আজকের শিরোনাম :

বাংলাদেশে আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না : তথ্যমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:১৪

বাংলাদেশে আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আজ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২০ সালের প্রথম দিনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন। নতুন তথ্যসচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেত্রী সেলিমা রহমানের ‘হঠাৎ করেই সরকারের পতন হবে’ এ মন্তব্যের প্রতি সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সরকারের পতন হবে -সেলিমা রহমানের এই কথা তো আমরা ১১ বছর ধরেই শুনে আসছি। সরকার পরিবর্তনের একটিই পথ, সেটি হচ্ছে নির্বাচন। যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তখন সেই নির্বাচনে যদি জনগণ আমাদের দলকে সমর্থন না জানায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা সরকারে থাকবো না।

‘অবশ্য বিএনপি নানা পথে বিশ্বাস করে, কারণ তারা রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘সেলিমা রহমানের এই বক্তব্য সেই ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত ছাড়া অন্য কিছু না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অতীতের মতো আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না।

বিরোধী দলকে ‘স্পেস’ দেওয়া প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সমাজেই বসবাস করি। এখানে বিরোধী দল তাদের মত প্রকাশ, প্রতিবাদ করার আইনগতভাবে, সাংবিধানিকভাবে যে অধিকার, সেই অধিকার সবসময় ভোগ করছে। এখানে কাউকে অধিকার দেয়ার বিষয় নেই। মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসিতে আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং এখানে বিরোধী দল সবসময়ই সংসদে, সংসদের বাইরে সবসময় তাদের মত প্রকাশ করছে। সুতরাং অধিকার দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর।’

‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবার বিষয়ে কিছু বলেননি’ এমন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ড. হাছান বলেন, ‘দক্ষিণের মেয়রের বক্তব্য আমি শুনেছি। দক্ষিণের মেয়র যেটি বলেছেন, মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রীর মর্যাদা থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে। সেই বিধিনিষেধের কথাই তিনি স্মরণ করে দিয়েছেন।’

তথ্যমন্ত্রী এসময় সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আজকে বছরের প্রথম দিনে আপনাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্যই মূলত: আপনাদের আহ্বান জানিয়েছিলাম। একইসাথে আমাদের মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব যোগদান করেছেন। কামরুন নাহার তথ্য মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে প্রথম একজন মহিলা সচিব। তিনি ইতিপূর্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তথ্য ক্যাডারের অফিসার। সুতরাং এই মন্ত্রণালয়ের বিষয়াদি নিয়ে তার আগে থেকেই জানাশুনা আছে। যেহেতু তার আগে থেকেই অভিজ্ঞতা আছে সেহেতু মন্ত্রণালয়ের কাজ করতে তা অত্যন্ত সহায়ক হবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের একবছর সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘গত প্রায় একটি বছর আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছি। বিগত বছরে অনেক কাজ আমরা সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছি।  অনেকগুলো কাজ আমরা হাতেও নিয়েছি। কয়েক যুগে হয়নি বা এক যুগেও হয়নি এমন কাজ, যেমন ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল কয়েক যুগ আগে থেকে, কিন্তু সেটি সম্ভবপর হয়নি। গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে দুরদর্শনের ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে অফিসিয়ালি বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শিত হচ্ছে। গত বছরে কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।’
ড. হাছান বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্রম নির্ধারণের জন্য বার বার তাগাদা দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যেই টেলিভিশন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী প্রদর্শিত হচ্ছে।’


‘বিদেশি টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছিল, সেটি আমরা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি, অনেকগুলো টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল কোনো অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটি আমরা একটি নিয়ম নীতির মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছি; এখন একটি কমিটির মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে প্রদর্শিত হবে’, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ অনেক জায়গায় সেগুলো চালু ছিল, আমরা ঘোষণা করেছিলাম প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে এগুলো সরিয়ে নিতে হবে। পরে আমরা সময় বৃদ্ধি করেছিলাম আমাদের কাজের সুবিধার্থে যেহেতু ১৬ তারিখে বিজয় দিবস ছিল এবং অন্যান্য কাজ সেগুলোর সুবিধার্থে। আজকে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ডিস সংযোগ যদি পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। যারা ব্যবহার করবে বা যারা সংযোগ প্রদান করবে উভয়েই দোষী সাব্যস্ত হবে।’
মন্ত্রী জানান, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় একটি ছবি নির্মিত হচ্ছে। এই ছবির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। খুব সহসা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মতো বেতারও ভারতে সম্প্রচারিত হবে। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যেই এটি করতে আমরা সক্ষম হবো।’

ড. হাছান আরো জানান, ‘চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করার লক্ষ্যে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। এটি আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব সহসা এটি সংসদে পাঠাবো। ইতিপূর্বে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এক বছর পিছিয়ে ছিল। এটি হালনাগাদ করা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ১৮টি আইন, বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন হালনাগাদের কাজ চলছে। গণমাধ্যমকর্মী আইন খুব সহসা আমরা মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাব বলে আশা করছি।’

ড. হাছান জানান, ‘৬৪টি জেলা আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি ডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে একটি করে সিনেমা হলও থাকবে। যে হলগুলো আমরা লিজ আউট করতে পারবো, সিনেমা প্রদর্শনসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারবো। গণমাধ্যমকর্মী আইনে কিছু সংশোধনের দরকার ছিল সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে, সাংবাদিকদের দাবি অনুযায়ী। এটি আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, পাওয়া মাত্রই আমরা সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিব। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের পর সেটি সংসদে যাবে।’

‘অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন দেয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা সব রিপোর্ট এখনো পাইনি, পেলে খুব সহসাই কিছু অনলাইন নিবন্ধন পেয়ে যাবে’, জানান তথ্যমন্ত্রী।

 
এবিএন/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ