‘যৌন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ৩ দিন খেতে দেয়নি’

সৌদি আরবে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়া ১০০ জনের বেশি শ্রমিক কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন, যাদের মধ্যে ৮১ জনই নারী।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০১৮ সালেই সৌদি আরব থেকে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন।

দালালদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এক ধরনের কাজের আশা দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্য কাজে বাধ্য হয়েছেন বা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন- ফেরত আসা শ্রমিকদের অধিকাংশের গল্পটাই এ রকম।

এ সপ্তাহে ফিরে আসা নারী শ্রমিকদের কয়েকজন বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে তুলে ধরেন তাদের গল্প।

মৌলভীবাজারের বাসিন্দা আমেনা বেগম (ছদ্মনাম) সৌদি আরবের রিয়াদে প্রায় দেড় বছর ছিলেন, যার মধ্যে ৫ মাসই তাকে কাটাতে হয় পুলিশের হেফাজতে।

আমেনা বেগম জানান, যে বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন, সেখানে যৌন প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

তিনি বলেন, যৌন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টানা ৩ দিন আমাকে খেতে দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে মেরে হাত ভেঙে দেয়া হয় এবং বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। তার পর বাসার সামনে গভীর রাতে পুলিশ আমাকে পায় এবং থানায় নিয়ে যায়।

পরবর্তী সময় চিকিৎসা দেয়ার পর সেখানকার এজেন্টের মাধ্যমে তাকে আবারও ওই বাড়িতেই ফিরে যেতে বাধ্য করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী এ নারী।

সেখানে ফিরে যাওয়ার পর আবারও বেশ কিছু দিন তার ওপর শারীরিক অত্যাচার এবং যৌন নির্যাতন চলে বলে জানান তিনি।

শারীরিক অত্যাচারের পর একপর্যায়ে তাকে আবারও একদিন রাতে বাসা থেকে বের করে দেয়া হলে পুলিশ তাকে বাসার সামনে খুঁজে পায় এবং পরবর্তী সময় পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয় তাকে। পরে পুলিশের হেফাজত থেকেই দেশে ফেরার ব্যবস্থা হয় তার।

২৫ বছর বয়সী এ নারী দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যাওয়ার পর গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন বলে জানান। যদিও যাওয়ার আগে তার কাছে গোপন করা হয়েছিল যে গহকর্মীর কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।

তিনি বলেন, আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা তো হতোই, নিয়মিত খাবারও দেয়া হতো না। আর আমি যে একবছর কাজ করেছি তার মধ্যে আমাকে কেবল দুই মাসের বেতন দেয়া হয়েছে; তাও আংশিক।

আমেনা বেগম জানান, সৌদি আরব যাওয়ার জন্য দালালকে ১ লাখ টাকা দিতে হয় তাকে। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার সময় তাকে ফিরতে হয় খালি হাতে।

তিনি বলেন, ‘বাবা-মা সুদে টাকা ধার নিয়ে আমাকে সৌদি পাঠিয়েছিল। সেখানে সব নির্যাতন, অত্যাচার সহ্য করেও কাজ করতাম টাকার জন্য। কিন্তু টাকা চাইলেই আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হতো। এক বছর কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত দুই মাসের আংশিক বেতন দেয়া হয় আমাকে।’

আমেনা বেগমের সঙ্গে ফেরত আসা নারীদের একজন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার ফাতেমা বানু (নাম পরিবর্তিত)। সৌদি আরবে তার গল্পটাও অনেকটা একই রকম।

গহকর্মীর কাজ করতে গিয়ে একপর্যায়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসা করাতে অস্বীকৃতি জানায় গৃহকর্তা।

এর পর তাকে জোর করে মাদক সেবন করিয়ে ঘরে আটকে রাখা হয়। মাদক সেবনের কারণে একপর্যায়ে তার মানসিক সমস্যাও তৈরি হয় বলে জানান এ নারী।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম