আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ভাষা আন্দোলন কীভাবে সৃষ্টি করেছিল বাঙালির জাতীয় চেতনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৩:০০

পাকিস্তানের জন্মের মাস সাতেক পরে, ১৯৪৮ সালের মার্চে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ যখন তার জীবনের প্রথম ও শেষবারের মতো পূর্ববঙ্গে এসেছিলেন- তিনি হয়তো ভাবেননি যে সেখানে তার উচ্চারিত কিছু কথা একসময় তারই প্রতিষ্ঠিত নূতন দেশটির ভাঙন ডেকে আনতে ভূমিকা রাখবে।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ তখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, গণপরিষদের সভাপতি এবং মুসলিম লিগেরও সভাপতি।

নয় দিনের পূর্ববঙ্গ সফরে তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি সভায় বক্তৃতা দেন। ঢাকায় প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে, যা এখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যান।

এতে তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু- অন্য কোনো ভাষা নয়।

ইংরেজিতে দেয়া সেই বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করেই আপনাদের বলছি যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এবং অন্য কোনো ভাষা নয়। কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু।’

কয়েকদিন পর মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছাত্রদের সামনে আরও একটি ভাষণ দিলেন। সেখানেও একই কথা বললেন তিনি। বললেন, পাকিস্তানের প্রদেশগুলো নিজেদের সরকারি কাজে যে কোন ভাষা ব্যবহার করতে পারে- তবে রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে একটিই এবং তা হবে উর্দু।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর এই বক্তৃতাগুলোর কথা পরে বহু ইতিহাসবিদ উল্লেখ করেছেন।

তারা লিখেছেন, কার্জন হলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলার পর কয়েকজন ছাত্র ‘না’ ‘না’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেছিলেন, যা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহকে কিছুটা অপ্রস্তুত করেছিল।

কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার বক্তৃতা শুরু করেছিলেন তিনি।

সবকিছুতেই উর্দু আর ইংরেজি, বাংলা নেই
মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় এসব কথা বলেছিলেন এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে। তার ঢাকা সফরের আগেই পূর্ববঙ্গে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেখা যায়, নতুন দেশের ডাকটিকিট, মুদ্রা, মানি-অর্ডার বা টাকা পাঠানোর ফর্ম, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড- এগুলোতে শুধু উর্দু ও ইংরেজি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিবাদে ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা বিক্ষোভ সমাবেশও করেছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত উর্দুভাষী সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাঙালি কর্মকর্তাদের প্রতি বিরূপ আচরণের অভিযোগ ওঠে। একই রকম মনোভাবের শিকার হন পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি কর্মকর্তারাও। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও সরকারি চাকরিতেও ছিল অবাঙালিদের প্রাধান্য।

পরে দেখা যায়, পূর্ব পাকিস্তান থেকে নৌবাহিনীতে লোক নিয়োগের ভর্তি পরীক্ষাও হচ্ছে উর্দু ও ইংরেজিতে।

এ নিয়ে সে সময় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত পত্রিকা ইত্তেহাদে।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ যেদিন কার্জন হলে ভাষণ দেন- সেদিনই বিকেলে তার সাথে দেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি দল । এ সময় ভাষা নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক প্রায় ঝগড়াঝাটির স্তরে পৌঁছে যায়।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহকে একটি স্মারকলিপিও দেয় ছাত্রদের দলটি। তাতে বাংলাকে অতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয় এবং কানাডা, বেলজিয়াম ও সুইৎজারল্যান্ডের মতো একাধিক রাষ্ট্রভাষা আছে এমন কিছু দেশের উদাহরণ দেয়া হয়।

এই ছাত্র নেতারা অনেকেই ছিলেন মি. জিন্নাহর দল মুসলিম লিগের। কিন্তু ভাষার প্রশ্নে পূর্ব বঙ্গের প্রাদেশিক মুসলিম লিগের একাংশ কেন্দ্রীয় নেতাদের চাইতে ভিন্ন ভূমিকা নিয়েছিল। ।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি
নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা কী হবে- তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল ভারত-ভাগের আগেই। অবাঙালি মুসলিম রাজনীতিবিদ ও অধ্যাপক-বুদ্ধিজীবীরা বলছিলেন উর্দূ ভাষার কথা - অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও এনামুল হকের মত বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা এর প্রতিবাদ করছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই লিখেছেন বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং লেখক বদরুদ্দীন উমর।

‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামে এ বইতে বদরুদ্দীন উমর বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, সেসময় কীভাবে ছোট বড় অনেক রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠন, আর অনেক শিক্ষক-অধ্যাপক-চিন্তাবিদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপার কথা বলতে শুরু করেছিলেন।

সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও অধ্যাপক মিলে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই তমদ্দুন মজলিস নামে একটি সংগঠন সৃষ্টি করেন, যারা শুরু থেকেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে নানারকম সভাসমিতি আলোচনার আয়োজন করে।

গঠিত হয়েছিল একটি ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও।’

এর নেতারা ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শিক্ষমন্ত্রী ফজলুর রহমানের সাথে এক বৈঠক করে ডাকটিকিট-মুদ্রা ইত্যাদিতে বাংলা না থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ফজলুর রহমান তাদের আশ্বাস দেন যে এগুলো ঘটেছে ‘নিতান্ত ভুলবশত’।

ঢাকায় ১৯৪৭-এর ৫ই ডিসেম্বর বর্ধমান হাউসে (বর্তমান বাংলা একাডেমি ভবন) বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লিগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব নেয়া হয় যে উর্দুকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা করা হবে না।

এ বৈঠকের সময় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ভবনের সামনে বিক্ষোভও করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা।

ফলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬-৭ মাস পর মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ যখন ঢাকায় এসেছিলেন- তখনই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ রীতিমতো উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ।

রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন?
উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথাবার্তা শুরু হবার সাথে সাথেই পূর্ব বঙ্গের ছাত্র, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ, বুদ্ধিজীবী আর রাজনীতিবিদরা বুঝেছিলেন যে এটা বাঙালিদের জন্য চরম বিপর্যয় যেকে আনবে।

তারা বুঝলেন, এর ফলে পাকিস্তানে উর্দুভাষীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিক হবে, বাঙালিরা সরকার ও সামরিক বাহিনীতে চাকরি-বাকরির সুযোগের ক্ষেত্রে উর্দু-জানা জনগোষ্ঠীর তুলনায় পিছিয়ে পড়বেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে বাঙালি মুসলমানদের উন্নয়ন ও সামাজিক বিকাশের স্বপ্ন সৃষ্টি হয়েছিল- তা চরমভাবে ব্যাহত হবে।

অথচ পাকিস্তানের বাস্তবতা ছিল এই যে সেদেশের পূর্বাংশে এবং গোটা দেশ মিলিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাই ছিল বাংলা, পশ্চিম পাকিস্তানে ৪০ শতাংশের কিছু বেশি লোকের ভাষা ছিল পাঞ্জাবি, মাত্র চার শতাংশের ভাষা ছিল উর্দু।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হয়েও বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবে না- এটা পূর্ব বঙ্গের ছাত্র ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল।

‘একদিকে ভাষা ও আত্মপরিচয়ের আবেগ তো আছেই তা ছাড়াও এর একটা অর্থনৈতিক দিক আছে। তখন চাকরির সুযোগ বলতে সরকারি চাকরিই ছিল। কিন্তু উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে সরকারি চাকরি বা সেনাবাহিনীতে চাকরি পেতে বাঙালিদের উর্দু শিখতে হবে, উর্দুভাষীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে- ফলে তাদের ডিসএ্যাডভান্টেজ হয়ে যায়। ফলে ছাত্রদের জন্য এটা ছিল ভবিষ্যতের প্রশ্ন’- বলছিলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশ্লেষক রওনক জাহান।

‘অশিক্ষিত ও চাকরির অযোগ্য’
তমদ্দুন মজলিস এই সময় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহার হোসেন, দৈনিক ইত্তেহাদের সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদ, আর তমদ্দুন মজলিস প্রধান অধ্যাপক আবুল কাসেমের নিবন্ধ ছিল।

আবুল মনসুর আহমদ লিখেছিলেন, ‘‘উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করিলে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ রাতারাতি ‘অশিক্ষিত’ ও সরকারি চাকুরির ‘অযোগ্য’ বনিয়া যাইবেন”- ঠিক যা ঘটেছিল ব্রিটিশরা ফার্সির জায়গায় ইংরেজিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষা করার পর ভারতের মুসলিম শিক্ষিত সমাজের ক্ষেত্রে।

“ভাষার প্রশ্নটি যে পাকিস্তানের এক অংশের ওপর আরেক অংশের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ আধিপত্য বিস্তারের সাথে জড়িত”- এই বোধ তখন সবার মধ্যে জন্মাতে শুরু করেছে, বলেছিলেন আবুল মনসুর আহমদ ।

পূর্ব-পশ্চিমের সম্বন্ধের ‘অবসান’
ওই পুস্তিকায় একটি চমকপ্রদ কথা লিখেছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন তার নিবন্ধে।

তিনি লিখেছিলেন, “...যদি গায়ের জোরে উর্দৃকে বাঙালি হিন্দু-মুসলামের উপর রাষ্ট্রভাষা রূপে চালাবার চেষ্টা হয়, তবে সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে। কারণ ধূমায়িত অসন্তোষ বেশী দিন চাপা থাকতে পারে না । শীঘ্রই তাহলে পূর্ব-পশ্চিমের সম্বন্ধের অবসান হবার আশংকা আছে।”

অর্থাৎ, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করলে পাকিস্তানের বাঙালিদের ক্ষোভ যে এক সময় জাতীয়তাবাদী চিন্তায় রূপ নেবে এবং তা যে পাকিস্তানের বিভক্তি যেকে আনতে পারে- ড. হোসেন তা তখনই অনুভব করেছিলেন।

‘পাকিস্তানকে ধ্বংসের’ ষড়যন্ত্র
মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর মতো পাকিস্তানের নেতারাও তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হয়ত ঠিক সেই আশংকাই করেছিলেন।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় দেয়া তার ভাষণগুলোতে বার বার বলেছিলেন যে বাংলা ভাষার দাবি যারা করছে তারা ‘প্রাদেশিক’ মানসিকতায় আক্রান্ত, এবং উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা না হলে তা পাকিস্তানের ঐক্য-সংহতি ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য নষ্ট করবে।

তিনি বলেছিলেন যারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথা বলছে, তারা পাকিস্তানকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অংশ।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার অংশবিশেষ এখন ইন্টারনেটে শুনতে পারেন।

এতে তিনি বলেছিলেন ‘পাকিস্তানের সব প্রান্তের লোকে উর্দু বোঝে, সর্বোপরি অন্য যে কোন প্রাদেশিক ভাষার চাইতে ভালোভাবে ইসলামের সংস্কৃতি এবং মুসলিম ঐতিহ্যকে ধারণ করে উর্দু, এবং তা অন্য ইসলামী দেশগুলোয় ব্যবহৃত ভাষাগুলোর সবচেয়ে বেশি কাছাকাছি।’

কিন্তু তার প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে বাঙালি এবং তার ভাষা যে বাংলা- এ সম্পর্কে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর ধারণা ছিল খুবই কম।

তিনি মনে করতেন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই উর্দুভাষী। তবে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ নিজে ছিলেন একজন গুজরাটি, তিনি ইংরেজিতে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন, কিন্তু উর্দু ভালো জানতেন না। 

পাকিস্তানের সবাই উর্দু বোঝে এ ধারণা জিন্নাহর কেন হয়েছিল?

‘পূর্ববঙ্গের এলিট শ্রেণীর উর্দুভাষী নওয়াব বা এরকম লোকদের সাথেই মি. জিন্নার মূলত ওঠাবসা ছিল। কিন্তু তার বাইরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে আসলে বাংলাভাষী, তারা যে উর্দু বলে না- তা তার অজানা ছিল’ - বলছেন অধ্যাপক রওনক জাহান ।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ মনে করতেন যে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করতে পারে একমাত্র উর্দু ভাষা।

পাকিস্তানের গণপরিষদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানও বলেছিলেন, পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র - তাই ভাষার ক্ষেত্রে ধর্মীয় চরিত্র রক্ষার জন্য উর্দুর প্রাধান্য থাকা প্রয়োজন।

স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনা
ভাষা-বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষেই এ সচেতনতা তৈরি হয়েছিল যে এ সমস্যার যথাযথ নিষ্পত্তি না হলে তা এক সময় পাকিন্তানের ঐক্য বিপন্ন করতে পারে।

উনিশশ সাতচল্লিশ সালের আগস্টে পাকিস্তান স্বাধীন হবার পরপরই এ সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সংঘাত থেকেই কি তাহলে স্বাথীন বাংলাদেশের ভাবনার জন্ম হয়েছিল?

রওনক জাহান বলছিলেন, ভাষা-সংস্কৃতি ভিত্তিক একটা জাতীয়তার বোধ বাঙালিদের মধ্যে ছিল, তবে কেন্দ্রীয় সরকারে গিয়ে পাকিস্তান শাসন করার আগ্রহ খুব একটা ছিল না।

‘প্রথম থেকেই কথাটা ছিল স্বায়ত্বশাসন। আপনি যদি ১৯৫৪ সালের ২১ দফা দেখেন - সেখানেও ভাষার সাথে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের একটা জোরালো যোগাযোগ ছিল,’ তিনি বলেন।

রওনক জাহান বলছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ধর্মের কথা থাকলেও তার মূল বার্তাটা ছিল যে মুসলিমদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হলে তাদের পশ্চাৎপদতা কাটবে, হিন্দু জমিদার ও মহাজনদের আধিপত্য থেকে তারা মুক্তি পারে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ খুলে যাবে।

“বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে পাকিস্তানের দাবি এ কারণেই জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও সে আকাঙ্খা পূরণের সম্ভাবনা দেখা গেল না। আর রাষ্ট্রভাষার দাবিও যখন মানা হচ্ছিল না তখন খুব সহজেই বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ এবং ক্রোধ সৃষ্টি হয়,” তিনি বলেন।

তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের গবেষক ও ইতিহাসবিদ আফসান চৌধুরী বলছেন, ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন একটা বড় ঘটনা এবং এটা ১৯৪৮ থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।

“তবে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশি দেখেন - তারা ভাষা আন্দোলন থেকেই এর শুরু এরকম মনে করেন,” মি. চৌধুরী বলেন।

“কিন্তু ইতিহাসটা একটা ধারাবাহিকতার বিষয়। পূর্ববঙ্গের মানুষের স্বাথীনতা বা আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আকাক্সক্ষা অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছিল। এই ধারাবাহিকতার একটা অংশ হচ্ছে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন। তবে মধ্যবিত্ত ছাড়া তো আন্দোলন হয় না- আর ভাষা আন্দোলন সেই মধ্যবিত্তকে সংহত করেছে।” মি. চৌধুরী বলেন।

‘একমাত্র’ না ‘অন্যতম’ রাষ্ট্রভাষা
মোহাম্মদ আলি জিন্নাহসহ যারা উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলছিলেন তাদের অধিকাংশেরই কথা ছিল- উর্দৃ হবে পাকিস্তানের ‘একমাত্র’ রাষ্ট্রভাষা।

আর যারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি করছিলেন, এদের মধ্যে নানা ধরনের মত ছিল। কেউ বলছিলেন, পাকিস্তানের প্রধান রাষ্ট্রভাষাই হতে হবে বাংলা, কারণ গোটা পাকিস্তানে বাঙালিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্য কেউ বলছিলেন, বাংলা ও উর্দু দুটিই হবে রাষ্ট্রভাষা।

কেউ বলছিলেন, বাংলা হবে পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি কাজের ভাষা, তবে দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগের বাহন হিসেবে উর্দূ ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষাও থাকবে। কিন্তু তারা সবার অভিন্ন অবস্থান ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের প্রধান ভাষা হতে হবে বাংলা।

গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি
এ সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে করাচিতে। পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদের অধিবেশন বসেছিল- ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। তাতে গণপরিষদে কার্যক্রমে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাও যেন ব্যবহৃত হতে পারে- এমন এক প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।

দত্তের যুক্তি ছিল- পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লক্ষ লোকের মধ্যে ৪ কোটিরও বেশি লোকের ভাষা বাংলা- অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাই বাংলা। তাই বাংলাকে পাকিস্তানের একটি প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে দেখা উচিত নয়, বাংলারও হওয়া উচিত অন্যতম রাষ্ট্রভাষা।

কিন্তু দত্তের এ সংশোধনীর প্রস্তাব গণপরিষদে টেকেনি। এমনকি গণপরিষদের বাঙালি সদস্যরাও সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তাকে সমর্থন করতে পারেননি।

এর প্রতিবাদে ঢাকায় ছাত্ররা ক্লাস বর্জন ও ধর্মঘট করে। ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় পালিত হয় ‘ভাষা দিবস’।

বদরুদ্দীন উমর লিখেছেন, ঢাকায় ১১ মার্চ বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনে বাংলা ভাষার জন্য বিক্ষোভ হয়, দুজন মন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন বিক্ষোভকারীরা, পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনকে গণপরিষদ ভবন থেকে বের করে নিতে সেনাবাহিনী ডাকতে হয়েছিল।

পুলিশ যে আন্দোলনকারী নেতাদের গ্রেফতার করে তাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, অলি আহাদের মতো অনেকে, আর শেখ মুজিবুর রহমান- পরে যিনি হয়েছিলেন ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নেতা এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি।

এই নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ১৩-১৫ই মার্চ ঢাকায় ধর্মঘটও পালিত হয়েছিল। দুদিন পর খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ছাত্রদের এক বৈঠক হয়, এতে চুক্তি হয় যে তার সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পাকিস্তানের গণপরিষদকে অনুরোধ করবে।

এই রকম বিক্ষুব্ধ পরিবেশে মাত্র ১০ দিন পরই ঢাকায় আসেন মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ, আর সম্ভবত এর প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি তার বক্তৃতায় ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ কথাটি বলেছিলেন।

একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
কিন্তু প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, চুক্তি, স্মারকলিপি, পার্লামেন্টে বিতর্ক- এসবে দৃশ্যত : তেমন কোনো কাজ হয়নি।

মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রভাষা নিয়ে কয়েক বছর ধরে নানা রকম প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব, সংবাদপত্র-সভাসমিতিতে বিতর্ক চলতে থাকে। ।

উনিশশ বায়ান্ন সালের শুরু পর্যন্ত বাঙালি রাজনীতিবিদদের বড় অংশই জোরালো ভাবে রাষ্ট্রভাষা উর্দুর বিরুদ্ধে মনোভাব ব্যক্ত করতে থাকেন। থেমে থেমে আন্দোলন চলছিল ।

খাজা নাজিমুদ্দিন এর মধ্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২৭শে জানুয়ারি এক বক্তৃতা দিলেন- যাতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন আবার নতুন করে জ্বলে ওঠে।

পূর্ববঙ্গের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও খাজা নাজিমুদ্দিন সেই বক্তৃতায় বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, এবং দুটি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে কোন রাষ্ট্র সমৃদ্ধির পথে এগুতে পারে না'। তিনি আরো বলেন, পূর্ব বঙ্গের ২৭টি শিক্ষাকেন্দ্রে এর মধ্যেই আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এর ফলে নতুন করে শুরু হয় ছাত্র বিক্ষোভ, ধর্মঘট, হরতাল।

গঠিত হয় সর্বদলীয় একটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা ঠিক করেন তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবেন।

আজকের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সে সময় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন। সেখানে ২১ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারীরা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গেলে পুলিশ ছাত্রদের গ্রেফতার করে, পরে কাঁদানে গ্যাসও নিক্ষেপ করে। দুপুরের পর বিক্ষোভরত ছাত্রদের একটি দল গণপরিষদ ভবনের দিকে যাবার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে।

উনিশশ বায়ান্ন সালের সেই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত ছিলেন মুহাম্মদ মাহফুজ হোসেন। বছর তিনেক আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে তার বর্ণনায় ফুটে উঠেছে সেদিনকার চিত্র।

সেই সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে হাসপাতালে গ্রহণ করি আমি। কপালে গুলিবিদ্ধ রফিককে দেখেই মৃত ঘোষণা করা হয়, আর উরুতে গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত মারা যান রাতে, আমার চোখের সামনেই।”

পর দিন ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কয়েকটি জায়গায় আবার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। সরকারি হিসেবে চারজন নিহত হবার কথা বলা হয়। কিন্তু দু'দিনে ঠিক কতজন আসলে নিহত হয়েছিলেন তার সঠিক সংখ্যা এখনো অজানা।

ভাষা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ, তা ভেঙে ফেলা ও পরে পুননির্মাণ, একুশে নিয়ে গান ও কবিতা রচনা, - এগুলোর মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই বাঙালির এক প্রতীকী সাংস্কৃতিক ঘটনায় পরিণত হয় একুশে ফেব্রুয়ারি।

আফসান চৌধুরী বলছিলেন, “শহীদ মিনার বানানোর বিষয়টা হলো- এই যে প্রতীক তৈরি হওয়া, ইতিহাসের মধ্যে এরকম প্রতীকায়ন থাকতে হয়, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলন এটা করেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভেতর থেকে ‘আমি পাকিস্তানি’ এই বোধটা দূর্বল করেছে ভাষা আন্দোলন । শিক্ষিত সকল গোষ্ঠীর চোখ খুলে দিয়েছে, তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিযে গেছে।”

মুসলিম লিগের নির্বাচনী পরাজয়
একুশে ফেব্রূয়ারির গুলিবর্ষণের ঘটনার পর মুসলিম লিগ সরকারের প্রতিক্রিয়া মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ১৯৫০-এর দশকজুড়ে বড় রকমের পরিবর্তন ও মেরুকরণ ঘটে যায়। এর আগে ১৯৪৯ সালে খাজা নাজিমুদ্দিনের বিরোধীরা মুসলিম লিগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি ও শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতারা আওয়ামী মুসলিম লিগ নামে নতুন দল গঠন করেছিলেন - পরে যা পরিণত হয় আওয়ামী লিগে।

উনিশশ চুয়ান্ন সালে আওয়ামী লিগ ও অন্যান্য দল মিলে গঠিত যুক্তফ্রন্ট পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক নির্বাচনে ২৭০টি আসনের ২২৩টিতে জয়লাভ করে। যে পূর্ববঙ্গের ঢাকায় ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের জন্ম হয়েছিল- সেই পূর্ববঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম লিগ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু এবং বাংলা - এই দুই ভাষাকে স্থান দেয়া হয়।

স্বাধীনতার চেতনা জন্ম নেয় কখন?
কিন্তু পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈষম্য ক্রমশই স্পষ্ট হতে থাকে। অর্থনীতি, বাজেট বরাদ্দ, সরকারি চাকরির সুযোগ, রাজস্ব ও কর- এ রকম সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রাধান্য আর পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করার বিষয়টি রাজনীতিতে প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে।

রওনক জাহান বলছেন, বাঙালিরা যে আলাদা, এই আত্মপরিচয়, এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ হয়ে যে থাকা হবে না, এ অনুভূতিটা প্রথম থেকেই ধীরে ধীরে বেড়েছে।

'“এটা ছিল ভাষাভিত্তিক আত্মপরিচয়। অমর্ত্য সেন বলেছেন, মানুষের অনেক রকম আইডেনটিটি আছে। আমরা মুসলমান- সেটা হয়তো ৪৭ সালের আগে জোরালো ছিল। কিন্তু ৪৭-এর পর আমাদের ভাষাভিত্তিক পরিচয়টাই প্রধান হয়ে উঠেছে,” রওনক জাহান। বলেন।

রওনক জাহান বলছিলেন, “ভাষার দাবি তো ১৯৫৬এ তারা মেনে নিল। কিন্তু তার পর আবার ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের পর রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করা হলো, মেয়েরা টিপ দিতে পারবেনা - এসব শুরু হলো, তখন এর বিরুদ্ধে সংস্কৃতিকর্মীদের আন্দোলন হলো।”

“আর ৬ দফা ঘোষিত হবার পর পূর্ববঙ্গে গাড়ির নাম্বার প্লেট দোকানের সাইনবোর্ড এসব বাংলায় করা হতে লাগলো।”

আফসান চৌধুরীর মতে, ভাষা আন্দোলন বড় ঘটনা হলেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মূল দ্বন্দ্ব ছিল অর্থনৈতিক।

“মনে রাখতে হবে ১৯৫৬ সালে বাংলা তো পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হয়ে গেল কিন্তু বাঙালির আন্দোলন তো থামলো না। শেখ মুজিব ৬ দফা দিলেন কেন? কারণ আমাদের মূল দ্বন্দ্বটা হচ্ছে অর্থনৈতিক।”

আফসান চৌধুরী বলছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খা রূপ পেতে থাকে ১৯৫৮ সালের পরে।

“শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে আন্দোলনটাকে রাস্তায় নিযে গেলেন। তিনি ১৯৪০ এর দশক থেকে রাজনীতি করছেন, তাই বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্রের আকাঙ্খার ধারাবাহিকতা সম্পর্কে তার পূর্ণ ধারণা ছিল। তার সাথে ৬ দফার ধারণা মিলে যায়। তাই তিনি যখন ৬ দফা দিলেন- তিনি ‘আলাদা দেশ’ এই কথাটা বলছেন না, কিন্তু এটা পরিষ্কার আলাদা দেশের কথাই, শুধু ফ্ল্যাগ ওড়ানোর কথা নেই।

“আমি মনে করি, ৬ দফার পর আর পাকিস্তানের টিকে থাকা সম্ভব ছিল না”- বলেন আফসান চৌধুরী।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ