আজকের শিরোনাম :

পদ্মা সেতুতে ড. ইউনূসের ষড়যন্ত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ বক্তব্য

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:১২

পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করায় নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি ড. ইউনূসের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, যারা গরীবের সুদের টাকায় বড়লোক হয় তাদের কোনো দেশপ্রেম থাকতে পারে না।

আজ রবিবার (১৪ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর নামফলক উন্মোচন ও কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি ‍হুবহু তুলে ধরা হলো-

আপনারা জানেন যে, গ্রামীণ ব্যাংক নামের একটি ব্যাংক যারা মানুষকে ক্ষুদ্র ঋন দিত। উচ্চহারে সুদ নিত। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমি পাশে ছিলাম। আমি যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনও কিন্তু সবসময় আমি সমর্থন দিয়েছি।

সেই ৮৫-৮৬ সাল থেকেই ড. ইউনূসের সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আছেন। মুজাম্মেল হক সাহেবও আছেন। তিনিই তাঁর (ড. ইউনূস) সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি আরেকবার আমার সঙ্গে দেখা করেন। তখন আমি তাকে সমর্থন দিয়েছিলাম যেন দরিদ্র মানুষ কিছু একটা পায়।

আর ৯৬ সালে সরকারে আসার পর আমি যখন মোবাইল ফোন অন্তর্ভূক্ত করেছি প্রাইভেট সেক্টরে। তিনি আমার কাছে এসে বলেছিলেন তাকে যদি একটা মোবাইল ফোনের লাইসেন্স দেওয়া হয়, তাহলে নরওয়ের সহযোগিতায় এই মোবাইল ফোনটা করবেন এবং মোবাইল ফোন থেকে যা উপার্জন হবে, তা গ্রামীণ ব্যাংকের ফান্ডে যাবে, এবং সেখান থেকে গ্রামীণ ব্যাংক এদেশের দরিদ্র মানুষকে সহযোগী করবে। আমি তিনটি মোবাইল ফোন নিয়েছিলাম তার থেকে তাকে ব্যবসার জন্য আমরা দিয়ে দিই। দুর্ভাগ্য যে, ওই ফোনের কোন লভ্যাংশ গ্রামীণ ব্যাংক ফান্ডে যায়নি।

এর মাঝে আরেকটি ঘটনা ঘটলো যে, গ্রামীণ ব্যংকের একটা আইন আছে। আইনটা হলো, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি, সে তার ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবেন। ইতিমধ্যেই ড. ইউনূসের বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তখনও সে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি। আপনারা জানেন যে সাধারনত একটা ব্যাংকে নিয়মের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া এটা তো সম্পূর্ণ প্রাইভেট না। এই ব্যাংক টা সরকারি পয়সায় করা।

যখন ৯৮ সালে বন্যা হয়, এ ব্যাংকটি খুব বিপদে পড়ে। তখন আমরা আমাদের সরকারের পক্ষ হতে ৪শ’ কোটি টাকা দিয়েছিলাম, সেটা চালু রাখতে। এবং সবসময় সহযোগীতাই করে গিয়েছি। কিন্তু সব থেকে দূর্ভাগ্য যখন ১০ বছর হয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থমন্ত্রনালয় থেকে অনুমতি নেয়নি। অনুমতি  ছাড়াই প্রায় ১০ বছর এমডি পদে দখল করে থেকে সরকারি বেতনও নিয়েছেন। তারপর তাকে ব্যাংক থেকে একটা নির্দেশ দেওয়া হয় যে, আপনার বয়স হয়ে গেছে, আপনি আর এমডি থাকতে পারবেন না। এছাড়া এমডি থাকার মতো কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তার মানে সম্পূর্ন ইলিগ্যাল। আইন সম্মত না। আইনের ব্যক্তয় ঘটানো হয়েছে। তারপরও আমরা তাকে বোন রকম অসম্মান করতে চাইনি।

আমাদের অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব, অর্থ উপদেষ্টা এই দুইজন ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন।  দেখা করে বলেন যে, আপনাকে আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা করে রাখতে চাই। আপনি এমডি পদে আর থাইকেন না, আইনগতভাবে আপনি আর এমডি পদে থাকতে পারেননা।

তিনি (ইউনূস) সেটায় রাজি হলেননা। রাজি না হয়ে, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন।  বাংলাদেশ  ব্যাংকের বিরূদ্ধে একটা ,আরেকটা আমাদের অর্থমন্ত্রীসহ কয়েকজনের নামে আরেকটি মামলা হলো। খুব স্বাভাবিক ভাবে মামলা যখন করেছে, যখন আইনে দেখা গেল যে ৬০ বছরের বেশি তিনি এমডি  থাকতে পারেননা, স্বাভাবিক ভাবেই সে যে ১০ বছরের যে অতিরিক্ত বেতন তিনি নিয়েছেন, কোর্ট কিন্তু সেটা কেড়ে নিতে পারতো, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই দাবি করা হয়নি। কোর্ট তাকে বলে দিল, আইন আপনাকে অনুমোদন করেনা, তাই আপনি আর থাকতে পারেন না। ওনি ক্ষেপে গেলেন।

হিলারী ক্লিনটন আমাকে ফোন করে বলেন, ওনাকে এমডি রাখেন। আমি বললাম, দেখেন, আইনে এটা আছে।  আমি কি করে রাখবো? তিনি যখনেএখানে থাকলেন, আইন পরিবর্তন করার জন্য সে তো কোন প্রস্তাব দেন নাই। আমাকে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ফোন করলো, আমি সবাইকে বললাম, এটা তো আইনে ধরে না, আইনের বাইরে আমরা কি করবো?

তাছাড়া, মামলা তো ওনি নিজে করেছেন। আমরা তার সম্মান রক্ষার জন্য ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে প্রস্তাব দিলাম, তিনি তা গ্রহন করেন নাই। মামলায় তিনি হেরে গেলেন, তারপর আমার অফিসে এসে তখনকার এম্বাসেডর যারা ছিল ,এবং তাদের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনেকেই একটা হুমকি দিত যে, ইউনূসকে এমডি থেকে সরালে পদ্মা সেতু হবেনা। পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হবে।

আমি বললাম, ইউনূসের সঙ্গে পদ্মা সেতুর কি সম্পর্ক?  একজন নোবেল পাওয়ার পর একটা ব্যাংকের এমডি পদের লোভ ছাড়তে পারেনা কেন? এমডি পদ তো আমরা সাধারনত জয়েন্ট সেক্রেটারি পদ লেবেলের যারা থাকে তাদের দিয়ে থাকি। এর উপরে তো বেশি একটা এমডি হয়না।  তো সেই জায়গাটায় ওনার এতো লোভ কেন আমার বুঝে আসেনা। তাকে তো উপদেষ্টা রাখার জন্য বলা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ড. ইউনূছ তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারকে দিয়েও সুপারিশ করিয়েছেন যেন এমডি পদে রাখা হয়। নতুবা পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

এর পরবর্তীতে আমাদের কোনো এক স্বনামধন্য এডিটরকে সঙ্গে নিয়ে ড. ইউনূস হিলারীর কাছে সমানে ইমেইল পাঠালেন এবং অনুরোধ করলেন। আর হিলারী ক্লিনটন সেই অনুরোধ শুনে বিশ্বব্যাংকের তখন যে প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে নির্দেশ দিলেন বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করার জন্য। কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বোর্ড মিটিং এ এটা অনুমোদন হয় নাই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট যেদিন দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবেন, শেষ দিন বলে যান যে, বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ। কিন্তু কোনো বাধাই আমাদের আটকে রাখতে পারেনি। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি।

এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ