আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

কোভিড-১৯ : বাংলাদেশে টিকায় আগ্রহ বাড়ার কয়েকটি কারণ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৪৬

বাংলাদেশে ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কর্মসূচি শুরুর পর নানা ধরনের আশঙ্কার কারণে টিকায় আগ্রহী ছিলেন না অনেকে। কিন্তু তখন যে চিত্র ছিল- এখন তা অনেকটাই বদলে গেছে।

ওয়েবসাইটে নিবন্ধন নিয়ে সমস্যার অভিযোগ সত্ত্বেও শুরুর দুই দিন যত নিবন্ধন হয়েছিল, তা এখন বেড়েছে চারগুণ।

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক এবং ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড যৌথভাবে বিশ্বজুড়ে এক জরিপ পরিচালনা করেছে।

তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে জরিপে উত্তরদাতা ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ শতাংশের মতো মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে আগ্রহী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট জানুয়ারির শেষের দিকে একটি জরিপের রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তখন দেখা গিয়েছিল যে ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা টিকা নিতে আগ্রহী ।

মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর নেই
ঢাকার সাথী সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সম্পর্কে শুরুতে সন্দিহান ছিলেন। পাশের দেশ ভারতসহ আরও অনেক দেশে টিকা নেওয়ার পর কারও কারও মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এমন খবরই ছিল তার দ্বিধা ও শঙ্কার মুল কারণ। কিন্তু তিনি এখন মত পরিবর্তন করেছেন।

তিনি বলছেন, ‘আসলে প্রথম থেকে অনেক খবর আমরা বাইরের দেশ থেকে পাচ্ছিলাম যে টিকা নেবার পর অনেকের অসুস্থতা দেখা দিয়েছে তখন মনে হয়েছিল টিকা নিতে যাওয়া কি ঠিক হবে। পরে দেখছি যারা টিকা নিচ্ছেন তারা খুব একটা এফেক্টেড হচ্ছে না। আমার ভাইয়ের মেয়ে যে ডাক্তার তারও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। এখন আমার মনে হচ্ছে টিকাটা নেয়া উচিত।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সম্পর্কে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ভয় যেমন ছিল, তেমনই নানা ধরনের গুজব ছড়িয়েছে যে টিকা নিলে শরীরের ডিএনএ বদলে যেতে পারে, যৌন ক্ষমতা কমে যাবে, বা নারীরা বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারেন । এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

বিনামূল্যে যদি না মেলে?
বাংলাদেশে এখন সরকারিভাবে বিনামূল্যে এই টিকা দেয়া হচ্ছে। পরে যদি মূল্য দিয়ে কিনতে হয়? দেশে এখন যে পরিমাণ টিকা আছে তা যদি ফুরিয়ে যায়?

এসব ধারণা থেকে অনেকেই এখন টিকা নিতে চাইছেন। সাথী সরকার বলছেন, ‘পরে যদি বাংলাদেশ সরকার আর টিকা আনতে না পারে? তখন তো আমি বাদ পড়ে যাব। আর এখন না নিলে হয়ত পরে টাকা দিয়ে বেসরকারিভাবে কিনতে হবে। তার দাম যদি বেশি হয়? সেটাও চিন্তা করছি।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এ জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন কাওসার আফসানা।

তিনি মনে করেন, ‘নানা ধরনের মানুষের সাথে কথা বলেছি। অন্যরা যাচ্ছে কিনা সেটা একটা বিষয়। যখন লোকজন দেখছে ও আরেকজন গেছে, তখন সেও গেছে। অনেকেই টিকা নিয়ে আত্মীয়দের জিজ্ঞেস করেছেন টিকার রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিনা। এই যে একজন আর একজনকে বলছে এটা একে অপরকে মোটিভেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেছে। আর একটা বিষয় এখানে কাজ করেছে যে আমাদের এখানে টিকা নেবার বয়স ৪০ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। তাতে টিকা নিবন্ধন বেড়েছে, আগ্রহী বেড়েছে।’

সংখ্যা যা বলে
টিকায় আগ্রহ যে বাড়ছে তা বোঝা যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে।

ঢাকায় ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন নার্সকে প্রথম টিকা দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উদ্বোধন করা হয়।

সে সময় পর্যবেক্ষণের জন্য দুই দিনে প্রায় ছয়শ ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হয়। সেদিন থেকেই ওয়েবসাইটে নিবন্ধন শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে ওইদিন থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী গণটিকা কর্মসূচি শুরুর পর ১২ দিনে নিবন্ধন হয়েছিল ৫পাঁচ লাখের মতো। কিন্তু এর পর গত ৭ দিনে নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়েছে চারগুণ। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ নিবন্ধন হয়েছে। টিকা দেয়া হয়েছে ১০ লাখের মতো ডোজ।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নেয়া
কুর্মিটোলা হাসপাতালের সেবিকা রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এর পর গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেয়ার মাধ্যমে।

তার পর সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বেশ কিছু কূটনীতিক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সেনাবাহিনীর প্রধান, গায়ক, অভিনেত্রী এরকম অনেকে টিকা নিয়েছেন এবং তা সম্পর্কে গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নিতে দেখে আগ্রহ অনেকটাই বেড়েছে। এটা অবশ্যই মোটিভেশন হিসেবে কাজ করেছে। লোকজন দেখেছে তাদের কিছু হচ্ছে না। তারা উৎসাহ দিচ্ছে।’

ভ্রমণের সুবিধা
অন্যদিকে অনেক দেশেই ভ্রমণের সময় করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার সনদ চাওয়া হতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউরোপের বেশ কিছু দেশ কোভিড ভ্যাক্সিন সনদ কিভাবে আন্তর্জাতিকভাবে যাচাই করা যায় সে নিয়ে ইতোমধ্যেই আলাপ শুরু করেছে। একটি অ্যাপ ইতোমধ্যেই পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।

ভ্রমণে ঝামেলা এড়ানো টিকার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ার একটি কারণ হতে পারে।।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বিমান কোম্পানির কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমি নিজে এই কারণে নিচ্ছি। আশপাশে পরিচিতদের বলছি নিয়ে নাও। তা না হলে কিন্তু অনেক যায়গায় ট্রাভেল করতে পারবা না।’

ট্রাভেল এজেন্টদের দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের ভিসার জন্য টিকা সনদ দেখানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে সে রকম ইঙ্গিত পাচ্ছেন।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ