আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত বিএনপি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫২

বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের দুটি জোটের মিত্র দলগুলোর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা আসার পর তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা নির্বাচনমুখী রূপ নিয়েছে।

সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি না মানায় দলটি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে।

এবার ১০ বছর পর সেই দাবি আদায় ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা। ইতোমধ্যেই তারা দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে।

কিন্তু যে দলটি দীর্ঘদিন নির্বাচন বর্জন এবং আন্দোলনের লাইন নিয়ে এগোচ্ছিল- তারা মাত্র মাস দেড়েক পরেই একটি ভোট-যুদ্ধে নামার জন্য কতটা তৈরি?

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির যে নির্বাচন সেটাতে অংশ না নিলেও পরবর্তীতে স্থানীয় প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই দীর্ঘদিন ধরে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি এটা ঠিক না।’

তিনি বলেন, আমাদের দল যেহেতু গণতান্ত্রিক। আমাদের আন্দোলন, সংগ্রাম ও চেতনার উদ্দেশ্য হলো একটি নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা। জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন। সেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই, এদেশে প্রকৃতপক্ষে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিএনপি শুরু থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল। এসব দাবি দাওয়ার দলের মধ্যে দুটি অবস্থান ছিল স্পষ্ট।

এর মধ্যে একটি পক্ষ চেয়েছিল, তাদের দাবিগুলো পূরণের পরেই নির্বাচনে যাওয়া না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া।

আরেকদিকে আরেকটি পক্ষ ছিল যারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

এখন এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তের পর, দলের পক্ষ থেকে যে দাবিগুলো তোলা হয়েছিল সেগুলোর কী হবে?

ড: খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের যে সাতটি দফা আছে, সেগুলো আদায়ে আমরা অবিচল আছি। আমাদের নেত্রীর মুক্তি দাবি করছি। যদি সরকার এসব দাবি পূরণ না করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমাদের মূল স্লোগান হবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, ধানের শীষে ভোট চাই। অর্থাৎ এই ধানের শীষে ভোট চাই একটা আন্দোলনের অংশ।’

ভোটের মাধ্যমে দেশের জনগণ বাংলাদেশে একটা ‘ভোটের বিপ্লব’ ঘটাবে বলে আশা করেন তিনি।

ভোটের সিদ্ধান্তে দলের মধ্যে যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে সেটা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার আভাস দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উদ্দীপনা, একটা উৎসাহ দেখা গিয়েছে এবং সারাদিন জন জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা থেকে বোঝা যায় যে আমাদের তৃণমূল নেতাদের কর্মীরা চাইছে যে নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার জন্য।’

এই নির্বাচনের ব্যাপারে তো আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের শরীকরা বেশ আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে, মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছে।

কিন্তু বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা এসেছে তফসিল ঘোষণা ঠিক আগ মুহূর্তে।

এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক সক্ষমতা বা উপযুক্ত নেতৃত্ব কি বিএনপির আছে?

এমন প্রশ্নের উত্তরে ড: খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সাংগঠনিক শক্তি, জনসমর্থন আমাদের আছে। এবং এই শক্তিকে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকার হেন কোন পরিকল্পনা নেই যে নেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের এখনো মামলা দিয়ে গ্রেফতার করছে, আমাদের হাজার হাজার কর্মী জেলে। লাখ লাখ কর্মী মামলার আসামি।’

তার পরও বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের এই উদ্দীপনা দেখে তিনি মনে করেন, গত ১০ বছর ধরে সরকারের কোনো চেষ্টাই নেতাকর্মীদের মনোবল হারাতে পারেনি।

নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে নতুন তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি চেয়েছিল যে সময় আরও পিছিয়ে দেয়া হোক। এ অবস্থায় বিএনপি শেষ মুহূর্ত তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন ড: খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করায় আমাদের সঙ্গে দুটি সংলাপে প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা এখনও সেটা পর্যবেক্ষণ করছি। আর আমাদের মহাসচিব বলেছেন, বর্তমানে নির্বাচনের যে পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, সেটা হচ্ছেনা, ধরপাকড় চলছে। তাতে যদি এটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হয় তাহলে হয়তো আমরা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করব।’

তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। তারপর সকল কিছু দেখে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ