আজকের শিরোনাম :

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি : প্রধানমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:১৪ | আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৪৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করছি। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়। যদি ন্যায্য অধিকার আদায় করে থাকি আমি শেখ হাসিনাই করেছি। লাভ লোকসান হিসাব করলে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি।’

আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ফেনী নদীর পানি বন্টন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার ভগবানটিলায় ফেনী নদীর উৎপত্তি। সেটার বেশিরভাগই সীমান্তে। ভারতের ওই অংশের মানুষের পান করার পানির অভাব। এছাড়া বর্ডারের পানিতে দুই দেশেরই সমান অধিকার। আর এখানে তো পুরোটাই সীমান্তে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা আমাদের সাহায্য করেছিল। আশ্রয় দিয়েছিল। এটা তো ভুলে যেতে পারি না।’

ভারতে এলপিজি রফতানি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমদানি করে আনা এবং দেশে উৎপাদিত কিছু এলপিজি বোতলজাত করে রফতারি করবো। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রফতানির একটা পণ্য বাড়ছে। আর দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য অনেকগুলো কোম্পানি কাজ করছে। কিছু হলেই বলে এই সরকার ভোটের মাধ্যমে আসেনি। ভোটেই যদি নির্বাচিত না হতাম, বিরোধী দল এতদিন টেনে নামিয়ে দিতো। ১৯৯৬ সালে যেমন হয়েছিল। আমাদের সময়ও বিএনপি কয়েকটি সিট পেয়েছে। উপনির্বাচনে পাস করেছে। কোনও ইলেকশন নিয়ে আমরা তো কোনও কথা বলিনি।’

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী হিসেবে দেখি, অত্যাচারীকে অত্যাচারী হিসেবেই দেখি। কোনও অন্যায় অবিচার সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। বুয়েটের ঘটনা শোনার পরপরই আমি পুলিশকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তবে তারা বুয়েটে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার সময় বাধার মুখে পড়ে। এটা কেন জানি না।’

বাংলাদেশে নারীদের অগ্রগতি এবং এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নারীদের আসল স্থান তৈরি করে নেওয়ার কাজটা নারীদেরই করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাত্তরে নির্যাতনের শিকার মেয়েদের উদ্ধার করে তাদের সেবাযত্ন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন সমাজ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কেউ নির্যাতনের শিকার হলে মুখ ফুটে বলতে পারে। একাত্তরে সেই পরিস্থিতি ছিল না। সে সময় বঙ্গবন্ধু তাদের পুনর্বাসন করেন। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে যাতে নারীর অবস্থান থাকে সেজন্য নারীর জন্য ১০ শতাংশ কোটা করে দেন বঙ্গবন্ধু। একটা সমাজ নারীকে ছাড়া একা উঠে দাঁড়াতে পারে না। এর জন্য শিক্ষারও প্রয়োজন। নারী শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অবৈতনিক করে দেওয়া হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েদের কর্মসংস্থান যাতে বেশি হয়, সে দিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় যেন মেয়েদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং- এই লক্ষ্য থেকে ছেলে-মেয়ে সবাইকেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা গৃহহীন তাদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প শুরু করি। স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে ঘর দেওয়া হয়। তবে অগ্রাধিকার পাবে স্ত্রী।’ হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘কারণ নতুন ঘর পেয়ে যদি কেউ নতুন বৌ চায়!’  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৮৪ লাখের মতো মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছে। বিধবা, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, অবহেলিত শ্রেণির সবার জন্য যতটা কাজ করা দরকার আমরা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের জন্য কাজ করার উদ্দেশ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশন নামে একটা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছি। যারা ভালো কাজ করে তারা জয়িতা পুরস্কারও পায়। যেহেতু মেয়েরা কাজ করে তাদের থাকার সমস্যা হয়। তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নারীদের জন্য কর্মজীবী হোস্টেল হচ্ছে। জাতীয় শ্রমনীতি করে দিয়েছি। সব কর্মক্ষেত্রে শিশুযত্ন কেন্দ্র করে দিতে বলেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘নারীরা বিদেশে যাচ্ছে কাজ করতে। তাদের জন্য ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ঘরবাড়ি যাতে বিক্রি করতে না হয় সেজন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি, যাতে ঋণ নিয়ে বিদেশ যেতে পারে। এসএমই ফাউন্ডেশনে মেয়েদের জন্য বিশেষ সুবিধা আছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে নারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। সবক্ষেত্রে মেয়েরা যেন প্রতিযোগিতা করতে পারে সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী পরে মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রায় ১৫ বছর পর সম্মেলন করছে মহিলা শ্রমিক লীগ। শনিবারের এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহিলা শ্রমিক লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের পর আর সম্মেলন হয়নি সংগঠনটির। গত ১৫ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন রওশন জাহান সাথী। তিনি নবম সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই সময় ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন শামসুন্নাহার বেগম। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, নতুন নেতৃত্ব ও সংগঠনকে গতিশীল করতেই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছে যারা সংগঠনকে নেতৃত্ব দিতে পারে। বর্তমানে সংগঠনটির ৪১ জেলায় পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ