আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

সিলেট-১ আসনের বিজয়ী দল প্রতিবার সরকার গঠন করে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:০৪

সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে সে দলই প্রতিবার সরকার গঠন করে। বহুল প্রচলিত এ কথা কতটা সত্যি, সেটি নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে এটি প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে সিলেট-১ একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত। অতীতে এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করেছে তারা সরকারের ভেতরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে।

এ আসন থেকে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকার হয়েছিলেন।

এ ছাড়া বিএনপির প্রয়াত প্রভাবশালী নেতা এম সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিতও অর্থমন্ত্রী হয়েছেন।

তবে এখানকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ১৯৯১ সাল থেকে কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুবার নির্বাচনে জয়ী হয়নি।

সিলেট মহানগর ও সদর উপজেলা মিলে সিলেট-১ আসনটি গঠিত। এ আসনের অধিকাংশ ভোটারই নগরের ছোঁয়া পান। ব্রিটেন প্রবাসীদের অনেকের পরিবার এখানে বসবাস করায় অনেক জায়গায় প্রাচুর্য টের পাওয়া যায়।

নৌকা মার্কা নিয়ে এ আসন থেকে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন এ কে আবদুল মোমেন এবং ধানের শীষ মার্কা নিয়ে বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির।

সিলেটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, এখানে দলীয় প্রতীক একমাত্র বিবেচনার বিষয় নয়। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটাররা প্রার্থীর ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক পরিচয়কে বেশ গুরুত্ব দেয়।

আবদুল মোমেনের একটি বড় পরিচয় হচ্ছে, তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই।

তেমনিভাবে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের বাবা খন্দকার আবদুল মালিক ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রায় ৩৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু ১০ বছর আগের সে ফলাফল আওয়ামী লীগকে খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে না। কারণ মাত্র ৬ মাস আগে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন। এ ছাড়া ২০১৩ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন।

কিন্তু সেসব হিসাব-নিকাশ মনে রেখে বিএনপি বেশ আশাবাদী হলেও আওয়ামী লীগ মনে করছে জাতীয় নির্বাচনে নতুন হিসাব-নিকাশ হবে।

সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে বিশাল জায়গাজুড়ে অবস্থিত হাফিজ কমপ্লেক্স। এটি আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ কে আব্দুল মোমেনের পৈতৃক বাড়ি। একদিন সকাল ৯টায় হাফিজ কমপ্লেক্সে বসে কথা হলো আবদুল মোমেনের সঙ্গে। নির্বাচনের বিষয়ে খুব একটি চিন্তিত মনে হয়নি তাকে।

আবদুল মোমেনের ধারণা, গত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার যে ‘উন্নয়ন’ করেছে তাতে নির্বাচনে জিততে তাদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সিলেট-১ আসনের জনগণ তাদের নিরাশ করবে না বলে আবদুল মোমেনের ধারণা।

তবে এ আসনটি মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার কারণে বাড়তি চাপ অনুভব করছেন তিনি।

আবদুল মোমেন বলেন, ‘অবশ্যই কিছুটা বাড়তি চাপ তো আছেই। আমার দল এবং আমার সভানেত্রী আমাকে নৌকার প্রতীকটা দিয়েছেন। ন্যাচারালি জিতার একটি বাড়তি চাপ।’

বিএনপির প্রার্থী আবদুল মুক্তাদিরের পৈতৃক বাড়িটিও সিলেট শহরে অবস্থিত। মুক্তাদিরের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম তিনি ২৫-৩০ কর্মীর সঙ্গে বৈঠক করছেন।

নির্বাচন নিয়ে মোমেনের তুলনায় মুক্তাদিরকে বেশ সিরিয়াস মনে হলো। তবে তিনি বললেন, বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করছেন না।

তিনি বলেন, ‘মানুষের যে প্রত্যাশা, মানুষ যে পরিবর্তন চায়, তাতে আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী যে একটি ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ ভোট বিপ্লব হবে।’

তবে বিএনপির কর্মীদের যে বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অবাক লেগেছে সেটি হচ্ছে তাদের তৎপরতা।

এবারের নির্বাচনকে তারা অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে দেখছেন।

সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা থাকলেও তাদের প্রার্থী যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই তারা জড়ো হচ্ছেন।

তারা কোথায় কখন জড়ো হবেন, সে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে নিচ্ছেন। কারণ যে কোনো সময় পুলিশ হানা দিতে পারে, এমন সংশয়ের কথা অনেকেই জানালেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বেশ নির্ভার। স্বভাবতই দল ক্ষমতার থাকার কারণে বাড়তি কোনো টেনশন নেই তাদের।

সিলেট-১ আসন থেকে অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন- বটগাছ মার্কায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা নাসির উদ্দিন, আম মার্কায় ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি ইউসুফ আহমদ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উজ্জল রায় কোদাল মার্কা, বাসদের প্রনব জ্যোতি পাল মই মার্কা, জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী লাঙ্গল মার্কা, মিনার মার্কা নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের আনোয়ার উদ্দিন বোরহানাবাদী হারিকেন মার্কা এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেদওয়ানুল হক চৌধুরী হাত পাখা মার্কা পেয়েছেন।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ