আজকের শিরোনাম :

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

একইসঙ্গে আম্পান-করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২০, ২০:৩২ | আপডেট : ০৪ জুন ২০২০, ১০:২৭

যথাযথ সময়ে পূর্ব-সতর্কতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে নিরাপদ রাখা এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুননির্মাণ ও পুনরায় মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা। এর মাধ্যমেই এই করোনাকালীন সময়েও সুপার সাইক্লোন আম্পানকে সাফ্যল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ।  আর এতে করে বেঁচে যায় হাজার হাজার মানুষের জীবন। 

বুধবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি লেখায় এভাবেই করোনা পরিস্থিতিতে সুপার সাইক্লোন আম্পান মোকাবিলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে যখন ভারত সাগরে সুপার সাইক্লোন আম্পান সৃষ্টি হচ্ছিল, নষ্ট করার মতো কোনো সময়ই বাংলাদেশের হাতে ছিল না। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, বিধ্বংসী এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক আঘাত হানবে। এমনিতেই দেশে করোনা সংক্রমণ চলছে, এ সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। ওদিকে আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সামাজিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় রেখে বানানো নয়। 

ফলে দেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। কীভাবে ২৪ লাখ মানুষকে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে বাঁচাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়। আবার এটাও খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে গিয়ে আরও বড় বিপদ করোনার কবলে না পড়ে। মানুষ এমনিতেই নিজেদের ঘরবাড়ি অনিরাপদ অবস্থায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্র বা কোথাও সরে যেতে চায় না। এবার করোনা সংক্রমণের মধ্যে এ পরিস্থিতি ছিল আরও জটিল। করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে চাইছিল না। 

সার্বিক পরিস্থিতিতে যাতে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়, এ লক্ষ্যে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে আগেকার ৪ হাজার ১৭১ আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে আরও ১০ হাজার ৫০০ বাড়তি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করি আমরা। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে নামানো হয় ৭০ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী। বিতরণ করা হয় পর্যাপ্ত মাস্ক, পানি, সাবান ও স্যানিটাইজার। বিদেশি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় ভুক্তভোগী গার্মেন্টস কারখানাগুলো নেমে পড়ে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট তৈরির কাজে। 

গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট্রিক ভেরকুইজেনের সঙ্গে যৌথভাবে গার্ডিয়ানে লেখা নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মে মাসে ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় আম্পান যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন সময় নষ্ট করার সুযোগ ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সামাজিক দূরত্বের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়নি। তখন দেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, কীভাবে ২৪ লাখ মানুষকে বড় বিপদ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল থেকে রক্ষা করা যায়।

সবচেয়ে ভালো সময়েও জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়াই ছিল চ্যালেঞ্জের। ঘরবাড়ি অরক্ষিত রেখে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি হয় না। এবার এ চ্যালেঞ্জ ছিল আরও অনেক বেশি। ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছিল। উদ্ধারকর্মীদের নিশ্চিত করতে হয়েছিল যে, সরিয়ে নেয়ার এই প্রক্রিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণ ঘটবে না।

মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যমান চার হাজার ১৭১টি আশ্রয় কেন্দ্রের সঙ্গে আরও ১০ হাজার ৫০০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। যাতে সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে সবাইকে আশ্রয় দেয়া যায়। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৭০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক উপকূলীয় এলাকায় তৎপরতা শুরু করে।

মাস্ক, পানি, সাবান ও স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। বিদেশি রফতানির আদেশ বাতিল হওয়ায় ধুঁকতে থাকা তৈরি পোশাক শিল্প ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) তৈরির মধ্য দিয়ে আবার উৎপাদনে ফিরতে সক্ষম হয়।

নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহামারীর শীর্ষ ধাপে আম্ফানের মতো একটি ঘূর্ণিঝড় জলবায়ু ও মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আন্তঃসম্পর্ককে সামনে নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আটলান্টিক ও ক্যারিবিয়ানের পানির অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে চলতি বছর হারিকেনের মৌসুম রেকর্ড বইয়ে স্থান করে নিতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও ক্যারিবীয় অঞ্চলেও কোভিড-১৯ এর কারণে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া কঠিন হয়ে উঠবে।

উদ্ধার তৎপরতায় প্রারম্ভিক সাড়া দেয়ার জন্য ৫৫ হাজার কর্মী নিয়ে বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রস্তুতির কারণে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ভারত ও বাংলাদেশে ১০০ এর কম মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যদিও একজনের মৃত্যুও অত্যন্ত অনুতাপের, তারপরও পূর্ব-সতর্কতা ব্যবস্থা এবং যথাযথ উদ্ধার তৎপরতার অনুশীলন বছরের পর বছর হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছে।

অবকাঠামো পুনর্গঠন ও নতুনভাবে জীবন-যাত্রা শুরু করা ভিন্ন আরেক বিষয়। এর আগে অসংখ্যবার বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তা অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ