আজকের শিরোনাম :

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স-সীমা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০১৯, ১৮:১৬ | আপডেট : ০৮ জুলাই ২০১৯, ১৯:১৪

সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স-সীমা ৩৫ বছর না করার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কাজ করার একটা সময় থাকে। একটা এনার্জি থাকে। কিন্তু বয়স বাড়লে তো কাজের গতিও কমে যাবে। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। ’

আজ সোমবার (৮ জুলাই) বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব যুক্তি তুলে ধরেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন, একটা কাজ করার একটা সময় থাকে। একটা এনার্জি থাকে। এখন জন্ম নিবন্ধন করা হয়, বয়স লুকানো যায় না। আমরা যদি ধরেই নেই, একজন ছেলে বা মেয়ে যদি নিয়মিত পড়াশোনা করে, যদি একটু দেরিও হয়, তাহলেও ১৬ বছরে এসএসসি পাস করে। করে না? এরপর দুই বছর পর অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সে এইসএসসি পাস করে। এরপর অনার্স ৪ বছর, মাস্টার্স ১ বছর। ২৩ বছরের মধ্যে মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে যায়। এরপরই সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে পারে পিএসসিতে সরকারী চাকরী পাওয়ার জন্য। এরপরও যদি এক-দুই  বছর দেরিও হয়, তাহলেও ২৪/২৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তো আমি আপনাদেরকে কোন কিছু না, আপনারা জবাব টা নিজেরাই ঠিক করে নেন, যে এটা দেওয়া সঙ্গত কী-না, আমি খালি একটা হিসাব দিচ্ছি। আমি পিএসসি চেয়ারম্যানকে ডেকেছিলাম, আমি বসেছি, কথা বলেছি, আমি একটা হিসেব নিয়েছি, হিসেবটা আমি একটু বলি, আগে একটু মনোযোগ দিয়ে শোনেন; লাগে আমি কাগজটাও দিয়ে দিব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী যারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তাদের পাসের হার হলো, ৪০ দশমিক ৭ ভাগ, ২৫ থেকে ২৭ বছর যাদের বয়স, এটা হলো ৩৫তম বিসিএসের কথা বলছি, আমি ৩টা হিসেব বলবো, ৩ বছরের হিসেব আমি নিয়ে এসেছি, তাদের পাসের হার হলো, ৩০ দশমিক ২৯ ভাগ।  আর ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার হলো, ১৩ দশমিক ১৭।  আর ২৯ বছরের উর্ধ্বে যারা তারা পাশ করেছে ৩ দশমিক ৪৫ ভাগ। এটা হলো ৩৫ তম বিসিএস। এবার আসেন ৩৬ তম বিসিএস। ৩৬ তম বিসিএসে ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের পাসের হার ৩৭ দশমিক ৪৫ ভাগ। আর ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার, ৩৪ দশমিক ৭৮ ভাগ। আর ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার, ১৪ দশমিক ৮৯ ভাগ পাশ করেছে, যাদের বয়স ২৭ থেকে ২৯ বছর। আর ২৯ এর উর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের পাশের হার ৩৬ তম বিসিএসে ছিল, ৩ দশমিক ২৩ ভাগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসুন এবার ৩৭ তম বিসিএস।  ৩৭তম বিএসএসে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারা ২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের পাসের হার, ৪৩ দশমিক ৬৫ ভাগ। আর ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার, ২৩ দশমিক ৩৫ ভাগ। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের পাসের হার, ৭ দশমিক ২০ ভাগ। আর ২৯ এর উর্ধ্বে যাদের বয়স তারা পাস করেছে, জিরো পয়েন্ট ছয় এক ভাগ (০ দশমিক ৬১ ভাগ।) কোনটা গ্রহণ করবো বলেন এখন? আমি আর কিছু বলতে চাই না, আমি খালি পাসের হিসাবটা দিলাম। আপনারাই বলেন; এটা হলো ২৯ এর উর্ধ্বে, ধরেন ২৯-৩০, ৩০-৩১।  আর যদি ৩৫ পর্যন্ত যান তাহলে আমার অবস্থাটা কী দাঁড়াবে, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন। কারণ তখন তো বিয়েশাদি হবে, ছেলে-মেয়ে হবে, ঘর সামলাতে হবে, বউ সামলাতে হবে আর বই কিনতে হবে। তখন তো আরও করুণ অবস্থা হয়ে যাবে। একটা কাজ করার একটা সময় থাকে। একটা এনার্জি থাকে। এই যে একটা দাবি তোলা, এখন দাবি তোলার জন্য যদি দাবি তোলা হয়, আমার কিছু বলার নেই। এই দাবি তোলার জন্য নিশ্চয় কোনও না কোনও জায়গা থেকে তাদেরকে কিছু সুবিধা বা আমি জানি না নিশ্চয়ই কোন জায়গা থেকে প্রেরণা পাচ্ছে, আমি ভাল শব্দ ব্যবহার করি, অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। কিন্তু তার পরিণতিটা কী দাড়াবে?’।

‘আর ৩৫ বছর বয়সে পরীক্ষা দিলে এর রেজাল্ট, ট্রেনিং, ট্রেনিং শেষ হতে যদি আরও দুই বছর লাগে, তাহলে ৩৭ বছর গেলো। ৩৭ বছরে চাকরি হলে কী হবে? চাকরির বয়স কিন্তু ২৫ বছর না হলে ফুল পেনশন পাবে না। ঠিক আছে, পেনশন না পেলো। তাহলে একটা সরকার কাদের দিয়ে চালাবো? আমরা সবসময় বলি, যারা মেধাবী, তরুণ, কর্মক্ষম তাদের দিয়েই তো আমাদের দেশের উন্নয়ন কাজ করবো। কিন্তু বয়স বাড়লে তো কাজের গতিও কমে। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যাই হোক, আমি শুধু হিসাবটাই দিলাম, দেশবাসী বিচার করুক, আপনারাই বিচার করুন।’- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রস্তাব এসেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক এই বিষয়গুলো তখন বিবেচনায় নেওয়া হয়। কারণ পার্লামেন্টে কণ্ঠভোটে পাস হলে কী হবে? তারা আন্দোলন করেই যাবে? ভালো কথা আন্দোলন করুক,  আমি তো আন্দোলনে বাধা দেবো না। আন্দোলন তো ভালো জিনিস। তবে যদি কারও প্ররোচনায় আন্দোলন করে থাকে, তাহলে কী হবে, সেটা বুঝতেই পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড,  আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময় ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু ৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা কী দেখেছি? একটা শ্রেণি নেমে গেলো অস্ত্র হাতে। গুলি-বোমা-অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়া আর কিছুই শোনা যেতো না। সেশনজট তো নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার ছিল। আমরা আসার পর ধীরে ধীরে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছি।’

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ