আজকের শিরোনাম :

জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের চুক্তির বাস্তবায়ন দেখতে চাই: প্রধানমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:০৮

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনের ভাষণে এ দাবি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের অবস্থানে হতাশা ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, দেশটি মৌখিকভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ওপর অন্যায় অত্যাচারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়কে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, বিশ্ব সংকট নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক আর জাতিসংঘের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সাধারণ পরিষদ। যেখানে সমান মর্যাদা নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করে সদস্যভুক্ত ১৯৩টি দেশ।

গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ পরিষদের এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার(২৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে বলা হতো দুর্গোগ, বন্যা, খরা, হাড্ডিসার মানুষের দেশ, তা এখন বিশ্বশান্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে। আমাদের পথচলা এখনও শেষ হয়নি। পথচলা ততদিন চলবে যতদিন পর্যন্ত আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষে জাতিসংঘের অব্যাহত প্রচেষ্টার নানাদিক উল্লেখ করেন। বলেন, বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত এবং নিজ গৃহ থেকে বিতাড়িত মানুষের দুর্দশাকে অগ্রাহ্য করে টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিবরণ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাতে আমরা হতভম্ভ। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়- বিশেষ করে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও অবিচারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাস্তচ্যুত এ মানুষগুলোর নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় একাধিক চুক্তি করা হয়েছে দেশটির সঙ্গে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশাহত হয়েছি। কারণ আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রথম থেকেই তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে মিয়ানমার মৌখিকভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না। যেহেতু রোহিঙ্গা সমস্যার উদ্ভব হয়েছে মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও হতে হবে মিয়ানমারে। জাতিসংঘে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে, আমরা তারও আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা চাই।’

সাধারণ পরিষদের ভাষণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাসবাদ দমনসহ তার সরকারের আমলে ক্রমবর্ধমান এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের নানাদিক উপস্থাপন করেন তিনি। বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের যাত্রাপথে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ।

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক নানা সংকটে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ