আজকের শিরোনাম :

কোরবানিতে জনপ্রিয় দেশি জাতের গরু যেভাবে চিনবেন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২১, ২০:৪৩

আর কয়েকদিন পরেই পালিত হবে বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা, যা কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত। এই ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বহু খামারি বছর জুড়ে পশু পালন করেন।

আর ঈদের বাজারে গিয়ে ক্রেতাও নাদুসনুদুস ও দশাসই আকারের গরুই খোঁজেন। যে কারণে স্থানীয় খামারিরা সাধারণত বিদেশি জাতের দ্রুত বর্ধনশীল গরু বেছে নেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে দেশি জাতের গরুর চাহিদা বেড়েছে।

এদিকে, সরকারও দেশি গরুর নানা জাত নিয়ে গবেষণা করছে, যাতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এসব জাতের গরুর উন্নয়ন ও সংখ্যা বাড়ানো যায়।

দেশি গরুর চাহিদা কিভাবে বেড়েছে?

বাংলাদেশে যত পশু কোরবানি হয়, একটা সময় তার বড় অংশটি আসতো প্রতিবেশী ভারত থেকে।

কিন্তু ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে সীমান্তে কড়াকড়ি করা হয়।

সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এক পর্যায়ে বাংলাদেশে দেশীয় পর্যায়ে মাংসের চাহিদা পূরণ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সেসময় দেশীয় মাংসের চাহিদা পূরণে বিশেষ করে কোরবানির সময়কার চাহিদা পূরণে সরকার ব্যাপকভাবে দেশীয় গরুর জাত উন্নয়নে মনোযোগ দেয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের 'বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট' নামে একটি প্রকল্প রয়েছে যার মাধ্যমে ভিন্ন জাতের উচ্চ-ফলনশীল গরুর সাথে দেশি জাতের গরুর সংকরায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডা. সরকার বলেছেন, সরকারি গবেষণাগারে গবেষণায় মাংস এবং দুধের পরিমাণ দুই-ই বাড়ানোর দিকে জোর দেয়া হচ্ছে।

একই সাথে গত দুই দশকে দেশে কৃষি খামারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, যেখানে দেশি জাতের গরু উৎপাদন করা হচ্ছে।

কিভাবে চিনবেন কোনটি দেশি গরু?

সাধারণভাবে দেশি গরু বিদেশি জাত বা সংকর জাতের চেয়ে আকারে কিছুটা ছোট হয়। দেশি জাতের গরুর শরীরে চর্বি কম থাকে।

মাংসে স্বাদ বেশি হয়, কিন্তু দুধের পরিমাণ বিদেশী গরুর তুলনায় কম হয়। কোরবানির সময় মানুষ সাধারণত বেশি মাংস হবে এমন জাতের গরু খোঁজে।

কিন্তু যেহেতু দেশি জাতের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, ফলে দেশি জাত কিভাবে চেনা যায়, সে প্রশ্ন অনেকের।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল নিউট্রিশন, জেনেটিক্স ও ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক লামইয়া আসাদ বলেছেন, দেশি গরু চেনার উপায় হচ্ছে দেশি জাতের গরুর চামড়া শক্ত থাকে।

এছাড়া এর কুঁজ থাকে এবং গলার নিচে চামড়ার ভাঁজ কম থাকে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের পরিচালক ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বিবিসিকে বলেছেন, দেশি জাতের যেসব গরু বাজারে জনপ্রিয়, তার মধ্যে মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম, চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকার আরসিসি, পাবনা ক্যাটল, সিরাজগঞ্জের ব্রিড নামে পরিচিত গরুগুলো উল্লেখযোগ্য।

এসব প্রজাতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চলুন কিছুটা জেনে নেয়া যাক:

মীরকাদিমের ধবল গাই

এক সময় ঢাকার পুরনো অংশের বাসিন্দাদের কাছে মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের ধবল গাই ছিল খুব জনপ্রিয়।

এখন কেবল পুরনো ঢাকা নয়, নগরকেন্দ্রিক ঈদের হাটে কোরবানির জন্য এই গরুর চাহিদা ব্যাপক।

অধ্যাপক লামইয়া আসাদ বলেছেন, এই গরুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি সাধারণত সাদা রংয়ের হয়।

কখনো এর সঙ্গে তার গায়ে অল্প ছাই রং বা কালোর ছোপ থাকতে পারে।

এটি পালন সহজ, মানে খাবারের খরচ কম। খৈল, গম, মসুর ডালের ভুসি এবং ভুট্টা গুঁড়ার মত খাবার দিয়ে পালন করা যায়।

মীরকাদিমের গরুর মাংসে আঁশ কম থাকে, এর হাড় চিকন হয়। ফলে মাংস হয় নরম ও তেলতেলে।

তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশে মীরকাদিম ভালো জাতের ষাঁড়ের সংকট আছে, যে কারণে এই জাতের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ধীরে হচ্ছে। ভালো জাতের এবং সরাসরি আত্মীয় নয় এমন ষাঁড়ের বীজ নিয়ে সংকরায়নের চেষ্টা করছে সরকার।

আরসিসি বা রেড চিটাগাং ক্যাটল

এই গরুর গায়ের রং লাল। এর ক্ষুরা মানে পায়ের রংও লাল। এটি আকারে বেশি বড় হয় না। এর কুঁজ ছোট আকারের হবে। এই গরু পালনে খাবার কম লাগে।

দেশি আবহাওয়া সহনশীল বলে খামারিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই গরু।  মূলত এই জাত চট্টগ্রাম এবং এর আশেপাশের জেলায় বেশি উৎপাদন হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. সরকার বলেছেন, সরকার যেসব দেশি জাত নিয়ে গবেষণা করছে, তার মধ্যে এই আরসিসিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

এর কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, এটি কেবল চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলা নয়, দেশের অন্য যেকোন জায়গাতেই এই গরু পালন করা সম্ভব।

সে কারণে এই জাত উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে শুধু আরসিসি জাতের গরু নিয়ে সরকার একটি খামার করেছে, যার মাধ্যমে আসছে বছরগুলোতে বাজারে আরো দেশি গরু সরবারহ সম্ভব হবে বলে মনে করেন ডা. সরকার।

পাবনা ক্যাটল

এটি পাবনা ব্রিড নামেও পরিচিত। এই জাতের গরুর বড় অংশটির রং সাদা বা সাদা মেশানো ছাই রং। দেশীয় আবহাওয়া সহনশীল এসব গরু পালনে খাবার কম লাগে।

বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়নে পাবনা ক্যাটল সম্পর্কে বলা হয়েছে, পাবনার চলনবিল সংলগ্ন এলাকায় এই গরুর বাস।

এটি খর্বকায় মানে বেশি বড় আকৃতির নয়। এদের স্বাস্থ্য সুঠাম, রোগব্যাধি কম হয়।

এটি ঘাস খায়, এর বাইরে অন্য ধরনের খাবার কমই দিতে হয়।

দেশে দুধের উৎপাদন বাড়াতে ফ্রিজিয়ান গরুর সাথে এর কৃত্রিম প্রজনন করা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।

সিরাজগঞ্জ ব্রিড

এই জাতের গরু মূলত পদ্মাপারের কয়েকটি জেলায় হয়ে থাকে। এই জাতের গরুর সঙ্গে পাবনা ক্যাটলের সাদৃশ্য রয়েছে।

তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি পাবনা ক্যাটলের চেয়ে আকারে কিছুটা বড় হয়। এর কুঁজ উঁচু ও বলিষ্ঠ হয়।

এসব জাত ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাংসের চাহিদা মাথায় রেখে শাহীওয়াল এবং ব্রাহমা জাতের গরুর সাথে সংকরায়ন করে আরো কিছু জাতের প্রজনন ঘটানো হয়েছে, যেগুলো কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতাদের মন জয় করেছে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ