আজকের শিরোনাম :

পশ্চিমা দুনিয়ায় একমাত্র ইসলামি অভ্যুত্থান চেষ্টা করেছিলেন যিনি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০১৯, ১৮:০৮

ইয়াসিন আবু বকর সম্পর্কে জানতে ত্রিনিদাদের কারো কাছে জানতে চান, উত্তরটা নির্ভর করছে কাকে প্রশ্ন করছেন তার ওপরে।

কারো কাছে তিনি একজন সম্মানিত ধর্মীয় নেতা, কারো কাছে ক্লান্তিহীন সমাজকর্মী আর কেউ কেউ হয়তো বলবে তিনি একজন মাফিয়া গডফাদার।

ত্রিনিদাদের রাজধানী পোর্ট অফ স্পেনে তার প্রতিষ্ঠিত মসজিদে সাক্ষাতের অপেক্ষায় বসে থাকার সময় সংবাদদাতা কলিন ফ্রিম্যান বোঝার চেষ্টা করছিলেন যে, এই তিনটি বক্তব্যের কোনটি তার সঙ্গে মেলে।

শুক্রবার মধ্যাহ্নের খাবারের পর অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও অনেকেই তার সহায়তার জন্য এসেছেন।

তাদের অনেকেই ধর্মীয় কোন বিষয় বা বিয়ের মতো বিষয়ে তার নির্দেশনা পেতে এসেছেন। কখনো কখনো চুরি হয়ে যাওয়া গাড়ি ফেরত, ঋণের ব্যবস্থা করা বা ত্রিনিদাদের বস্তি এলাকার অপরাধী চক্রগুলোর সঙ্গে বিরোধ মেটাতেও তার কাছে সহায়তা চাওয়া হয়।

তিনি বলছেন, ''সমস্যা সমাধানের একটি বিকল্প ব্যবস্থা।''

তিনি যেই হোন না কেন, আবু বকর কোন কাজ অর্ধেক করে করেন না। ১৯৬৯ সালে ত্রিনিদাদের প্রথম মুসলিম ধর্ম গ্রহণকারীদের একজন ছিলেন পুলিশের সাবেক এই কর্মকর্তা। তখন একজন মিশরীয় ধর্মপ্রচারক এই দ্বীপে সফরে আসেন। খৃস্টান ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মকে আবু বকরের কাছে বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয়, যে ধর্মকে তিনি দেখে আসছেন সেই সময় থেকে, যখন তার দেশ একটি দাস কলোনি হিসাবে ছিল।

তবে তিনি শুধুমাত্র বসে কোরান পড়ার মধ্যে সন্তুষ্ট ছিলেন না।

১৯৭০ সাল থেকে কর্নেল গাদ্দাফির একজন অতিথি হিসাবে তিনি কয়েক বছর লিবিয়ায় ছিলেন, যিনি সে সময় সারা বিশ্বে ইসলামিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিতেন।

এরপরে তিনি বাড়ি ফিরে এসে তা নিজের সংগঠন তৈরি করেন, যার নাম জামাত-আল-মুসলিমিন অথবা ইসলামের দল।

ত্রিনিদাদের পাড়া-মহল্লাগুলো থেকে মাদক বিক্রেতাদের সরিয়ে দিয়ে এই সংগঠনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও এই সংগঠনের অনেক সদস্য ছিলেন সাজা খাটা সাবেক অপরাধী। যেসব এলাকায় পুলিশ যেতে ভয় পেতো, সেখানে তার এই 'জেনারেলরা' (তাদের এভাবেই তিনি ডাকতেন) সবার সম্মান অর্জন করে।

তবে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে এরকম একটি ক্ষমতার ব্যাপারকে পছন্দ করেনি ত্রিনিদাদের সরকার। বেশ কয়েকটি অভিযানের পর আবু বকর ভয় পেতে শুরু করেন যে, তারা হয়তো পুরো জামাতকেই ধ্বংস করে দিতে চাইছে।

তার প্রতিক্রিয়া ছিল অভিনব- সেটা ঘটার আগেই উল্টো সরকারি ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়া।

১৯৯০ সালে তার শতাধিক সশস্ত্র অনুসারী দেশের পার্লামেন্টে হামলা করে প্রধানমন্ত্রীকে জিম্মি করে এবং সরকার উৎখাত হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়।

পশ্চিমা কোন পরিবেশে এটাই একমাত্র ইসলামিক অভ্যুত্থান চেষ্টার ঘটনা।


সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলে ছয়দিন পরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং দুই বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন।
এরপর থেকে তিনি শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করে আসছেন বলে দাবি করেন আবু বকর।

যদিও তার সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা মাফিয়া ধরণের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এবং আবু বকরের নিজের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ রয়েছে। যদিও হত্যা এবং চাঁদাবাজির মতো অভিযোগ থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।

সম্প্রতি জানা গেছে, ১০০ জনের বেশি ত্রিনিদাদের বাসিন্দা আইএস নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে গেছে।

শান্ত এবং আলাপী ভঙ্গিতে সাক্ষাৎকারের সময় আবু বকর বলছেন, জামাতের প্রতি সমসময়েই দুষ্ট বা খারাপ লোকজন এসে থাকে। কারণ কঠিন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে এটি তাদের মেনে নিতে হয়েছে।

কিন্তু তিনি বলছেন, তারা কখনো কাউকে আইসিস (ইসলামিক স্টেট) -এ যোগ দেয়ার জন্য উৎসাহিত করেননি।

''আমাদের অনুসারীদের সবসময়েই না যাওয়ার জন্য বলি, কারণ পুরো আইসিস ব্যাপারটিই একটি বাজে ব্যাপার,'' বলছেন ইয়াসিন আবু বকর।

তবে সিরিয়া বা আইসিসের চেয়ে আবু বকর বেশি উদ্বিগ্ন তার দেশের পথে পথে চলা গ্যাং সংস্কৃতির যুদ্ধ নিয়ে। গত একবছরে ত্রিনিদাদে ৫০০'র বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ বছর আগের তুলনায় চারগুণে বেশি।

এ যুদ্ধগুলোতে বেশিরভাগই দরিদ্র এলাকার বিভিন্ন গ্যাং জড়িত, যেখান থেকে আবু বকরের দলও সমর্থক যোগাড় করে থাকে।

ত্রিনিদাদে এখন আইসিসের চেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে দেশটির গ্যাং সংস্কৃতি।

আবু বকর আরেকটি আন্দোলন ঘটানোর চেষ্টা করবেন না। তবে ত্রিনিদাদের সমস্যাগুলোর জন্য সামাজিকভাবে রক্ষণশীল একটি দল তৈরি করবেন।

তার একজন সহকারী ডেভিড মিলিব্যান্ড বলছেন, ''আপনি কখনোই অন্য কাজ থেকে এত বেশি উপার্জন করতে পারবেন না, যা মাদক ব্যবসা থেকে অর্জন করা যায়।"

"ফলে অনেক তরুণ সহজ আয়ের জন্য এসব চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে সরাতে দরকার তাদের বিকল্প বিশ্বাস দিতে হবে। আমি সেজন্য ইসলাম বেছে নিয়েছি, কিন্তু অন্যদের মতামত হয়তো আলাদা।''

সিয়া লোটস নামের একটি বস্তি এখন গ্যাং মুক্ত হতে পেরেছে। কিন্তু স্থানীয় নেতারা বলছেন, পুরনো দুর্নামের কারণে এখানকার তরুণদের এখনো চাকরি পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়।

যতদিন এরকম চলতে থাকবে, ত্রিনিদাদের অপরাধ সমস্যাগুলো বহাল থেকে যাবে, তার সেসব সমাধানের জন্য মানুষ বিকল্প খুঁজতে থাকবে।

আর সেটি হলে ইয়াসিন আবু বহরের কাছে প্রতি শুক্রবার দেখা করতে আসা মানুষের অপেক্ষার সারি হয়তো আরো লম্বাই হবে। বিবিসি

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ