গ্রামপর্যায়ে আমরা শহরের সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেব : প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৫৯
বাংলাদেশকে গড়ার জন্য আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী। বাংলাদেশ যে আজ এগিয়ে যাচ্ছে সে জন্য এই বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে তারা যে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের এই দায়িত্ব পালন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি সবাই একযোগে এভাবে দায়িত্ব পালন করি, সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর হবে আলোকিত। প্রতিটি গ্রাম হবে সমৃদ্ধ। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত আমরা শহরের সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেব।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি অ্যাকাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার দিয়েছিল। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের আম্রকাননে ওই সরকার গঠন হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এই বাহিনী গঠন করেছিলেন। এই বাহিনী জাতীয় নির্বাচন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল, বিমানবন্দর ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করছে। বিশেষ করে বিএনপি যখন অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে তখন এই বাহিনী সারাদেশে বিএনপিকে দমন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, আনসার বাহিনীর যে কোনো সমস্যার সমাধানে আমাদের সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই বাহিনীর উৎকর্ষতা সাধনে যত প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা দরকার তা করেছে। এই বাহিনীর জাতীয় পতাকা ছিল না। তাদের জাতীয় পতাকা প্রদান, স্বাধীনতা পদক প্রদান, তাদের পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বাহিনীর জন্য একটি ব্যাংক করে দেয়া হয়েছে। এখান থেকে তারা যখন ইচ্ছে তখন ঋণ নিতে পারেন। ঝুঁকি ভাতাও প্রবর্তন করেছে আমাদের এই সরকার।
শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার আনসার ব্যাটালিয়ন আইন প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ এবং ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ও আম্রকানন’-এর নিরাপত্তার জন্য দুইটি আনসার ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপালনসহ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও মৌলবাদ নির্মূলে আনসার বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এ বাহিনীর সদস্যদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা— জননিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে শিগগিরই ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
আরও উন্নয়ন কাজে এই বাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে উন্নয়ন কাজে আরও সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এ বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্যরা ‘এভসেক (এভিয়েশন সিকিউরিটি)’ এর অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ ও জনপদকে নিরাপদ রাখতে দুইটি মহিলা ব্যাটালিয়নসহ এ বাহিনীতে ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এ ছাড়া নবগঠিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।’
খেলাধুলায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সফলতার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্যরা খেলাধুলা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমসে বাংলাদেশের অর্জিত ১৪২টি পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জন করেছেন আনসার বাহিনীর খেলোয়াড়রা।
তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৬১ লাখ সদস্য রয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর ১৪৩ জনকে ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’র পদক তুলে দেন তিনি।
এর আগে হেলিকপ্টারে করে গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি অ্যাকাডেমিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এর পর প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্যারেড পরিদর্শন শেষে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিবেশন করা হয়। অভিবাদন মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠান স্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এবিএন/সাদিক/জসিম
এই বিভাগের আরো সংবাদ