আজকের শিরোনাম :

সাভার ট্যানারি থেকে ধলেশ্বরীর দূষণ, বন্ধ করে দেয়ার দাবি নিয়ে বিতর্ক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২১, ২০:১৯ | আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২১, ২০:২১

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সাভারে চামড়াশিল্প নগরী বন্ধ করে দেয়া উচিত। তবে সরকারের শিল্প সচিব বলেছেন এ দাবি যৌক্তিক নয় কারণ বন্ধ করলে চামড়া শিল্প ও পরিবেশ-দুটিরই ক্ষতি হবে বলে মনে করেন তারা।

ঢাকার কাছে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন প্রকল্প চলতি বছরের জুন নাগাদ শেষ করেছে সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়।

দু বছর মেয়াদী এই প্রকল্প উনিশ বছর পরে এসে শেষ হলেও তাতে পূর্ণ সক্ষমতার কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি এখনও নেই। আর সে কারণে পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদীতে পড়ছে বিপুল বর্জ্য।

এসব কারণে সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং আলোচনা কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন তারা চামড়া শিল্প নগরী বন্ধের সুপারিশ করেছেন এবং তারা মনে করেন কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালুর পর তা আবার চালু করা যেতে পারে।

"প্রতিদিন প্রায় পনের হাজার ঘনমিটার বর্জ্য কোন ধরনের ট্রিটমেন্ট ছাড়াই নদীতে চলে যাচ্ছে। এছাড়া যেটা সলিড বেজড বা কঠিন বর্জ্য - সেটার ট্রিটমেন্টের কোন ব্যবস্থা নেই। এসবই পরিবেশ আইনের বিরোধী। তাদের আইন মানতে হবে," তিনি বলেন।

মি. চৌধুরী বলেন, "আমরা বলেছি যে, তারা যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যে মানে থাকা উচিত সেটা তারা নিশ্চিত করতে পারলে তারা আবার শিল্প নগরী চালু করতে পারবে।"

তিনি বলেন, দূষণ এমন পর্যায়ে গেছে যে জরিমানা করেও কোন সমাধান আসবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কেও বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা না থাকার ঝুঁকিগুলো কী?

ট্যানারি বর্জ্যে মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গা নদীকে বাঁচাতে ২০০৩ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সরিয়ে সাভারে নেয়ার প্রকল্প নিয়েছিলো শিল্প মন্ত্রণালয়।

দু বছরের মধ্যে এটি করার কথা থাকলেও প্রায় ১৪ বছর পর এসে ২০১৭ সালে গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট্যানারিগুলোকে বাধ্য করা হয় সাভারে যেতে।

কিন্তু এখনো সেখানে সিইটিপি তো দূরের কথা, কারখানাগুলো প্রাথমিক যে পরিশোধন করবে তারই কোন ব্যবস্থা নেই বলে বলছেন একটি কারখানার মালিক ইজাবুল হক।

"এলডব্লিউজি বা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সার্টিফিকেট লাগে ভালো ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করতে হলে। আমরা চামড়া যে পরিমাণ ডিসচার্জ করি তা পরিবেশে কেমন ইমপ্যাক্ট ফেলে তার রিপোর্টও দিতে হয়।

"ট্যানারির যে প্ল্যান তা আমাদের প্ল্যান মতো পাস করেনি। ইন হাউজ ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা রাখেনি। অর্থাৎ আমি প্রিটিটমেন্ট করে সেন্ট্রালে পাঠাবো। কিন্তু প্রি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাই রাখা হয়নি," বলছেন মি. হক।

আর প্রায় দেড়শ কারখানা নিয়ে চলমান এমন অসম্পূর্ণ একটি চামড়া শিল্প নগরীকেই এ খাতে গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার জন্যই দায়ী করতে শুরু করেছেন অনেকে।

এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হলেও এখনো দূষণ বন্ধে কমন ক্রোম রিকভারি ইউনিট নির্মাণ শেষ হয়নি।

এসব কারণে যদিও আইন অনুযায়ী সংসদীয় কমিটির সুপারিশ মানতে মন্ত্রণালয়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তারপরেও সরকারের এটিই করা উচিত বলে মনে করেন পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

"সরকারেরও কর্মপদ্ধতি ছিলো যে আগে সিইটিপি ঠিক করবে তারপর সেখানে তা চালু হবে। কিন্তু দেখা গেলো কনসালটেন্ট ঠিকমতো যন্ত্রপাতি আনেনি। ট্যানারি মালিকেরা যেভাবে ছেঁকে বর্জ্য দেয়ার কথা সেভাবে দিচ্ছেনা। বেশি পানি ব্যবহার করছে। ফলে সিইটিপি ওভার ফ্লো হচ্ছে।"

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলছেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে এই তিন বছরে তারা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

"এতো ব্যর্থতার মধ্যে বুড়িগঙ্গার মতো ধলেশ্বরী এবং ধলেশ্বরীর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা ও কালীগঙ্গা- এ তিন নদীকে হারাতে চাই না," তিনি বলছেন।

সরকার কেন চামড়া শিল্পনগরী বন্ধের বিরোধী?

তবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলছেন সেজন্য সিইটিপিকে পূর্ণ সক্ষমতায় চালু করাসহ ওই নগরীকে পরিবেশবান্ধব করতে কার্যকর পদক্ষেপ এবার নেয়া হচ্ছে।

"এভাবে বন্ধ করলে দুটি শিল্পই নষ্ট হবে।পরিবেশ দূষণও কমবে না, আবার যে চামড়া শিল্প সেটা সংরক্ষণ থেকে শুরু করে যেভাবে কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনছিলাম সেটাও নষ্ট হবে। আমাদের বড় সমস্যা হয়েছে যে চীনা কোম্পানি কাজ করেছে তাদের ক্রোম রিকভারি ইউনিট করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি না করেই তারা চলে গেছে।"

তিনি বলেন এখন সেকেন্ড ফেজে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আরও দুটি গ্রাউন্ড তৈরির কাজ চলছে।

"এ তিনটি জিনিস হলেই শতভাগ কমপ্লায়েন্স হয়ে যাবে সিইটিপিতে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

এদিকে হেমায়েতপুরের এই চামড়াশিল্প নগরী নিয়ে উদ্বেগ আর এমন আশাবাদের মধ্যেই ট্যানারিগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আরেকটি সিইটিপি তৈরি এবং কঠিন বর্জ্য শোধন ব্যবস্থাসহ আরও ব্যবসায়ীদের কারখানার জায়গা দিতে সেখানেই নতুন করে আরও দুশ একর জমিতে নতুন একটি পল্লী স্থাপনের প্রাথমিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ