আজকের শিরোনাম :

বিশ্বের যে ভাষাগুলোকে সবচেয়ে দক্ষ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৬

ভাষার ভৌগোলিক ব্যাপ্তি অবিশ্বাস্য রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭ হাজার ধরনের ভাষায় কথা বলার প্রচলন রয়েছে।

এর মধ্যে চীনের ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। আবার ৪৬ রকমের ভাষা আছে, যা শুধু একজনই ব্যবহার করে থাকেন।

কোন ভাষাটি আমাদের কানে সবচেয়ে ভালো শোনাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে আমরা প্রায়শই ভাষাগুলোর মধ্যে তুলনা করে থাকি। কিন্তু কোনটি সর্বাধিক দক্ষ ভাষা সেটা নির্ধারণ করা হয় কীভাবে?

সাধারণত দক্ষতা বলতে বোঝায় সবচেয়ে কম চেষ্টায় সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা অর্জন করা। গবেষকরা ভাষার দক্ষতা গণনার সময় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।

সবচেয়ে দ্রুত যে ভাষা
অস্ট্রিয়ার ক্ল্যাগেনফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জারট্রড ফেনক-ওজলন জানিয়েছেন, কথা বলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুততম ভাষাটি হলো ‘তেলেগু’। এই ভাষায়প্রধানত দক্ষিণ ভারতের ৮ কোটিরও বেশি মানুষ কথা বলে থাকে। একে ওই গবেষণায় দ্রুততম কথ্য ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ওই গবেষণায়, ফেনক-ওজলন ৫১টি ভাষার স্থানীয় ভাষাভাষীদের একত্রিত করেছিলেন যাদের মধ্যে ১৯টি ভাষার ভাষাভাষী ইন্দো-ইউরোপীয় ও ৩২টি ভাষার অ-ইন্দো ইউরোপিয়ান।

গবেষণার অংশ হিসেবে তাদের সহজ কিছু বাক্য অনুবাদ করার জন্য বলা হয়েছিল, যেমন- সূর্য ঝলমল করছে, আমি শিক্ষককে ধন্যবাদ দিয়েছি, ঝর্ণাটি ডান পাশে আছে, নানা/দাদা ঘুমচ্ছেন।

এর পর অংশগ্রহণকারীদের তাদের অনুবাদগুলো একটি স্বাভাবিক গতিতে পড়তে বলা হয়।

সেখানে দ্রুততম কথ্য ভাষা হিসেবে তেলেগু খুব অল্পের ব্যবধানে জাপানিজ ভাষাকে হারিয়ে দেয়। এ ছাড়া তালিকার সবচেয়ে শেষের প্রান্তে রয়েছে থাই ভাষা। তার আগে রয়েছে ভিয়েতনামিজ।

তথ্যের ঘনত্ব
যে কোনো ভাষার মূল কাজ হলো যোগাযোগ। প্রতি মিনিটে আরও বেশি শব্দ ব্যবহার মানে এই নয় যে বেশি তথ্য পাওয়া যাবে।

লিওন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিদরা বের করার চেষ্টা করেছেন যে, কোন ভাষাটি তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কতটা ভালো।

এ জন্য তারা যুক্তি সম্বলিত পাঁচটি বাক্য ইংরেজি, ফরাসি, স্পেনীয়, ইতালীয়, জাপানিজ, ম্যান্ডারিন এবং জার্মানিতে অনুবাদ করেন। তার পর তারা ওই লেখাগুলো পড়তে ৫৯ জন স্থানীয় ভাষাভাষীদের আমন্ত্রণ জানান।

তার পর তারা প্রতিটি ধ্বনি থেকে পাওয়া গড় তথ্যের ঘনত্ব সেই সঙ্গে প্রতি সেকেন্ডে কথিত ধ্বনির গড় সংখ্যা গণনা করেন। পরে তারা এই উপসংহারে আসেন যে শুধু দ্রুতগতির ভাষা বেশি মাত্রায় তথ্য সরবরাহ করতে পারে না।

জাপানি ভাষাভাষীরা প্রতি সেকেন্ডে ৮টি ধ্বনি বলতে পারে যেখানে চীন কেবল ৫টি ধ্বনি বলতে পারে। তবে ম্যান্ডারিন ভাষার তুলনায় জাপানিজ ভাষা, মাত্র অর্ধেক তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

তথ্য সরবরাহের হারের ক্ষেত্রে শীর্ষে উঠে এসেছে ইংরেজি ভাষা, এর পরই রয়েছে ফরাসি ও জার্মান ভাষা।

লিওনের গবেষকরা তাদের তালিকায় আরও ১১টি ভাষা যুক্ত করে গবেষণাটি আরও বিস্তৃত করেন। এই ১৮টি ভাষা দশটি ভিন্ন ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত।

সেখানে দেখা যায়, থাই ভাষার গতির দিকে সবচেয়ে নিচে অবস্থান করলেও তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে এর অবস্থান জাপানেরও ওপরে।

চূড়ান্ত কোন উত্তর কি মিলেছে?
গবেষণা এখনো সবচেয়ে দক্ষ ভাষা খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেও কাজ করছেন।

এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ল্যাবের অধ্যাপক টেড গিবসনের মতো কয়েকজন পণ্ডিত জানিয়েছেন যে বর্তমান গবেষণাটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো উত্তরে পৌঁছাতে পারেনি।

বিবিসির ক্রাউড সায়েন্স প্রোগ্রামে অধ্যাপক টেড গিবসন বলেছেন, এটি বেশ কঠিন প্রশ্ন। কেননা আমরা শুধু ভাষাগুলোর কাঠামো নয় বরং এর অর্থও ব্যবহার করছি। এটি বের করা সত্যিই কঠিন। কিছু লোক কয়েকটি পরীক্ষা করেছে কিন্তু তার পরও আমাদের সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।

অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়তো জানতে পারবো যে কোনটি দক্ষ ভাষা। তবে তখন আরেকটি প্রশ্ন আসবে যে কোন ভাষায় উত্তর দেয়া সহজ, কোন ভাষা সবচেয়ে শক্তিশালী।

বৈশ্বিক শক্তি
আবুধাবিভিত্তিক গবেষক কাই চ্যান, যিনি ইনসেড ইনোভেশন এবং পলিসি ইনিশিয়েটিভের একজন বিশিষ্ট ফেলো, তিনি ভাষার শক্তি পরীক্ষা করেছেন। তিনি তার সেই গবেষণায় পাঁচটি সূচক ব্যবহার করেন-
১. ভূগোল: ভ্রমণের ক্ষমতা 
২. অর্থনীতি: অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা 


৩. যোগাযোগ: সংলাপে নিয়োজিত হওয়ার ক্ষমতা 
৪. জ্ঞান ও মাধ্যম: জ্ঞান এবং প্রচার মাধ্যমের গ্রহণ করার ক্ষমতা।
৫. কূটনীতি: আন্তর্জাতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার ক্ষমতা।
উপরিউক্ত সূচকের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই উপসংহারে আসেন যে সব মিলিয়ে ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা। তার পরেই রয়েছে ম্যান্ডারিন, ফরাসি, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষা।

এমনকি চীনের বিশাল অর্থনৈতিক সাফল্যের কথা বিবেচনা করেও তিনি বলেছেন যে, ২০৫০ সালের মধ্যেও ইংরেজি ভাষাই সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা থাকবে।

তবে স্প্যানিশ তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে এবং ফরাসি আর আরবি যথাক্রমে চতুর্থ ও ৫ম স্থান দখলে নেবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ