আজকের শিরোনাম :

‘আমাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ খুবই বিরক্তিকর’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ২১:০৩

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ হিসেবে দাবিদার জিন্নাত আলীর চিকিৎসার পাশাপাশি তার বাসস্থানের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এজন্য তিনি রামু ও কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমলসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সাইমুম সরোয়ার কমল একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জিন্নাত আলীর বাসস্থানের জন্য জায়গা নির্ধারণ ও গৃহনির্মাণের দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন। আমরা সেই লক্ষে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।

গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন কক্সবাজারের রামু`র যুবক জিন্নাত আলী। মাত্র ২২ বছর বয়সী এ তরুণের শারীরিক উচ্চতা ৮ ফুট ছয় ইঞ্চি। পিজিতে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত শারীরিক উচ্চতার জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের নজরে আসেন জিন্নাত আলী।

গত বুধবার (২৪ অক্টোবর) জিন্নাত আলী গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। প্রধানমন্ত্রী তার সব খোঁজ খবর নেন ও তার চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব নেন। সঙ্গে সঙ্গে জিন্নাত আলীকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়।

গতকাল শনিবার (২৭ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জিন্নাত আলীর। বাইশ বছরের এ তরুণের সঙ্গে কথা বলে বুঝা যায়, আশে পাশের পরিবেশের উপর তিনি খুব বিরক্ত।

তিনি বলেন, ‘সবাই আমাকে দেখার জন্য ভিড় করে। আমার সাথে সেলফি তুলতে চায়। আমি ক্লান্ত। আমি এখন নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলে বাঁচি।’ 

জিন্নাত আলী কিছু কিছু নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের উপর বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা আমাকে নিয়ে অদ্ভুত সংবাদ প্রকাশ করে। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীণ। একটি পোর্টাল লিখেছে আমি নাকি দৈনিক আঠারো জনের খাবার খাই। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। একজন স্বাভাবিক মানুষ দৈনিক যা খায় আমিও তাই খাই। শারীরিক উচ্চতা বাদ দিলে আমার অন্যসব কিছু সাধারণ মানুষের মতো।’

কক্সবাজারের রামু উপজেলার আমীর হামযা`র ছেলে জিন্নাত আলী। আমীর হামযা`র তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে জিন্নাত আলীর অবস্থান তৃতীয়। কৃষক বাবার সন্তান জিন্নাত আলী অর্থনৈতিক টানাপোড়নের কারণে তৃতীয় শ্রেণীর পর আর পড়াশুনার সুযোগ পায়নি। জিন্নাত আলীর মেজ ভাই মোহাম্মদ রিয়াজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চৌদ্দ বছর বয়স থেকে জিন্নাত আলীর শারীরিক অবস্থান অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটাকে প্রথম দিকে কেউ গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে তাকে নিয়ে টনক নড়ে আত্মীয় স্বজনের।

২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে তাকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। ডাক্তাররা নানা পরীক্ষা করে জানায়, তার হরমোনে এক ধরনের টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। যার চিকিৎসার জন্য বারো লক্ষ টাকা প্রয়োজন। অভাবী পরিবারের সন্তান জিন্নাত আলী তখন হতাশ হয়ে কক্সবাজার ফিরে যায়। কিন্তু তার উচ্চতা বাড়তেই থাকে। আট ফুট ছয় ইঞ্চি শরীর নিয়ে তিনি ব্যালেন্স রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।

জিন্নাত আলীর মেজ ভাই মোহাম্মদ রিয়াজ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন মানবতামুখী কর্মকাণ্ড দেখে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমলের শরণাপন্ন হই। তিনি আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে খুব আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি আমাদের যে ভালবাসা দেখিয়েছেন ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে আমরা মুগ্ধ।

বিএসএমএমইউ- তে জিন্নাত আলীর চিকিৎসা করছেন, এন্ডোক্রাইনোলজী বিভাগের ডা. মোহাম্মদ ফরিদ। তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে তখন পাওয়া যায়নি। জিন্নাত আলীর দেখা শুনা করছেন চট্টগ্রামের তাইসিফ। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাক্তাররা ধারণা করছেন, জিন্নাত আলীর হরমোনে এক ধরনের জটিলতা আছে। সেই জটিলতা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরসন করা না গেলে তার লম্বা হওয়ার গতি অব্যাহত থাকবে। তাই দ্রুত চিকিৎসার বিকল্প নেই। তবে সেই জটিলতা কী তা এখনো নিশ্চিত করে ডাক্তাররা বলতে পারেননি বলে জানা যায়।

জিন্নাত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসায় আমি মুগ্ধ। আমি সুস্থ হতে চাই। আমি স্বাভাবিক জীবন চাই। আমাকে নিয়ে মানুষের অতিরিক্ত কৌতুহল আমার পছন্দ নয়। মানুষ আমাকে যখন তখন বিরক্ত করছে। আমিও মানুষ। আমাকে প্রদর্শনীর প্রাণী মনে করবেন না।’ 

সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘদেহী মানুষ জিন্নাত আলী সুস্থ হয়ে উঠবেন, ফিরে যাবেন তার স্বাভাবিক জীবনে এটাই প্রত্যাশা। 

এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ