আজকের শিরোনাম :

বিরোধীদের পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ বর্ণনা করলেন শেখ হাসিনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৬

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের দল আওয়ামী লীগের বিজয়ের জন্য ১৪টি কারণ তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিরোধীদের পরাজয়ের পেছনে সাতটি কারণ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ''এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি জরিপগুলোও এরকম ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল।''

সরকার গঠনের পর শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম দেয়া ভাষণে তিনি সুশাসন ও সংসদকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া নতুন সরকার পরিচালনা ও লক্ষ্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং নতুন মন্ত্রিসভাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে।

বিরোধী জোট থেকে নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেয়ার জন্যও আহবান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়ের কারণ

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। এই 'ল্যান্ড স্লাইড' বিজয়ের কারণ হিসাবে ১৪টি উপাদান উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এগলো হলো:

গত ১০ বছরের উন্নয়নের সুফল
বৈদ্যুতিক বাতির সুবিধা ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার চালু, যা বয়স্কদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা
শ্রমিক বা কম আয়ের পেশাজীবীদের জীবনমানের উন্নয়ন
সরকারি চাকুরীজীবীগণের বেতন ভাতা আড়াই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি
শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পাঁচগুণ বৃদ্ধি
কৃষিজীবীদের সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি
ব্যবসায় এবং শিল্প-বান্ধব পরিবেশ তৈরি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চার লেনের মহাসড়ক ইত্যাদির কারণে আস্থা বৃদ্ধি
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার কারণে দেশের সম্মান বৃদ্ধি
২০১৪ সালের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করা
ব্যাপক প্রস্তুতি এবং ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা

ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাবেক আমলা, আইন-শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, শিল্পী-সাহিত্যিকসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন পাওয়া।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৫৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। আর দল নেতৃত্বাধীন জোট আসন পেয়েছে ২৮৮টি।

বিরোধীদের পরাজয়ের যেসব কারণ

নির্বাচনে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি মোট ৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। আর তাদের জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট সব মিলিয়ে পেয়েছে ৮টি আসন।

প্রধানমন্ত্রী বিরোধী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসাবে তাঁর বক্তব্যে সাতটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো:

এক আসনে ৩-৪জন বা তার বেশি প্রার্থী মনোনয়ন

মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ ও দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে প্রধানমন্ত্রীর পদ নিয়ে অনিশ্চয়তা
জনগণের জন্য কী করবে, তা তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়া, অন্যদিকে প্রতিহিংসাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া
সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরতে না পারা
অতীতে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে না যাওয়া।
ধানের শীষ মার্কায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটারদের মানতে না পারা।

নতুন সরকার যেসব কাজকে প্রাধ্যান্য দেবে

নতুন সরকার যেসব কাজকে প্রাধান্য দেবে সে সম্পর্কে কথা বলেছেন চতুর্থ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলছেন, যেকোনো নীতিমালা প্রণয়নে এবং উন্নয়ন কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহার পথ নির্দেশক হিসাবে কাজ করবে।

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজে গতি আনা হবে। প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, সরকারি সেবাখাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠান করা হবে এবং জাতীয় জীবনের সর্বত্র আইনের শাসন বজায় রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

সংসদকে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবেন বলেও ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্য সংখ্যা নিতান্তই কম, তবে সংখ্যা দিয়ে তাদের বিবেচনা করব না। সংখ্যা যতই কম হোক, সংসদে যেকোনো সদস্যের ন্যায্য ও যোগ্য প্রস্তাব, আলোচনা-সমালোচনা যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বিরোধী দলের সদস্যদের সংসদে শপথ নেয়ার জন্য আহবান জানান।

জাতীয় ঐক্য

শেখ হাসিনা বলছেন, এখন আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক সমান, আমরা সবার জন্য কাজ করবো।

শান্তিপূর্ণ একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন শেখ হাসিনা, যেখানে সকলে নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে পারবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।

দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহবান

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে অস্বস্তি রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের শোধরানোর আহবান জানাচ্ছি। আইনের প্রয়োগ এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্নীতি নির্মূল করা হবে।

দুর্নীতি বন্ধে জনগণকে অংশগ্রহণ করার আহবানও জানান তিনি।

নবীন-প্রবীণের মন্ত্রিসভা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ''নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে আমি আমার মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নবীনদের উদ্যম - এই দুইয়ের সমন্বয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

তরুণদের শক্তি, মেধা ও মননকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথাও তিনি বলেছেন।

তাঁর ওপর জনগণ যে আস্থা রেখেছে, তিনি তার প্রতিদান দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য তিনি দেশবাসী, নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সূত্র: বিবিসি 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ