বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানকে নিরাপদ মনে করা হচ্ছে না ঠিক কী কারণে?
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০১৯, ২১:৪১
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমান বিধ্বস্ত হবার পর অনেক বিমান সংস্থা এই উড়োজাহাজটি ওড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিল এবং বিশেষজ্ঞরা এর প্রযুক্তিতে কোন ত্রুটি আছে বলে সন্দেহ করছিলেন - তখনও বোয়িং কোম্পানি বলছিল, তাদের বিমান পুরোপুরিই নিরাপদ।
কিন্তু যে মার্কিন সংস্থা নতুন কোন বিমান নিরাপদ কিনা তার সার্টিফিকেট দেয়, সেই ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসন এফএএ-ও এখন এক জরুরি আদেশে এই বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে।
তারা বলছে, নতুন কিছু তথ্যপ্রমাণ ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পরই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর বোয়িং কোম্পানির সম্ভবত আর কিছু করার ছিল না । তারাও এর পর পৃথিবীতে তাদের যে মোট ৩৭১টি বিমান উড়ছে - তার সবগুলোকেই ''গ্রাউন্ডেড'' করে দিয়েছে।
প্রশ্ন হলো: ঠিক কি প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা ঝুঁকির কথা এখানে বলা হচ্ছে?
গত অক্টোবর মাসে বিধ্বস্ত হয় ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিমান, আর তার মাত্র পাঁচ মাসে পরেই ইথিওপিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। দুটিই ছিল বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স এইট বিমান। এফএএ বলেছে, দুটি দুর্ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তার মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখা যাচ্ছে।
সন্দেহের তীর এক নতুন প্রযুক্তির দিকে
বিশেষজ্ঞদের সন্দেহের তীর বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্সে বসানো 'এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম'-এর দিকে।
বলা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিমানটির দুর্ঘটনার কারণ ছিল এই প্রযুক্তিই।
এই স্বয়ংক্রিয় এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম একটি নতুন প্রযুক্তি - যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিমানটি যাতে ওপর দিকে ওঠার সময় হঠাৎ থেমে না যায়।
একটি বিমান যখন ওপর দিকে উঠছে, তখন মাটির সাথে তার কোণ যদি খুব বেশি বড় হয়, অর্থাৎ তা যদি খুব বেশি খাড়াভাবে ওপর দিকে উঠতে থাকে - তাহলে অনেক সময় তা 'থেমে যেতে' পারে।
সেটা যেন না হয় - তা ঠেকানোর জন্যই এই এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেম।
জানা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পাইলট ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন যে, টেকঅফের সময় সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স বিমানটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাদের সমস্যা হচ্ছে।
তারা যে ধরণের সমস্যার কথা বলেন, তার সাথে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হবার সময় যা ঘটেছিল তার অনেক মিল আছে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটিও উড্ডয়নের মাত্র কয়েক মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়।
অভিযোগকারী আমেরিকান পাইলটরা বলছেন, এ্যান্টি-স্টলিং সিস্টেমটা সক্রিয় হলেই তা বিমানটির নাক নিচের দিকে নামিয়ে দিচ্ছে।
মার্কিন বিমান-চলাচল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য জানানোর একটি ব্যবস্থা আছে - তাতে পাইলটরা নাম-পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানেই দু'জন পাইলট নভেম্বর মাসে সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স-এর ঝুঁকি সম্পর্কে দুটি ঘটনা জানিয়েছিলেন।
এই পাইলটরা আরো জানান, তারা অটোপাইলট বা স্বয়ংক্রিয় বিমানচালনা পদ্ধতি সক্রিয় করার পরই বিমানটির নাক নিচের দিকে নেমে যায়, এবং বিমানটির বিপদসংকেত ব্যবস্থা থেকে "ডোন্ট সিংক, ডোন্ট সিংক" (ডু্বে যেওনা!) বলে চিৎকার শোনা যেতে থাকে। দুটি ক্ষেত্রেই বিমানটির পতন ঠেকাতে পাইলটকে অন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল।
এখন এফএএ বলছে, ইথিও্পযি়ান এয়ারলাইনসের বিমানটির গতিপথের সাথে এর আগে বিধ্বস্ত হওয়া ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিমানটির গতিপথের ব্যাপক মিল দেখা যাচ্ছে।
ফ্লাইটরাডারটুয়েন্টিফোর নামে একটি নজরদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, সেভেন থ্রি সেভেন ম্যাক্স বিমানটির টেকঅফ বা উড্ডয়নের পর যখন ওপর দিকে উঠছে তখন তার গতি কমবেশি হচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের ফ্লাইট উপাত্ত থেকে দেখা যায় তার উচ্চতাও ওঠানামা করছিল।
এখন এফএএ যা বলছে, তাতে মনে হতে পারে দুটি দুর্ঘটনার যে মিল তা কোন আকস্মিক ব্যাপার নয় - এরকম কিছু প্রমাণ হয়তো তারা পেয়েছে।
লায়নএয়ারে দুর্ঘটনার পর বোয়িং একটি বুলেটিন বের করেছিল - যাতে পাইলটদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয় যে বিমানের সেন্সর থেকে ভুল তথ্য পেলে কি করতে হবে। বিবিসি
এবিএন/মমিন/জসিম