আজকের শিরোনাম :

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৫

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অভিযোগে সৃষ্ট আন্দোলনের ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় এ বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক লীগের ১২তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বাংলাদেশে মতো কম ব্যয়ে উচ্চ শিক্ষা পৃথিবীর কোথাও নেই, এ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা দিচ্ছে সরকার। সরকারের টাকা ইউসিজিতে দেয়া হয়। সেখান থেকে সকল শিক্ষকের বেতন-ভাতা বা অন্য সবকিছু শিক্ষকরা পাচ্ছেন। একজন শিক্ষার্থী মাসে কত টাকা খরচ করেন? বড় জোড় দেড়শ’ টাকা। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চ শিক্ষা হয়? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখুন, প্রতি সেমিস্টারে কত টাকা লাগে। আর আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কত লাগে? পাবলিক বিশ্বদ্যিালয়ে এই যে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা খরচ হয় প্রতি শিক্ষার্থীর পেছনে, সব টাকা সরকার দেয়। সেখানে শৃঙ্খলা থাকবে, উপযুক্ত শিক্ষা পাবে এবং নিজেদের জীবন সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আমি দেখলাম যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না কি আমরা বুঝি না। তো যারা কথা বলছেন, তারাই বোঝেন! বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন, তারাই বোঝেন। আর পড়াশোনা নষ্ট করে স্ট্রাইক করে কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত করবেন। তারা বোঝেন আর আমরা বুঝব না, এটা তো হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সুবিধা পায় পৃথিবীর কোনও দেশ এত অল্প খরচে পড়াশোনোর এত সুযোগ দেয় না। এটা সত্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়ত্তশাসন আছে। কিন্তু টাকা দিচ্ছে কারা। টাকা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের টাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে যায়। সেখান থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। একজন শিক্ষার্থীর মাসে মাত্র ১৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চশিক্ষার খরচ হয়? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কত লাখ টাকা খরচ হয় প্রতি সেমিস্টারে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কত লাগে। সে টাকা যোগান দেয় সরকার। দুই লাখ আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনে। ইঞ্জিনিয়ার, মেডিক্যাল ও কারিগরিতে খরচ আরও বেশি হয়। সব টাকা তো সরকারের পক্ষ থেকে যাচ্ছে। কাজেই সেখানে ডিসিপ্লিন দরকার। শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা পাবে, নিজেদের জীবনকে উন্নত করবে সেটাই আমরা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেখি অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আমরা বুঝি না। যারা কথা বলছেন তারাই বোঝেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তারাই বোঝেন। পড়াশোনা নষ্ট করে স্ট্রাইক করে দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, যারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ব্যাহত করবেন তারাই বোঝেন। আর বুঝবো না আমরা। এটা তো হয় না। অর্থ দেবে সরকার, সব রকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার করবে। সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে আর সরকার সেখানে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না এটা কখনও হতে পারে না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘কথায় বলে- স্বাধীনতা ভালো তবে বালকের জন্য নহে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আমি মনে করবো এ ধরনের বালক সুলভ কথাবার্তা না বলাই ভালো। বরং ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে, তাদের সময় যেন নষ্ট না হয়, উপযুক্ত সময়ে ভালো রেজাল্ট করে জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে সেটাই আমরা চাই। কাজেই উসকানি দিয়ে ছাত্রদের বিপথে নেওয়া আর মুখরোচক কথা বলা এটা কখনও কেউ মেনে নিতে পারে না। তা যদি করতে হয় তবে নিজেদের বেতন নিজেদের দিতে হবে। নিজেদের খরচ নিজেরা চালাবে। সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানীং দেখছি, কোনও কথাবার্তা নাই ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কয়েকজন মিলে অহেতুক অভিযোগ তোলে। আইনে আছে- কারও বিরুদ্ধে কেউ যদি কোনও অভিযোগ তোলে সেটা যদি প্রমাণিত না হয় তবে সেই অভিযোগকারীর বিচার হয়, সাজা হয়।’গত এক দশকে যে পরিবর্তন হয়েছে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এমন উন্নয়ন আর হয়নি, দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘এ সময়ে শুধু সামরিক ক্যু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এদের কথা বলতে কখনো শুনিনি। বরং তাদের পদলেহন করতে দেখেছি। এটা হলো বাস্তব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্ধ শিল্প কারখানাগুলোর মালিক যারা পাকিস্তানি ছিলেন সেই কারখানাগুলো জাতীয়করণ করে পুনরায় চালু করেছিলেন। ৮২ শতাংশ মানুষ তখন দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছিলেন। শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্য পরিবর্তনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের শিকার হচ্ছিলো বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন, গণতন্ত্রকে সুসংহত এবং বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সকল দল, মত, সরকারি-বেসরকারি, সামরিকসহ সব প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে একত্রিত করে একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে সকলে এক হয়ে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন তখন বাংলাদেশে ১৯টি জেলা ছিল। এই বাংলাদেশকে তিনি সাতটি জেলায় ভাগ করেছিলেন। যতগুলো সাব ডিভিশন অর্থাৎ মহাকুমা ছিল প্রত্যেকটা মহাকুমা তিনি একটা জেলায় রুপান্তর করে সাতটি জেলায় উন্নীত করে সেখানে গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন যাতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একবারে তৃণমূল মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। তিনি সকলকে নিয়ে যে প্ল্যাটফর্ম করেছিলেন তা ছিল ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম যাকে সবাই বাকশাল বলে। তার এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দ্রুত করতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। যারা জনগণের জন্য কাজ করবেন তারা যেন জনগণের ভোট পান সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও তিনি নিয়েছিলেন। তখন যে দু’টি নির্বাচন ও উপনির্বাচন হয়েছে সেখানে দু’জন স্কুল মাস্টার জয়ী হয়েছিলেন। কারণ তাদের কোনও অর্থ খরচ করতে হয়নি। রাষ্ট্রের পক্ষে থেকে প্রতি প্রার্থীর প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো। শুধু মানুষের কাছে গিয়ে প্রার্থীরা ভোট চাইতে পারতো। কোনও অর্থ খরচ করতে হতো না। এ রকম একটা ব্যবস্থা তিনি চালু করেছিলেন।

এর আগে সাদা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শ্রমিক লীগের ১২তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তার পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ