আজকের শিরোনাম :

বঙ্গমাতার জন্মদিনে ওয়েবিনারে বক্তারা

বঙ্গবন্ধুর চলার পথের প্রেরণা ছিলেন বঙ্গমাতা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২০, ১০:৫১

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের জন্মদিনে উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে নয় একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা।

শনিবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘গৃহকোণ থেকে জনগণের হৃদয়ে’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।

সাবেক ছাত্র নেতা ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমীর হোসেন আমু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম । অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি আলোচনার শুরুতে বঙ্গমাতাকে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিহত হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে শোক ও শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কোনো পিছুটান ছিল না বলেই বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে পেরেছিলেন। আর বঙ্গবন্ধুর এই চলার পথকে মসৃন করেছিলেন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ মুজিব। বেগম মুজিবের মধ্যে কিছু ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকতে পারে নয়ত যে বয়সে ছেলেমেয়েদের বাবা-মার কাছে আবদার থাকে সে বয়সেও বেগম মুজিব বায়না না করে বঙ্গবন্ধুর হাতে তার জমানো টাকা তুলে দিতেন যাতে বঙ্গবন্ধুর কলকাতাতে কষ্ট না হয়। এই যে তার ত্যাগ, সেই ত্যাগের বিনিময়েই বঙ্গবন্ধুর কিন্তু বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠা। বঙ্গবন্ধুর জীবনে সবচেয়ে বড় আশির্বাদ হিসেবে বেগম মুজিব এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে যেভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছিলেন তা তার লেখনির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

বঙ্গমাতার সঙ্গে তার নিজের অনেক ঘটনার উল্লেখ করে আমু বলেন, আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করতাম আমরা সবচেয়ে বেশি তার সান্নিধ্য পেয়েছি, বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি আমাদের সাহস যুগিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, আর্থিক সাহায়তা দিয়েছিলেন। এমনকি ঈদ করার টাকাও আমাদের দিয়েছিলেন ছাত্র আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের সাথে দেখা করতেন গোপনে, ধানমন্ডিতে দুটি বাসায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, এই দুটি বাসায় তিনি দেখা করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পৌছে দিতেন। তার জমানো টাকা পরিবারের পেছনে না খরচ করে আমাদের মতো ছাত্রনেতাদের দিতেন আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে নেয়ার জন্য। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানুষ। আমি বঙ্গমাতার জন্মদিনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি আলোচনার শুরুতে ১৫ আগস্টে নিহত সবার কথা স্মরণ করেন। আলোচনাকালে তিনি বঙ্গমাতার জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল বঙ্গমাতাকে দেখার, বাবার সাথে ৩২ নম্বর বাড়ি গিয়েছিলাম একবার। তাকে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম, এত বড় একজন মানুষের স্ত্রী এত সাধারণ হবে আমার ধারণাই ছিল না। পরবর্তী সময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছ থেকে বঙ্গমাতাকে নিয়ে আমার জানার আরও সুযোগ হয়- তার মধ্যে আদর্শ ছিল, মানবতা ছিল, দেশপ্রেম ছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর চলার পথে কখনও বাধা হননি তিনি, বরং হয়েছেন চলার পথের শক্তি, হয়েছেন প্রেরণা। বঙ্গমাতার জীবনী থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ এই নেত্রী।

সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত মূল প্রবন্ধ উপস্থানের সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে নানা জানা-অজানা কথা তুলে ধরেন। তিনি তার প্রবন্ধে, বঙ্গমাতাকে একজন শান্ত ধীরস্থির ধৈর্যশীল সাহসী প্রজ্ঞাবান তেজস্বিনী এবং অমায়িক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দেশের জন্য তিনি তার দুই সন্তানকে মাতৃভূমি স্বাধীন করার লড়াইয়ে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনে শতবার দেখা করতে যাওয়ার ঘটনাও প্রবন্ধে উল্লেখ করেন এই সাংবাদিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, পৃথিবীতে কিছু মহীয়সী নারী আছেন যারা একজন মহামানবকে তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন আমাদের বঙ্গমাতা বেগম মুজিব তাদের মধ্য একজন। বঙ্গবন্ধুর যে তিন খন্ড আত্মজীবনী বের হয়েছে সেগুলো লিখতে অনুপ্রেরনা দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। ছয় দফা, গনঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরনা হয়ে কাজ করেছেন বঙ্গমাতা মুজিব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ড. নাসরীন আহমদ বলেন, আমরা প্রতিবেশী ছিলাম, দুই বাড়ির মাঝে ছোট একটা দেয়াল, একটা ছোট গেট। সেই গেট দিয়ে আমাদের অবাদ যাতায়াত ছিল। তাদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন থেকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অবাদ যাতায়াত ছিল, আর এসব সামলাতেন বঙ্গমাতা শেখ মুজিব। আমরা তাকে কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি, দেখিনি তাকে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে। নিজের বিয়ের সময় হলুদের অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার উপস্থিতি ও আনন্দময় পরিবেশ তৈরি নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বঙ্গমাতার জীবন যেন বেগম রোকেয়ার তিনটি বইয়ের সাথে মিলে যায়। তাকে একজন রাজনীতিক, একজন বিশ্লেষক ও একজন পরামর্শক হিসেবেও উল্লেখ করেন এই অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধুর অনেক ডিসিশনে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুকে পিছন থেকে প্রেরণা দানও করেছিলেন বঙ্গমাতা। বেগম মুজিবকে নিয়ে আরো গবেষণা করারও কথা উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। আলোচকরা অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবনে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা অবস্থায় বেগম মুজিবের দলকে সুসংগঠিত করা ছাড়াও বঙ্গমাতার অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কেও আলোকপাত করেন।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ