আজকের শিরোনাম :

মোদীর সফর ঘিরে হঠাৎ আলোচনায় ওড়াকান্দি - কারা এই মতুয়া

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২১, ২০:৫৭

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলতি মাসেই ঢাকা সফরের সময় গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দিতে অবস্থিত মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি মন্দির পরিদর্শনে যেতে পারেন এমন খবরে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে ওড়াকান্দিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছেন যে মি. মোদীর এমন কর্মসূচির বিষয়ে তারা এখনও অবগত নন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ওড়াকান্দিতে, কিন্তু সেখানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যাবেন কি-না, সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা তারা পাননি।

কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর নিজেও মতুয়া সম্প্রদায়েরই একজন এবং 'মতুয়াবাদ'-এর প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের বংশধর।

মি. ঠাকুর বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন যে ওড়াকান্দিতে সরকারের নানা সংস্থার লোকজনকে আসা যাওয়া করতে দেখা যাচ্ছে, তবে নরেন্দ্র মোদী আসবেন কি-না তা তারা এখনও জানেন না।

তবে বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুবল চন্দ্র রায় বলেন, মন্দির পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত এখনও না এলেও তারা আশা করছেন যে মি. মোদীর এই কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হবে।

তিনি বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আসার খবরে তারা উচ্ছ্বসিত এবং আশা করছেন যে সফরের দ্বিতীয় দিনে মি. মোদী ওড়াকান্দির মন্দিরে যাবেন।

মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২৬শে মার্চ দু'দিনের সফরে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

সফরকালে তিনি গোপালগঞ্জেরই টুঙ্গিপাড়ায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাবেন বলে কথা রয়েছে।

মতুয়া কারা, ওড়াকান্দি কেন আলোচনায়

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার একটি ইউনিয়ন হলো ওড়াকান্দি। এখানেই ১৮১২ সালে জন্মেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। মূলত তিনিই সূচনা করেন মতুয়াবাদের, যা পরে বিস্তৃত হয় তার পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে।

মতুয়া সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ সম্প্রদায়, যারা হরিচাঁদ ঠাকুরকেই তাদের দেবতা মান্য করে।

মতুয়া মতবাদে বিশ্বাসীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী এবং এতে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়াও বিধবা বিবাহকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুবল চন্দ্র রায়।

মি. রায় বিবিসিকে বলেন, ওড়াকান্দিতেই মতুয়াদের প্রধান মন্দির এবং প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ মতুয়া এখানে সমবেত হন ও পুণ্যস্নানে অংশ নেন।

"হিন্দু ধর্মে যারা ব্রাক্ষ্মণের শাসনে অবহেলিত ছিলো, যাদের নমঃশূদ্র বা চণ্ডাল বলা হতো, তাদের জন্যই জন্মেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি ব্রাক্ষ্মনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন," বলছিলেন তিনি।

তখন ব্রাক্ষ্মণ ছাড়া কারও শিক্ষার অধিকার ছিলো না, যোগ করেন সুবল রায়। তবে গুরুচাঁদ ঠাকুর বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর ও খুলনায় প্রায় চার হাজার পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

"তখন নারীদের অধিকার ছিলো না। ঠাকুর সেখানে নারী শিক্ষার আন্দোলন করেছেন। বিধবা বিবাহ প্রচলনের পক্ষে কাজ করেছেন। আমাদের মধ্যে কোন জাতিভেদ নাই। আমরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী"।

ওড়াকান্দির স্থানীয়রা বলছেন, সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা মন্দির এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

"আমরা আশা করছি নরেন্দ্র মোদী আসবেন। ঠাকুর বংশের সন্তান শান্তনু ঠাকুরও আসবেন। আমাদের এ অঞ্চলে হিন্দুদের অধিকাংশই মতুয়া। তাদের জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দের," বলছিলেন সুবল চন্দ্র রায়।

এবিএন/মমিন/জসিম 

এই বিভাগের আরো সংবাদ