আজকের শিরোনাম :

নদী রক্ষায় সংশোধিত কমিশন আইনে যা বলা হয়েছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ২০:৩৮

বাংলাদেশের নদ-নদী, হাওর, জলাধার ইত্যাদি রক্ষায় পুরনো একটি আইন সংশোধন করে আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০১৩ সংশোধনের উদ্দেশ্যে খসড়া জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই আইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মতামত দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংশোধিত এই আইনে কী রয়েছে? ঠিক কীভাবে বাংলাদেশের নদ-নদী, জলাধার রক্ষা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে?

আইনের আওতা

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন ২০২০-এ বাংলাদেশের সকল নদ-নদী, জলাধার, খাল-বিল, সমুদ্র উপকূল, হাওড়, বাঁওড়, জলাভূমি, জলাশয়, ঝর্ণা, হ্রদ, পানির উৎস সব কিছুই এই আইন ও কমিশনের আওতার মধ্যে থাকবে।

নদ-নদী, জলাধার রক্ষায় ব্যবস্থা

বাংলাদেশের সকল প্রকার নদ-নদী, জলাধার, পানির উৎস রক্ষা করা, অবৈধ দখল মুক্তকরণ, নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ, বিলুপ্ত বা মৃতপ্রায় নদী খননের বিষয়ে পরিকল্পনা তৈরি করবে।

নদীর বিশেষ মর্যাদা ও পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি

বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবহমান সকল নদী আইনি ব্যক্তি ও জীবন্ত সত্তা হিসাবে বিবেচিত হবে। সকল নদীই একই মর্যাদা প্রাপ্ত হবে। সেই সঙ্গে সকল নদী পাবলিক ট্রাস্ট ডকট্রিনের আওতায় হওয়ায় সেগুলো জন সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে।

নদী সংশ্লিষ্ট কোন পরিকল্পনা করতে হলে পরিকল্পনা কমিশন, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, বিএডিসিসহ সকল সংস্থাকে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে এবং অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, অন্য আইনে যা কিছুই বলা হোক না কেন, নদীর দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে।

সরকারি কোন কর্মকর্তাও যদি নদ-নদীর জায়গা, তীরভূমি ইত্যাদি অবৈধভাবে কারো নামে বরাদ্দ করেন, তারাও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে দোষী হবেন।

বিভাগীয় শহরে নদী রক্ষা আদালত

প্রতিটি বিভাগে 'নদী রক্ষা কোর্ট' নামে এক বা একাধিক কোর্ট স্থাপিত থাকবে। নদী ও জলাধার সংক্রান্ত সকল বিষয় নিয়ে এই আদালত বিচার করবেন।

এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। নদী দখল, দূষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দিতে পারবে মোবাইল কোর্ট।

কমিশন ছাড়াও নদী রক্ষার্থে যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা নাগরিক কোর্টে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পুনরুদ্ধার ও দূষণ রোধের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবেন।

পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

একমাস বা ততোধিক শাস্তিযোগ্য কোন নদী সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, এমন সন্দেহে কমিশনের কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি বা নৌ পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই উক্ত বা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।

শাস্তি

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনুর্ধ ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়া ফৌজদারি বিভিন্ন আইনের ধারা অনুযায়ীও শাস্তির বিধান রয়েছে এই আইনে।

নদীর জমির অবৈধ দখল সংক্রান্ত অপরাধে শাস্তি হবে এক বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

নদীর প্লাবন ভূমি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে লিজ বা সাব-লিজ দেয়া হলে, নদ-নদীর জরিপ, পর্চা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া হলে, ডুবো চরকে চরে রূপান্তরের চেষ্টা, পানি প্রবাহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ক্ষতিসাধন ইত্যাদি করার চেষ্টা করা হলে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে।

নদ-নদীর জমিতে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা বা অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দখল বা নদীর ক্ষতি করে ব্রিজ, কালভার্ট তৈরি করা হলেও একই শাস্তি হবে।

পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা

অন্য আইনে যা কিছুই বলা হোক না কেন, নদ-নদীর অবৈধ দখল, দূষণ, নাব্যতা হ্রাস, পানি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, জৈববৈচিত্র বিঘ্নিত বা সংকটাপন্ন বলে মনে কলে ওই এলাকাতে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করতে পারবে কমিশন।

আইন করার পাশাপাশি সেটার প্রয়োগ বেশি জরুরি

বাংলাদেশের পরিবেশ বিষয়ক আইনজীবীদের সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানা হাসান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''যেকোনো কিছুতেই আইনের শাসন নিশ্চিত করতে ভালো আইন থাকা খুব দরকার । তবে আমাদের দেশে সার্বিকভাবেই আইনের প্রয়োগ খুবই খারাপ। তবে ভালো আইন থাকার একটা সুবিধা হলো, কেউ যদি আইন প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হন, সত্যিকার অর্থে কেউ প্রয়োগ করতে চাইলে, তখন সে ভালোভাবে সেটা প্রয়োগ করতে পারবে।''

তিনি বলছেন, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় যেসব আইন রয়েছে, তার ১৫ শতাংশ প্রয়োগ হয়, ৮৫ শতাংশ প্রয়োগ হচ্ছে না। তবে আইন থাকায় এখন যেমন নদীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান, পাহাড় কাটা বন্ধের মতো উদ্যোগগুলো নেয়া যায়, পুরোপুরি আইন প্রয়োগ করার দাবি তোলা যায়। ফলে ভালো আইন থাকাটাও জরুরি।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ