আজকের শিরোনাম :

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০১৮, ২২:০৬

বিশ্বে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে আর্থিক প্রবাহ ২০১৭ সালে প্রায় ৬১ ভাগ বেড়েছে। গেল তিন বছরের মধ্যে এই হার সর্বোচ্চ উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ঋণ পরিসংখ্যান-২০১৯ প্রতিবেদনে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, ২০১৭ সালে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রবাহ এসময় প্রায় ৫৮ ভাগ বেড়েছে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সুখবর নেই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন। বাংলাদেশে খুব ধীরে আসছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। ২০১৩ সালের তুলনায় চীনে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ৩১ ভাগ। চীন ছাড়া নিম্নœ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে গড়ে ২ শতাংশ হারে বেড়েছে এফডিআই। হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আট বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০০৯ সালে দেশে যেখানে বিদেশি সহায়তা বাবদ আসে ১৯৩ কোটি মার্কিন ডলার সেখানে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি ডলারে। সবমিলিয়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে বিশ্বব্যাপী ১২১ দেশে বিদেশি সহায়তার স্থিতি ১০ শতাংশ বাড়লেও বাংলাদেশে তা’ বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা হতে বাংলাদেশ তুলনামূলক বেশি সহায়তা পেয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তা বাড়লেও সরাসরি বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়ছে খুব ধীরে। গত বছর বাংলাদেশে এফডিআই এসেছে ১৮১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এর আগের বছর এফডিআই বাবদ এসেছিল ২১২ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এক বছরে এফডিআই কমেছে ৩০ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। শতকরা হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া গেলেও বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মোট ৬০ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সহায়তা এসেছে। আগের বছরের তুলনায় এসব দেশে বিদেশি সহায়তা বেড়েছে ১৮ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০১৩ সালের পর এই হার সর্বোচ্চ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি বিদেশি সহায়তা বেড়েছে সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোতে। এসব দেশে গত বছর বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে এক বছরে নাইজেরিয়ায় ২৯ শতাংশ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ২১ শতাংশ বেড়েছে বিদেশি সহায়তার স্থিতি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তার স্থিতি সর্বোচ্চ বেড়েছে। এদিকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে মিরসরাইয়ের বেপজা (বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ) অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় বা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য রফতানিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে প্লট তৈরি হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে দেড় লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের। এছাড়া প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আহরণ এবং রফতানি আয় বৃদ্ধি, দেশের আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে সংলগ্ন এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই-প্রথম পর্যায় শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০.৫৯ কোটি টাকা। এর পুরোটাই জিওবির (বাংলাদেশ সরকার)। এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) কর্তৃক চলতি বছর থেকে ২০২১ সাল মেয়াদকালে বাস্তবায়িত হবে। জানা গেছে, শিল্পখাত দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) দেশে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণসহ দেশের শিল্প খাতের বিকাশের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে দেশে ৮টি ইপিজেড রয়েছে। এগুলো হলো চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী, উত্তর নীলফামারী, আদমজী ও কর্ণফুলী। এই ৮টি ইপিজেড চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪৬৯টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান বর্তমানে উৎপাদনরত। অবশিষ্ট ১৩১টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইপিজেডগুলোতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫৬০.৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে এসময়ে ইপিজেডগুলোতে ক্রমপুঞ্জিত রফতানির পরিমাণ ৬৪.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ইপিজেডগুলো থেকে মোট রফতানি হয়েছে ৪৬৯৯.৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থেও পণ্য-সামগ্রী। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই সময়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৭৪৮.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থের পণ্য-সামগ্রী। চলতি বছরের ফেব্রয়ারি পর্যন্ত ইপিজেডের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৫ জন বাংলাদেশির প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে ৬৪ শতাংশই নারী। আমরা আশা করবো, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বহুমুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবেন বলে আমরা আশাকরি। সংগৃহীত

এই বিভাগের আরো সংবাদ