করোনাভাইরাস : সিঙ্গাপুরে ‘মৃত্যুর মুখ থেকে’ ফিরলেন বাংলাদেশি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ০৯:৩৪
সিঙ্গাপুরে ‘মৃত্যুর মুখ থেকে’ ফিরে এলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক প্রবাসী বাংলাদেশি। সে দেশের সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হওয়া রাজু সরকার নামে ওই ব্যক্তি শুক্রবার টান টক সেং হাসপাতাল (টিটিএসএইচ) থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এরই মধ্যে ২৪ কেজি ওজন হারালেও সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তিনি। রাজুর সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনায় চিকিৎসকরাও বিস্মিত হয়েছেন।
সিঙ্গাপুরে প্রথম যে কয়েকজন বিদেশি কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজু তাদের অন্যতম। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসুস্থ হওয়ার সময় বাংলাদেশে রাজুর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, গত ৩০ মার্চ তাদের সন্তান হয়েছে। পরিবারের প্রতি টানই তাকে ‘মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার প্রেরণা জুগিয়েছে’।
প্রায় ৫ মাস হাসপাতালে থাকা ৩৯ বছর বয়সী রাজু সরকারের অর্ধেক সময়ই পার হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ। মে মাসের মাঝামাঝিতে তাকে টিটিএসএইচ পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। সেখানকার রেসপিরেটোরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বেঞ্জামিন হো বলেন, এত দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকার পর তার নাটকীয়ভাবে সেরে ওঠায় বিস্মিত চিকিৎসকরাও। ডা. হো বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় রাজুর অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল এবং দুই-তিন বার ‘মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন’ তিনি।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস-এনসিআইডির আইসিইউ-এর পরিচালক হিসেবেও কাজ করছেন ডা. হো। তিনি আরও বলেন, ‘তার রক্তচাপ খুব কমে গিয়েছিল এবং তিনি অক্সিজেন নিতে পারছিলেনও খুব কম। আমরা ভেবেছিলাম, তাকে অনেকদিন অক্সিজেন দেওয়া লাগবে এবং (রাজুর ঘটনা) সিঙ্গাপুরে প্রথম দিকের মৃত্যুর একটি হবে বলে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম।’
গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরেও সেরে ওঠার বিষয়ে রাজু সরকারের মনোবল দৃঢ় ছিল। পুনর্বাসন কেন্দ্রে শরীরে শক্তি ফিরে পাওয়া ও কার্ডিওভাস্কুলার ফিটনেসের জন্য ফিজিওথেরাপি নিতে হয় তাকে। নিজের যতেœর জন্য অকুপেশনাল থেরাপিস্টেরও শরণ নিতে হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঁচ সপ্তাহে ১০ কেজি ওজন বেড়েছে তার।
ফিজিওথেরাপিস্ট সিমন লাউ জানান, তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল। আইসিইউতে দীর্ঘ দিন থাকার কারণে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তবে সুস্থ হয়ে উঠতে তিনি খবুই আন্তরিক ছিলেন। ব্যায়ামে খুব আগ্রহী ছিলেন, নিজের থেকে সেরে ওঠার চেষ্টা ছিল তার এবং এমনকি ওয়ার্ডে বিশ্রামে থাকার সময় নিজেই ব্যায়ামগুলো করতেন।
নার্সরা জানান, প্রায়ই ফোনে তিনি পরিবারের ছবি দেখতেন এবং ঘন ঘন বাড়িতে ফোন করতেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স কারমেইন লো বলেন, সুস্থ হয়ে উঠতে তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল তার পরিবার। আইসিইউ থেকে ছাড়া পাওয়ার এক সপ্তাহ পর মধ্য এপ্রিলে প্রথম ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেন রাজু সরকার।
স্ট্রেইটস টাইমসকে রাজু বলেন, আমি আমার ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে চাই। তিন বা চার মাসের মধ্যে বাড়ি যাওয়ার আশা করছি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন রাজু।
দুই মাসের জন্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু । এ সময় পার হলে আবার তাকে ফলোআপের জন্য আসতে হবে।
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ