আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদ

ভারত-পাকিস্তান : পারমাণবিক অস্ত্রে কে এগিয়ে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০১৯, ১৫:৩৪

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সে উত্তেজনা পরে সংঘাতে রুপ নেয় যখন ভারতীয় বিমান বাহিনী দাবি করে যে তারা ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বালাকোটে পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকারকারী সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের ঘাঁটি বোমা মেরে ধ্বংস করেছে। সেখানে অনেকের হতাহতের হওয়ারও দাবি করেছিল ভারত।

তবে এই দাবি নাকচ করে দিয়ে পাকিস্তান বরং পাল্টা দাবি করেছিল যে তারা ভারতীয় বিমানকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়েছে।

পরের দিন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংকট আরও গভীর হয়, যখন ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করা এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে বন্দি করার দাবি করে পাকিস্তান। অন্যদিকে পাকিস্তানের একটি বিমানও ভূপাতিত করার পাল্টা দাবি করে ভারত।

পাকিস্তান অবশ্য আটককৃত ভারতীয় পাইলট আভিনন্দন ভার্তামানকে পহেলা মার্চ ছেড়ে দিলেও সীমান্তের লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় উত্তেজনা এখনো রয়েছে।

আর এই সংঘাত এবং উত্তেজনার পুরো সময়টায় আলোচনায় ছিল ভারত ও পাকিস্তানের হাতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টি।

বিশ্বে কার কত পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে?
সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে প্রায় ৬,৫৪০টি। এর পরের অবস্থান রাশিয়ার- ৬,৮৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র। এর পর যুক্তরাজ্যের ২১৫টি, ফ্রান্সের প্রায় ৩০০টি ও চীনের ২৮০টির মতো।

তবে এ ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় পাকিস্তান কিছুটা এগিয়ে রয়েছে মনে করছে গবেষণা সংস্থাটি। ভারতের যেখানে পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ১৩০টি, সেখানে পাকিস্তানের ১৪০টি অস্ত্র রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

এ ছাড়া, ইসরায়েলের ৮০টি এবং উত্তর কোরিয়ার ২০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে জানাচ্ছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

তবে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী সব দেশই এসব তথ্যের ব্যাপারে কড়া গোপনীয়তা বজায় রাখে।

ভারতের পরমাণু অস্ত্রের পরিমাণ
বলা হয়ে থাকে, ভারত ক্রমশ তার পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে।
স্টকহোমভিত্তিক গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ভারতের হাতে ১৩০ থেকে ১৪০টি ওয়ারহেড বা পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের অস্ত্রভিত্তিক প্লুটোনিয়াম তালিকা এবং পারমাণবিক নিক্ষেপ প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে এই তালিকা তৈরি করেছে।

ফিসাইল পদার্থ উৎপাদন
ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র মূলত প্লুটোনিয়ামের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। মুম্বাইয়ের ভাভা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টার (বিএআরসি)-এ প্লুটোনিয়াম তৈরি হয়। ২০১০ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৪০ মেগাওয়াট থার্মাল ভারী পানির (সিআইআরইউএস) রিঅ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লী এবং ১০০ মেগাওয়াটের ধ্রুব ওয়াটার রিঅ্যাক্টরে এটি তৈরি হতো।

ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ফিসাইল ম্যাটেরিয়েলের (আইপিএফএম) তথ্য অনুযায়ী, সামরিক উদ্দেশ্যে ভারত বিএআরসি'তে প্লুটোনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়া প্লান্ট চালু রেখেছে।

ভারত ২০৩০-এর দশকের মধ্যে ছয়টি দ্রুতগতিতে উৎপাদনে সক্ষম পারমাণবিক চুল্লী নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা থেকে প্রচুর প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করা সম্ভব হবে। এগুলো ব্যবহৃত হবে মূলত অস্ত্র তৈরির কাজে- ২০১৬ সালের এক নিবন্ধে এমনটাই বলছে আণবিক বিজ্ঞানীদের জার্নাল বুলেটিন অব অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টস।

এ ছাড়া ইউরেনিয়াম উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে ভারত।

বিমান
বিমানের মাধ্যমেই সবচেয়ে নির্ভুল উপায়ে ভারত পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনী ইতোমধ্যে মিরেজ-২০০০ এইচ যুদ্ধবিমান কেনার অনুমোদন করেছে, যা পারমাণবিক মধ্যাকর্ষণ বোমা বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

এমনকি বিমান বাহিনীর জাগুয়ার আইএস যুদ্ধ-বোমারু বিমান পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহৃত হতে পারে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র
১৯৮৩ সালের সুসংহত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভারতের সেনা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গাইজেশন (ডিআরডিও) স্থলপথভিত্তিক দুটি ব্যালিস্টিক মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র- একটি পৃথ্বী গোত্রের এবং অন্যটি অগ্নি গোত্রের- তৈরি করে।

পৃথ্বী গোত্রটি তিনটি রোড মোবাইল ইঞ্জিন ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে তৈরি (যদিও পৃথ্বী-২ কে শুধু পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বলে মনে করা হয়)।

অন্যদিকে অগ্নি গোত্রের মিসাইলগুলো বেশ দূরত্বে যেতে সক্ষম অর্থাৎ দূরপাল্লার। পরমাণু অস্ত্রের সক্ষমতার পরীক্ষা যাতে খুব দ্রুত দেওয়া যায় সেজন্য এগুলো তৈরি করা হয়েছে, যা পৃথ্বী গোত্রের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতা সম্পন্ন।

২০০৭ সালে স্থাপন করা অগ্নি ১ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্রাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড (এসএফসি)-র আওতায় আরো অধিকতর প্রযুক্তি সম্পন্ন দ্বিস্তর বিশিষ্ট অগ্নি ২ আসে, যার রেঞ্জ বা ব্যাপ্তি ১,০০০ কিলোমিটার। এসএফসি দেশের অন্যান্য পারমাণবিক অস্ত্র পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে।

এদিকে, ২০১৭ সালের ২৭শে এপ্রিল এসএফসি বা কৌশলগত সেনা কমান্ড প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে অগ্নি ৩ সফলভাবে পরীক্ষা করে। দ্বিস্তর বিশিষ্টি এই মিসাইলটির সীমা ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার।

এ ছাড়া আরও বেশি দূরসীমার দুটো ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরি করছে ভারত। এগুলো হলো- অগ্নি ৪ ও অগ্নি ৫। এগুলো দিয়ে দেশটি চীনের ওপর দিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।

২০১৭ সালের ২ জানুয়ারিতে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার গতিসীমা বিশিষ্ট অগ্নি ৪ সফলভাবে পরীক্ষা করা হলেও এখনো আরও প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

তবে ভারতের সেনা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও তিনস্তর বিশিষ্ট স্থল মিসাইল অগ্নি-৫ এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি ৫ হাজার ০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যভেদে আঘাত হানতে সক্ষম।

ক্ষেপণাস্ত্রটি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যেন মোবাইল ক্যানিস্টার সিস্টেম থেকে সহজে স্থানান্তর করা যায় এবং ছোড়া যায়। ফলে সংকটের সময়ে খুব দ্রুত ও কম সময়ে এটি কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা যায়। এ সুবিধাটি অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোয় নেই।

গত বছরের ১৮ জানুয়ারি, আবদুল কালাম দ্বীপ (সাবেক হুইলার আইল্যান্ড) থেকে অগ্নি ৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। তখন এটি ৪,৯০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়েছিল। তবে পুরোদস্তুর কাজে লাগানোর আগে আরও কিছু পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ দরকার হবে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র
চার দশকের পুরনো অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ভেসেল (এটিভি) প্রকল্পের অংশ হিসেবে ভারত কমপক্ষে পাঁচটি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন মিসাইল সাবমেরিনের একটি নৌবহর তৈরি করছে।

ভারতের নিজস্ব তৈরি করা প্রথম পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন সাবরেমিরন ‘আইএনএস অরিহন্ত’ ২০০৯ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল, যেটি ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মোতায়েন করা হয়।

পরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় সাবমেরিন জাহাজ ‘আইএনএস আরিঘাট’ চালু করা হয়। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ সাবমেরিন তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে, যেগুলো যথাক্রমে ২০২০ এবং ২০২২ সালে উদ্বোধন হতে পারে।

অরিহন্ত চার-টিউবের উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া। এটি ১২টি পর্যন্ত দ্বিস্তর মিসাইল ও ৭০০ কিলোমিটার রেঞ্জের কে-১৫ (বা বি০৫ নামে পরিচিত) সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসএলবিএম) বহন করতে পারে। অন্যদিক ধারণা করা হয়, আরিঘাট ৮টি টিউবে ২৪টি পর্যন্ত কে ১৫ মিসাইল (প্রতি টিউবে ৩টি করে) বহন করতে সক্ষম।

সেনাবাহিনীর গবেষক সংস্থা ডিআরডিও ৩,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ বিশিষ্ট একটি দ্বিস্তরের সাবমেরিন মিসাইল কে ৪ তৈরি করছে, যা কে ১৫-র পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে। ফলে অরিহন্ত চারটি কে ৪ বহন করতে পারবে, অন্যদিকে আরিঘাট ও অন্যান্য পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন সাবমেরিনগুলো ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারবে।

আরও একটি এসএলবিএম ক্ষেপণাস্ত্র কে ৫ তৈরি করার চেষ্টা করছে ভারত। এটির রেঞ্জ বা পরিসীমা হবে ৫,০০০ কিলোমিটার। এছাড়া আরো দূর সীমার জন্য কে ৬ নামে আরো একটি এসএলবিএম তৈরির ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

পৃথ্বী ২-এর অনুরুপ পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ধনুষ ক্ষেপণাস্ত্রটি জাহাজের ওপর থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি এখন ভারতের পশ্চিম উপকূলের কারওয়ার নামক স্থানের পাশে নৌঘাঁটিতে নৌবাহিনীর সুকন্যা ক্লাসের প্যাট্রোল জাহাজের ওপর ব্যবহার করা হচ্ছে।

ক্রুজ মিসাইল
২০০৪ সাল থেকে ভারতীয় সেনা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও অনেক দূরত্বের শব্দের চেয়ে কম গতিসম্পন্ন ক্রুজ মিসাইল তৈরি করে আসছে। ‘নির্বাহী’ নামে ৭০০ কিলোমিটার রেঞ্জের এই মিসাইলটি স্থল, জল এবং আকাশ থেকেও উৎক্ষেপণ করা যায়। তবে দুবার যান্ত্রিক ত্রুঁটির কারণে ব্যর্থ হওয়ায় এটি যে কোনো সময় বাতিল হয়ে যেতে পারে।

তবে ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছিল যে আবদুল কালাম দ্বীপে নির্বাহী ক্রুজ মিসাইলটি উৎক্ষেপণ করেছে ডিআরডিও। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়নি যে এটি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম কি-না।

পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের পরিমাণ
ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে পাকিস্তানও পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন এবং উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ১৪০-১৫০টি ওয়ারহেড বা পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে হিসাব পাওয়া যায়।

আসছে দশকে তা আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

ফিসাইল পদার্থ উৎপাদন
পাকিস্তান প্লুটোনিয়াম ও অধিক বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম (হাইলি এনরিচড ইউরেনিয়াম বা এইচইইউ) দিয়ে তার সামরিক পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলছে।

চারটি ভারী পানির বা হেভি ওয়াটার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর এবং একটি ভারী পানি উৎপাদন প্লান্ট নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের প্লুটোনিয়াম উৎপাদন কারখানা মূলত পাঞ্জাবের খুশাব অঞ্চলে।

অন্যদিকে, ইউরেনিয়াম পাঞ্জাবের কাহুতার খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ (কেআরএল) কমপ্লেক্সের প্লান্টে এবং গাদওয়ালের একটি ছোট প্লান্টে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়।

বিমান
পারমাণবিক বোমা বহনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বিমান হলো পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) মিরেজ-৩ এবং মিরেজ-৫ যুদ্ধবিমান।

মিরেজ-৩ ব্যবহার করে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। আবার মিরেজ-৫কে পারমাণবিক মধ্যাকর্ষণ বোমা নিয়ে আঘাত হানার মতো দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে বলে সুইডিশ সংস্থাটি বলছে।

এ ছাড়া চীনের যৌথ সহযোগিতায় তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তান কিনে নিচ্ছে, যা মিরেজ বিমানগুলোর পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে পারে। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা ৪০টি এফ-১৬বি যুদ্ধবিমানও রয়েছে পাকিস্তানের। এগুলোর পারমাণবিক অস্ত্র বহন করার সক্ষমতা আছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।

ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র
পাকিস্তানে স্বল্প এবং দূর পাল্লার উভয় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে যাচ্ছে। বর্তমান গজনভী (হাটফ-৩) এবং শাহীন-১ (হাটফ-৪) নামে দুটি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে। পাশাপাশি আরো বেশি দূরে ছোড়া যায় এমন শাহীন-১ এবং শাহীন-১/এ এখন তৈরির পর্যায় রয়েছে।

পাকিস্তান দুই ধরনের পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছে। একটি মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘুরি (হাটফ-৫), যার রেঞ্জ ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার এবং অন্যটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জের শাহীন-২ (হাটফ-৬)।

২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা আরো বেশি দূরপাল্লার শাহীন-৩ মিসাইল এখন প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত উন্নয়নের পর্যায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ দূরত্বের (২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার) লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।

শাহীন-৩ এর আদলে পাকিস্তান জাতীয় প্রতিরক্ষা কমপ্লেক্স আরেকটি নতুন মধ্যম পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র বহনযোগ্য ‘আবাবিল’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তান ঘোষণা করেছিল যে কারিগরি বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য এটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

আরও দুটি স্থলভিত্তিক স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল স্থাপন করেছে পাকিস্তান। একটি হলো, ২০১১ সালে পরীক্ষিত ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের আবদালি (হাটফ-২) এবং ২০১৭ সালে পরীক্ষিত ৬০ কিলোমিটার রেঞ্জের নাসর (হাটফ-৯)।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র
ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে পাকিস্তানও সমুদ্র থেকে ছোড়া যায় এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তান ঘোষণা করেছিল যে তারা পানির নিচের ভ্রাম্যমাণ প্লাটফর্ম থেকে ভারত মহাসাগরে বাবুর-৩ নামের একটি সাবমেরিন-লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল (এসএলসিএম)-এর পরীক্ষা চালিয়েছে। 
এটি স্থলভিত্তিক বাবুর-২ গ্রাউন্ড-লঞ্চড ক্রুজ মিসাইলের (জিএলসিএম) অনুরুপে তৈরি এবং ৪৫০ কিলোমিটার রেঞ্জ পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে।

ভূমি ও আকাশপথ ভিত্তিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র
বাবুর-৩ এসএলসিএমের পাশাপাশি পাকিস্তান দুই ধরনের ক্রুজ মিসাইল তৈরি অব্যাহত রেখেছে। বাবুর (হাটফ-৭) উন্নত ভার্সন হলো ৭০০-কিলোমিটার রেঞ্জের বাবুর-২ ।

এটি ২০১৬ সালে প্রথম উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বে সাধারণ বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করার মত শক্তিসম্পন্ন রা'আদ (হাটফ-৮) ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাতবার পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

২০১৭ সালে এটির একটি উন্নত সংস্করণ রাআদ-২ উদ্ভাবন করে দেশটি, যেটি আরো বেশি দূরত্বে ছোড়া যায়।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ