আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

অভিযানের পরও সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা কেন বাড়ছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৩৬

ঢাকা বিভাগেই সাড়ে তিন হাজার সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীর একটি তালিকা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

কর্মকর্তারা বলেছেন, যাদের চিহ্নিত করে এই তালিকা করা হয়েছে, তাদের নজরদারিতে রেখে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এখন সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

কিন্তু ২০১৮ সালেই দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কয়েকশ সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, মাদক ব্যবসায় গডফাদার এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এবং মূলত সে কারণে অভিযানে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গত বছরের তালিকায় ঢাকা বিভাগে সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল তিন হাজার। এ বছরের তালিকায় সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার।

এবার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে এই হালনাগাদ তালিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের প্রধান ফজলুর রহমান বলেছেন, গডফাদার, সরবরাহকারী এবং খুচরা বিক্রেতা-এই তিনভাগে ভাগ করে সন্দেহভাজনদের জীবনবৃত্তান্ত দিয়ে এবার তালিকা করা হয়েছে।

এই তিন শ্রেণির সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজে কিভাবে অবস্থান করেন এবং মাদকসেবীদের হাত পর্যন্ত মাদক কিভাবে পৌঁছায়- এই বিষয়গুলোও চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘মাদক পাচারকারী বা গডফাদাররা দৃশ্যমান রাখে অন্য ব্যবসা। আর মধ্যম পর্যায়ে যারা থাকে তাদেরও অনেকে ভিন্ন ব্যবসাকে সামনে রাখে।’

তিনি বলেন, ‘তবে খুচরা ব্যবসায়ী, যারা মাদকসেবীদের হাতে মাদক পৌঁছিয়ে দেয়, তাদের বড় অংশ অন্য কিছু করে না। আবার কিছু কিছু আছে, যারা রাস্তায় বা ফুটপাতে পানের বা সিগারেটের দোকান নিয়ে বসে গাঁজা এবং ইয়াবাও বিক্রি করে থাকে।’

ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছর মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টিয়ে মোবাইল ফোনে চাহিদা নিয়ে তার পর মাদকসেবীদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিত।

সেই প্রেক্ষাপটে তাদের অভিযানেও তারা কৌশল পরবর্তন করেছিলেন বলে তিনি জানান।

কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা পর্যবেক্ষণে দেখেছেন যে, দ্রুত ধনী হওয়ার চিন্তা থেকে মাদক ব্যবসায় এসেছে- তাদের সংখ্যাই বেশি।

চাহিদা বেশি ইয়াবার, আসছে আইসের মতো মাদক
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আশির দশকের শুরুতে নিষিদ্ধ হলেও এখনো গাঁজার চাহিদা রয়েছে।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা ফেনসিডিলের ব্যাপক চাহিদা হয়েছিল মাদকসেবীদের কাছে।

প্রায় দুই যুগ ধরে ফেনসিডিলের জায়গা দখল করেছে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা ইয়াবা। এখন এলএসডি এবং আইসের মতো মাদক আসছে।

অভিযান কেন ব্যর্থ হচ্ছে?
কিন্তু মাদকবিরোধী অভিযানে শুক্রবারও অধিদপ্তর এবং র‍্যাব আলাদা আলাদাভাবে আইস এবং ইয়াবা উদ্ধারের পাশাপাশি ২০ জনকে আটক করেছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালে দেশব্যাপী পুলিশ র‍্যাবের মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনশ'র বেশি সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এসব অভিযানের বড় দূর্বলতা হচ্ছে, মাদক ব্যবসায় কোন কোন প্রভাবশালী রাজনীতিকের নাম আলোচনায় এলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়।

তারা মনে করেন, মূলত সেকারণেই অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান মনে করেন, চাহিদার কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং উৎস বন্ধ করতে না পারায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

“প্রথমত আমাদের দেশে চাহিদা আছে বলেই মাদক আসছে। এই চাহিদার কারণগুলো নিয়ে আমরা কোন কাজ করছি না,” বলেন ফারজানা রহমান।

মাদক পাচার হয়ে আসার রুট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিশেষ করে ইয়াবা টেকনাফ হয়ে আসে এবং সেখানকার সীমান্তে পাচারকারিরা বিভিন্নভাবে সুযোগ নিচ্ছে। এই ব্যবসায় আমরা জন প্রতিনিধিদের কারও কারও নামও শুনে থাকি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।”

ফারজানা রহমান কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরও বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখেন।

উৎস বন্ধ হচ্ছে না যে কারণে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও অবৈধ মাদকের উৎস বন্ধ করার বিষয়কে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, এখন মূলত মিয়ানমার থেকেই ইয়াবা এবং আইসের মতো মাদক আসছে। সেই উৎস বন্ধ করতে মিয়ানমার থেকে এখনো সেভাবে সাড়া মিলছে না।

“ভারতের সাথে বিভিন্ন সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে দেশটি আমাদের সীমান্তের কাছ দিয়ে অনেক ফেনসিডিল কারখানা ধ্বংস করেছে। ফলে ফেনসিডিলের বাজার কমে গেছে” বলেন ফজলুর রহমান।

তিনি উল্লেখ করেন, “ইয়াবার উৎস বন্ধে মিয়ানমারের দিকে এখনো সে রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ সরকার দ্বিপাক্ষিকভাবে উৎসব বন্ধের চেষ্টা করছে।”

তিনি আরও জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হাতেনাতে মাদক পাওয়া না গেলে আটক করা যায় না। সে জন্য এখন তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের নজরদারিতে রেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ