেওয়া কল থেকেই যে শুধু বাহিনীর নাম দমকল হয়েছে, তা নয়।

তিনি বলেন, "ওটা একটা কারণ। আরও একটা যন্ত্র ছিল, যেটাতে দম দিতে হত। সেটা হল ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িতে যে জলের পাম্পগুলো থাকত, সেগুলোও চালাতে হত হাতল ঘুরিয়ে - অর্থাৎ দম দিয়ে।"

"এই দুটো দম দেওয়া যন্ত্রের ফলেই ফায়ার ব্রিগেডের বাংলা নাম হয়ে গেল দমকল। আর এটা শুধু কলকাতায় নয়, ব্রিটিশরা ঢাকাতেও একই যন্ত্র বসিয়েছিল," বলছিলেন মি. ভট্টাচার্য। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ