আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

কোভিডের অ্যান্টিবডি বেশিদিন থাকে না, তাহলে টিকা দিয়ে কী হবে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৫৬

করোনাভাইরাসে কেউ সংক্রমিত হলে তার দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু তা আবার কয়েক মাসের মধ্যেই শরীর থেকে মিলিয়ে যায়- বলছেন গবেষকরা।

মানবদেহের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউনিটির জন্য অ্যান্টিবডি খুবই জরুরি একটি উপাদান এবং করোনাভাইরাস যেন দেহের কোষের মধ্যে ঢুকে পড়তে না পারে তা ঠেকায় এই অ্যান্টিবডি।

এমন এক সময় একথা জানা গেল- যখন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা তৈরির প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের তৈরি টিকাটি বয়স্ক মানুষদের দেহে শক্তিশালী ভাইরাস-প্রতিরোধী সাড়া সৃষ্টি করেছে।

এখন প্রশ্ন হলো- অ্যান্টিবডি যদি শরীর থেকে অল্পদিন পরই অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে টিকা দিয়ে কি আদৌ করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে?

বিজ্ঞানীরা অবশ্য আশ্বস্ত করছেন যে ব্যাপারটা তা নয়।

গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
কিন্তু ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একটি গবেষকদল বলছে, জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসের মাঝখানের সময়টুকুতে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে এমন লোকের সংখ্যা ২৬ শতাংশ কমে গেছে।

রিএ্যাক্ট-টু নামে এ প্রকল্পের গবেষকরা বলছেন, এর অর্থ হলো - করোনাভাইরাসের ইমিউনিটি হয়তো সময়ের সাথে কমে যায় এবং এ ভাইরাসে একাধিকবার আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও আছে।

জুন-জুলাই মাসে ব্রিটেনে ৩৫০,০০০-এরও বেশি লোকের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয় এবং তখন প্রতি হাজারে ৬০ জনের দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে তা এক হাজারে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে।

গবেষকদের একজন অধ্যাপক হেলেন ওয়ার্ড বলছেন, ইমিউনিটি খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে এবং আমরা তিন মাসের মধ্যেই ২৬ শতাংশ অ্যান্টিবডি কমে যেতে দেখছি।

বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫-র বেশি এবং যাদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও কোন লক্ষণ দেখা যায়নি -তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি কমে যাবার পরিমাণ অন্যদের চেয়ে বেশি।

এর ফলে কী হতে পারে, তা এখনো পরিষ্কার নয়
অ্যান্টিবডি কমে যাবার মানে কী তা অবশ্য এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শুধু অ্যান্টিবডি-নির্ভর নয়।

তাই হয়তো এমন হতে পারে যে টি-সেল বা অন্য উপাদানগুলো ভাইরাস -সংক্রমিত কোষগুলোকে সরাসরি ধ্বংস করে ফেলার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখছে।

তবে অধ্যাপক ওয়েন্ডি বার্কলে বলছেন, এমন হতে পারে যে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়াটা ইমিউনিটি কমে যাবারও ইঙ্গিত দেয়।

সার্স-কোভ-টু করোনাভাইরাস ছাড়া আরো চার রকমের করোনাভাইরাস আছে - যেগুলোর সংক্রমণে মানুষ সাধারণ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হন।

এবং এই ভাইরাসে মানুষে এক জীবনে অনেক বার আক্রান্ত হয়ে থাকেন বলেই দেখা যায়। সাধারণত প্রতি ৬ থেকে ১২ মাসে একবার মানুষ পুনরায় সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।

তবে নতুন করোনাভাইরাসে মানুষ দু'বার আক্রান্ত হয়েছে এমনটা দেখা গেছে খুবই কম।

গবেষকরা আশা করেন , দ্বিতীয় সংক্রমণের তীব্রতা হয়তো প্রথমবারের চেয়ে অনেক কম হবে কারণ ইমিউনিটি কমে গেলেও শরীরের একটা 'স্মৃতি' থাকবে কি করে এই ভাইরাসের সাথে লড়াই করতে হয়।

কোভিড-১৯এর টিকা আসতে হয়তো আর খুব বেশি দেরি নেই
এমন এক সময় অ্যান্টিবডির দ্রুত অদৃশ্য হবার কথা জানা গেল- যখন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা তৈরির প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের তৈরি টিকাটি বয়স্ক মানুষদের দেহে শক্তিশালী ভাইরাস-প্রতিরোধী সাড়া সৃষ্টি করেছে।

মানবদেহের ওপর টিকার প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে , এই টিকা ৭০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষের দেহেও জোরালো অ্যান্টিবডি ও টি-সেল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করেছে। তবে এটা সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে কিনা এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যান্ড্রু পোলার্ড ব্রিটেনের দি টাইমস পত্রিকাকে বলেছেন, টিকাটি যে নিরাপদ ও রোগপ্রতিরোধী সাড়া তৈরি করতে পারে - এ আশ্বাস পাবার ক্ষেত্রে এটা একটা ‘মাইলস্টোন’ বলা যেতে পারে।

ব্রিটেনের দি ডেইলি টেলিগ্রাফসহ আরো কিছু দৈনিকে এর মধ্যেই রিপোর্ট বেরিয়েছে যে বড়দিনের পরই সীমিত আকারে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হতে পারে এবং এ জন্য দেশটির স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস তৈরি হচ্ছে।

ব্রিটেনের উপ-প্রধান মেডিক্যাল অফিসার জোনাথন ভ্যান ট্যামকে উদ্ধৃত করে দৈনিক টেলিগ্রাফ বলছে, অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্যোগে তৈরি টিকাটির ট্রায়ালে দেখা গেছে যে এটি সংক্রমণ কমাতে ও জীবন বাঁচাতে পারে।

এ্যান্টিবডি দীর্ঘস্থায়ী না হলে টিকায় কতটাকাজ হবে?
তবে প্রশ্ন হলো, এ টিকা শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে তা যদি কদিন পরই মিলিয়ে যায়, তাহলে এর কার্যকারিতা কতটুকু হবে?

গবেষকরা বলছেন, তাদের গবেষণার ফলে টিকা নিয়ে আশাবাদ বানচাল হয়ে যাবে না।

জরিপের পরিচালক অধ্যাপক পল এলিয়ট বলছেন, এই জরিপের কারণে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত টানাটা ভুল হবে।

‘কারণ টিকা দেবার ফলে মানবদেহে যে প্রতিক্রিয়া হবে তা হয়তো স্বাভাবিক সংক্রমণের সাড়ার চাইতে ভিন্ন হবে’- বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, সময়ের সাথে সাথে ইমিউনিটি কমে যেতে থাকলে কিছু লোকের জন্য হয়তো ‘বুস্টার ডোজ’ হিসেবে দ্বিতীয়বার টিকা নেবার দরকার হতে পারে।

আসলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে যে অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব কমে যায় তা আগে থেকেই ধারণা করা হতো। এ গবেষণায় সেটাই নিশ্চিত হচ্ছে মাত্র।

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলিনর রাইলি বলছেন, স্বাভাবিক সংক্রমণের ফলে মানবদেহে সৃষ্ট এ্যান্টিবডি যে খুব বেশি দিন থাকে না - এটা অন্যান্য মৌসুমি করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।

‘রিএ্যাক্ট-টুর গবেষণায় হয়তো সে ধারণা জোরদার হচ্ছে , তবে ইমিউনিটি যে স্থায়ী হয় না এমনটা ধরে নেবার সময় এখনো আসেনি,’ বলেন তিনি।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ