আজকের শিরোনাম :

নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ বাইডেন-পুতিনের বৈঠক, কী আলোচনা হলো?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ১২:০৫

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেনেভাতে তাদের আলোচনার প্রশংসা করেছেন। তবে ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো দুই দেশের এই বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে খুব সামান্যই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য উঠে এলেও তেমন বড়সড় কিছু হয়নি। তিনি এটিও বলেছেন যে, রাশিয়া নতুন করে স্নায়ু যুদ্ধ চায় না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বাইডেন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং তারা দুজনই ‘একই সুরে কথা বলেছেন।’

দুই নেতার মধ্যে এই আলোচনা প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল, যদিও সেটি নির্ধারিত সময়ের চাইতে কম।

বাইডেন বলেছেন, তাদের কথা বলার জন্য বেশি সময় ব্যয় করার দরকার নেই এবং রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রকৃত সম্ভাবনা রয়েছে।

রাশিয়ান নেতা পুতিনকে উপহার হিসেবে, বাইডেন, একটি কাস্টম-মেইড এভিয়েটর সানগ্লাস দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রিয় স্টাইলের মধ্যে এই সানগ্লাসটি রয়েছে। সেই সঙ্গে পুতিনকে বাইসনের (বন্য ষাঁড়) একটি স্ফটিকের ভাস্কর্য উপহার দেয়া হয়।

তবে পুতিন বাইডেনকে কোনো উপহার দিয়েছেন কিনা- তা জানা যায়নি।

২০১৮ সালে রাশিয়ান নেতা ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে একটি সভা শেষে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন।

দুই পক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

তারা আরও জানিয়েছেন, তারা একে অপরের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূতদের ফিরিয়ে দেবেন- আমেরিকায় ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ আসার পরে গত মার্চে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

তবে সাইবার নিরাপত্তা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি- যিনি কিনা আড়াই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত- তার ভবিষ্যতসহ অন্যান্য ইস্যুতে চুক্তি হওয়ার হালকা আভাস দেখা গেছে।

বাইডেন জানান, নাভালনি কারাগারে মারা গেলে রাশিয়ার জন্য ‘ধ্বংসাত্মক পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে।

নেতারা কী আলোচনা করেছেন?
শীর্ষ সম্মেলনের আগে উভয় পক্ষই বলেছিলেন যে তাদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে রয়েছে।

পুতিন বন্দি বিনিময়ের বিষয়েও একটি সম্ভাব্য চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে আপস করা যাবে।

সাইবার-আক্রমণ ইস্যুতে পুতিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন যে রাশিয়ার বেশিরভাগ সাইবার-আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই হয়েছে।

পানি বা জ্বালানি শক্তির মতো জটিল অবকাঠামোগুলোকে অবশ্যই হ্যাকিং বা অন্যান্য আক্রমণের বাইরে রাখতে হবে বলে পুতিন বলেছেন বাইডেন।

‘আমি তার দিকে তাকিয়ে বলেছি যে যদি আপনার তেলক্ষেত্রের পাইপলাইন আটকে কেউ মুক্তিপণ দাবি করে, তখন আপনার কেমন লাগবে?’ তিনি বলেন, আরও বলেন, রাশিয়া এই ‘মৌলিক নিয়মগুলো’ লঙ্ঘন করলে আমেরিকা প্রতিশোধ নেবে।

দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিবাদ করার অধিকারসহ মানবাধিকার ইস্যুতে তীব্র মতভেদ ছিল।

পুতিন সম্প্রতি নাভালনি ইস্যুতে মার্কিন উদ্বেগকে উড়িয়ে দিয়েছেন, নাভালনি সম্প্রতি ২৪ দিনের অনশন করছেন বলে জানা গেছে।

তিনি বলেছেন যে, নাভালনি আইন অগ্রাহ্য করেছেন এবং তিনি জানতেন যে জার্মানিতে চিকিৎসা করার পরে রাশিয়ায় ফিরে এলে তিনি কারাবন্দি হবেন।

নাভালনি বলেছিলেন যে পুতিনের আদেশে তাকে নার্ভ এজেন্ট বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল- যদিও পুতিন ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পুতিন বলেছিলেন যে রাশিয়া তার অঞ্চলে ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা বা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতো অশান্ত পরিস্থিতি চায় না।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার সম্পর্কে পুতিনের মন্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন বাইডেন এবং তিনি বলেন যে মানবাধিকার ‘সবসময় আলোচনার টেবিলে থাকবে’।

রাশিয়া কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করতে চাইবে- জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, এটি ‘রাশিয়া এখন খুব, খুব কঠিন একটি জায়গায় আছে।’

জেনেভা ত্যাগ করার আগে সাংবাদিকদের বাইডেন আরও বলেন, ‘চীন রাশিয়াকে পিষে ফেলেছে। তারা এখন বড় শক্তি হিসেবে থাকতে মরিয়া।’

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এক রিপোর্টার প্রশ্ন করেন যে তিনি পুতিনকে বিশ্বাস করেন কিনা। এর জবাবে বাইডেন মাথা নাড়েন।

তবে হোয়াইট হাউস একটি তাৎক্ষণিক বার্তায় জানিয়েছে যে বাইডেন ‘খুব স্পষ্টভাবে কোনো প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি, তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে সাধারণভাবেই মাথা নেড়েছেন।’

যখন সিএনএনের একজন সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন যে বাইডেন কেন বিশ্বাস করেছিলেন যে পুতিন তার আচরণ পরিবর্তন করতে পারেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতে বেশ বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি যদি তা বুঝতে না পারেন, তবে আপনি ভুল জায়গায় কাজ করছেন।’

বিবিসির মস্কোর সংবাদদাতা সারা রেইনসফোর্ড বলেছেন, পুতিন একাধিকবার বোঝাতে চেয়েছেন যে রাশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ- একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, আমেরিকার তুলনায় তাদের অর্থনীতি ছোট হলেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে রাশিয়ার যথেষ্ট গুরুত্ব থাকার কারণেই বাইডেন আলোচনায় এসেছেন।
খবর বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ