আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

রাস্তাঘাটে টয়লেটের অভাবে কতটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় মেয়েদের?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩৫


সরকার দাবি করে, গত কয়েক দশকে জনস্বাস্থ্য খাতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ফলে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে খোলা বা কাঁচা টয়লেটে মলত্যাগ না করার ব্যপারে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এক শতাংশের কম মানুষ খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে।

কিন্তু এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক টয়লেটের সংকট একটি বড় সমস্যা। আর এর ফলে নিত্য ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা।

‘রাস্তায় বের হলে জ্যামের কারণে যে কোন জায়গায় জায়গাতে পৌঁছানো একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ সময়ের মধ্যে যদি টয়লেট চাপে, কই যাব? টয়লেট তো নেই। দু-একটা যদি পাওয়াও যায়, সেসব এত নোংরা থাকে, যাওয়া যায় না। আবার পাবলিক টয়লেটে যে যাব, সেখানে কোন অনাকাক্সিঙ্কত ঘটনা ঘটবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ফলে রাস্তায় বের হবার আগে থেকেই পানি বা কোনো খাবার খাই না।’

‘টয়লেট চাপলেও সেটা চেপে রাখি, কারণ অনেক সময় মার্কেট বা রেস্তরাঁতে টয়লেট থাকলেও তারা ঠিক পছন্দ করে না রাস্তা থেকে এসে কেউ টয়লেট ব্যবহার করবে।’

অন্য রেকর্ড কথা বলতে চাননি, এমন বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী জানালেন, অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ টয়লেট পেলেও পরিচ্ছন্নতার অভাবে সেগুলো তারা ব্যবহার করতে চান না।

আবার টয়লেটের ভেতরে গোপন ক্যামেরা থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে অনেকের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, তার এক গবেষণায় দেখেছেন, এমনকি রাস্তায় দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের নারী সদস্যরাও এ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হন।

‘আমরা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কর্মকর্তা এবং কনস্টেবল পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে দেখেছি, যারা রাস্তায় কর্মরত থাকেন এমন নালী পুলিশ সদস্যরা টয়লেট চেপে রাখেন। তাদের অনেকেই ইউরিন ইনফেকশনসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন।’

কিন্তু এই যে মেয়েরা দীর্ঘ সময় পানি না খেয়ে থাকেন, কিংবা চেপে রাখেন পায়খানা ও পেশাব... এর কী ধরনের প্রভাব পড়ে শরীরে?

ঢাকার আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাসুমা নাওয়ার বলছেন, এ জন্য মূত্রথলির সংক্রমণসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয় নারীদের। দীর্ঘ সময় পানি না না খেয়ে থাকলে প্রথমেই পানিশূন্যতা হয়। এর পর টয়লেট চেপে রাখা ইউরিন ইনফেকশনের একটি কারণ। আরও অনেক রোগ হতে পারে।

কিডনির কাজ পরিচালনার জন্য পানি পান জরুরি, শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়া এবং গ্লুকোজসহ অন্যান্য উপাদান অ্যাবজর্ব করে কিডনি। ফলে তার কাজ ব্যহত হওয়া মানে পুরো শরীরের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানী শহরে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা এখন সব মিলিয়ে ১০০টির মতো।

যদিও এই সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই ব্যবহার অনুপযোগী বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালে দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আরো ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়, যার সবগুলো এখনো চালু হয়নি।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না? জানতে চাওয়া হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকনের কাছে। তিনি বলেন, ‘পাবলিক টয়লেটের সমস্যা আগের মতো নেই। এখন নতুন ৫০টি টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। তবে আমাদের মূল সমস্যা জমির সংকট। মানে নতুন টয়লেট বানাতে জমি লাগে, পানি ও অন্যান্য ইউটিলিটির সংযোগ লাগে, সব ম্যঅনেজ হলেও জমির ব্যবস্থা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

সরকারি হিসাবে এ মুহূর্তে যে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি, অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস করে, সে শহরকে মানুষের জন্য একটু স্বস্তিকর করতে হলে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের আশু উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ