আজকের শিরোনাম :

ভারতে 'লাভ জিহাদে'র বিরুদ্ধে আইন তৈরির উদ্যোগ প্রশ্নের মুখে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২০, ২০:৩৫

''শুধু বিয়ে করার জন্য কেউ ধর্মান্তরিত হলে তা বৈধ বলে গণ্য হবে না'', এই বিতর্কিত রায় ঘোষণার দিনকয়েকের মধ্যেই তা পুরোপুরি উল্টে দিয়ে নতুন রায় দিল ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট।

উত্তরপ্রদেশে একজন মুসলিম যুবক ও একজন হিন্দু যুবতীর বিয়ের বিরুদ্ধে সেই মেয়েটির বাবা আদালতে গেলেও হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে ওই দম্পতিকে তারা হিন্দু বা মুসলিম হিসেবে দেখতে রাজি নন - বরং তারা মনে করেন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হিসেবে তাদের দুজনের স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার আছে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সম্প্রতি তথাকথিত 'লাভ জিহাদ' বা হিন্দু-মুসলিম বিবাহের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এই রায়ের পর সেই চেষ্টা হোঁচট খাবে বলেই আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরের বাসিন্দা সালামাত আনসারি গত বছরের আগস্টে বিয়ে করেছিলেন বান্ধবী প্রিয়াঙ্কা খারওয়ারকে, যে বিয়েতে মোটেই মত ছিল না প্রিয়াঙ্কার বাবা-মার। বিয়ের ঠিক আগে প্রিয়াঙ্কা ইসলামে ধর্মান্তরিত হন ও নিজের নতুন নাম নেন আলিয়া।

সেই মাসেই প্রিয়াঙ্কার বাবা-মা সালামাতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে অভিযোগ আনেন, তাদের নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে ও ধর্মান্তরিত করে জোর করে বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে।

সেই এফআইআর খারিজ করার আবেদন নিয়ে সালামাত আনসারি এলাহাবাদ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হলে বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল ও পঙ্কজ নাকভির ডিভিশন বেঞ্চ শেষ পর্যন্ত তার অনুকূলেই রায় দিয়েছে।

আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী রোহিত নাগপাল বলছিলেন, "দেশের আইন যখন সমলিঙ্গের মানুষদেরও নিজেদের মধ্যে বিয়ে করার অনুমতি দিচ্ছে - তখন পাত্রপাত্রীর ধর্মীয় পরিচয় কীভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে?"

"কোর্টের রায়েও ঠিক এটাই বলা হয়েছে যে ওই দুজনকে আমরা হিন্দু-মুসলিমের দৃষ্টিতে দেখছিই না। বরং দেখছি দুজন সাবালক ব্যক্তি হিসেবে, যাদের নিজস্ব জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার আছে।"

"নাগরিকের এই মৌলিক অধিকারে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কোনও পরিবার, ব্যক্তি বা সরকারেরই নেই। আর হস্তক্ষেপের চেষ্টা হলে সেটা হবে ব্যক্তিস্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন।"

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর এই এলাহাবাদ হাইকোর্টেরই বিচারপতি মহেশ ত্রিপাঠী এক হিন্দু-মুসলিম দম্পতির পুলিশি নিরাপত্তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন।

সেই রায় দেওয়ার সময় তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিয়ে করার উদ্দেশ্যে ওই পাত্রী ধর্মান্তরিত হয়েছেন - যা বৈধ হতে পারে না।

সেই রায়কে হাতিয়ার করেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেন, তার সরকার দুই ধর্মের মধ্যে বিয়ে - যাকে বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদীরা লাভ জিহাদ বলে বর্ণনা করে থাকে - তা ঠেকানোর জন্য আইন আনবে। একই ধরনের আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক ও আসামের বিজেপি সরকারও।

কিন্তু দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মীরা ভাটিয়া মনে করছেন, এখন সেই গোটা চেষ্টাটাই ব্যাহত হতে পারে। মিস ভাটিয়া বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "হাইকোর্টের এই নতুন রায় শতকরা একশোভাগ সঠিক বলেই আমি মনে করি।"

"কারণ একবার সাবালক হয়ে গেলে কারও বাবা-মাও তার বিয়েতে বাধা দিতে পারেন না, তা সে পাত্র বা পাত্রী হিন্দু-মুসলিম যা-ই হোন। এটা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটা আইন।"

"এরপরও যদি কোনও রাজ্য দুই ধর্মের মধ্যে বিয়ে ঠেকাতে আইন করার চেষ্টা করে সেটা এখন কিছুতেই সহজ হবে না - এবং হলেও সুপ্রিম কোর্টে আটকে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস, কারণ এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টই শেষ কথা।"

এদিকে এই তথাকথিত 'লাভ জিহাদ' কিংবা মুসলিম ছেলের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের যে বিরোধিতা বিজেপি করছে - তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি ও অভিনেত্রী নুসরাত জাহান।

নিজেই ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করা এই তারকা সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "লাভ বা ভালবাসার মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এবং জিহাদ - এই দুটো কখনো একসঙ্গে যেতেই পারে না।"

নির্বাচনের আগেই কেন বারবার এই বিষয়গুলো তোলা হয়, সেই প্রশ্ন তুলে ধর্মকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখারও আবেদন জানান তিনি।

তবে হিন্দু-মুসলিম বিয়ে ঠেকানোর জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আইনি উদ্যোগ এবং সেটাকে ঘিরে রাজনীতি এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের জেরে এখন নতুন মাত্রা পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ