আজকের শিরোনাম :

মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে বাংলাদেশে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২১, ২১:২৩

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের উত্তরপত্র মাদ্রাসা শিক্ষকের বাইরে অন্য ধারার শিক্ষকদের মাধ্যমে মূল্যায়নের পরামর্শ করেছে একটি সংসদীয় কমিটি।

কমিটির একজন সদস্য বলছেন, মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে এসব বিষয়ে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক কম এবং অনেক শিক্ষকের মধ্যে অতিরিক্ত নম্বর দেয়ার প্রবণতা থাকায় শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছেনা বলেই এমন সুপারিশ করেছেন তারা।

তবে মাদ্রাসা শিক্ষকরা বলছেন, মাদ্রাসাগুলোতে এখন আর এসব বিষয়ে যোগ্য শিক্ষকের সংকট নেই। অন্যদিকে, নিয়মানুযায়ী সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

দাখিলে কী পড়ানো হয়, শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি কি

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দাখিল হলো এসএসসির সমমানের এবং দাখিল মাদ্রাসাগুলোতে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়।

প্রধানত: ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোরআন ও হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানেও বাংলা, অংক, ইংরেজি ও বাংলাদেশের বিশ্ব পরিচয়ের মতো বিষয়গুলো পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।

আর দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের যেমন অনুমোদন দরকার তেমনি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সরকারের নিবন্ধিত শিক্ষকের তালিকা থেকেই শিক্ষক নিয়োগ করতে হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের হিসেবে এখন দেশে অনুমোদিত দাখিল মাদ্রাসার সংখ্যা ৬,৫৯৩টি। এছাড়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসার (প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি) সংখ্যা ৩,৪৩৩টি, আলিম মাদ্রাসার (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী) সংখ্যা ১,৫৫৮টি।

ফাজিল (ডিগ্রি বা স্নাতক) ও কামিল মাদ্রাসার (মাস্টার্স/স্নাতকোত্তর) ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

তবে এর বাইরেও অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো দেশ জুড়ে যেগুলো নুরানি মক্তব, ফোরকানিয়া, কারিয়ানা কিংবা হাফেজি মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশে যা বলা হয়েছে

সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটির বৃহস্পতিবারের সভায় দাখিল পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের উত্তরপত্র মাদ্রাসার শিক্ষকদের বাদ দিয়ে অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

"বিষয়টি আলোচনায় এসেছে কারণ দেখা যাচ্ছে দাখিলে এসব বিষয়ে ভালো করা অনেক শিক্ষার্থী পরে এসব বিষয়ে ভালো করছেনা। অর্থাৎ তাদের মধ্যে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে।

"অনেক সংসদ সদস্যই এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সে কারণে আলোচনা হয়েছে। মনে হচ্ছে একই ধারার শিক্ষকরা সবাই ঠিকমত শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখতে পারছেন না," বলছিলেন কমিটির সদস্যদের একজন মাহবুব উল আলম হানিফ।

তিনি বলেন, দাখিল পাশ করেই উচ্চ শিক্ষার দিকে যায় শিক্ষার্থীরা এবং পরবর্তীতে চাকুরীর জন্য অনেক পরীক্ষায় তাদের অংশ নিতে হয়।

"এখানে সঠিক মূল্যায়ন হলে পরে আর তাদের সমস্যায় পড়তে হবে না বলেই আমরা চাই তারা এসব বিষয়ে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করুক এবং সেভাবেই মূল্যায়ন হোক। কিন্তু এসব বিষয়ে যোগ্য শিক্ষকেরও সংকট আছে।

"আবার অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত নাম্বার দেয়ার প্রবণতাও আছে। অন্য ধারার শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন হলে এসব সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করেছে কমিটি," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. হানিফ।

মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া

তবে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, শিক্ষক নিয়ে সংকট গত কয়েক বছরে কেটে যাওয়ায় এসব বিষয়ের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষকরাই যথেষ্ট।

নোয়াখালীর হাতিয়ার হাজী ফাজিল আহমদ দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ বিবিসিকে বলেন, বিএসসি কিংবা এমএসসি পাশ করা শিক্ষকরা অংক বা ইংরেজির মতো বিষয়গুলো পড়ান এখন।

"এ বছর করোনার মধ্যেও আমরা অংক ও ইংরেজি বিষয়ে আলাদা করেও পড়ানোর ব্যবস্থা করেছি শিক্ষার্থীদের। এখন শিক্ষকরাও মানসম্পন্ন। তাই অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে খাতা মূল্যায়নের আর দরকার আছে বলে মনে হয় না," বলছিলেন তিনি।

হাতিয়ার এ মাদ্রাসাটিতে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে যার মধ্যে নয়শোই নারী শিক্ষার্থী। মাদ্রাসাটিতে ভোকেশনাল কোর্সও খোলা হয়েছে যাতে ড্রেস মেকিং ও জেনারেল ইলেকট্রিকাল সম্পর্কে পড়াশোনা করছে শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লা সদর উপজেলার রঘুরামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক অলি আহমদ বলছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার একটা স্বকীয়তা আছে সেটা বিবেচনায় নিয়েই চিন্তা করা দরকার।

"এখন অনেক ভালো মানের শিক্ষক মাদ্রাসাগুলোতে বাংলা, ইংরেজি ও অংক পড়ান। আমাদের মাদ্রাসা থেকে পাশ করে অনেক শিক্ষার্থী এসব বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। সরকারি চাকরিও করছে অনেকে।

"হয়তো হাতে গোনা কিছু শিক্ষক নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে," বলছিলেন তিনি।

মি. আহমদ বলেন, সংসদীয় কমিটির উদ্বেগের বিষয়টি বোঝা যায়। কিন্তু এখন তো প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের মতোই দাখিলের শিক্ষকদের সরকারি নিবন্ধন পরীক্ষায় পাশ করে নিবন্ধিত হয়ে চাকরির আবেদন করতে হয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত

মাদ্রাসা বিষয়ে অভিজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, মাদ্রাসায় বাংলা, অংক ও ইংরেজি যারা পড়ান তারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা।

"তারা কিন্তু মাদ্রাসায় পড়া নন। কোনো কোনো মাদ্রাসায় হয়তো সুনির্দিষ্ট কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু ঢালাও ভাবে অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে এসব বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়নের চিন্তা করলে সেটি নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। কারণ, এসব শিক্ষকরা সাধারণ শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত," বলছিলেন তিনি।

"এগুলো অপ্রয়োজনীয় চিন্তা। বরং ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ করে অধিকতর যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।"

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ