আজকের শিরোনাম :

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ১৪ প্রতিশ্রুতি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৫৭ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৫

চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর বিএনপিসহ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত হয় ঐক্যফ্রন্ট। দুই দফা তারিখ পেছানোর পর অবশেষে রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা চলছে। ইশতিহারে দেয়া হচ্ছে ১৪টি প্রতিশ্রুতি।

আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তারা যেসব প্রতিশ্রুতি পালন করবে তার একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে।

আজ সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালে এ ইশতেহার ঘোষণা শুরু হয়।

এ সময় তার পাশে ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

যে ১৪ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট

১. প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য
এখানে বলা হয়েছে, মিথ্যা মামলা, গুম, খুন ও মামলার ঘুষ বাণিজ্য, বিচারবহির্ভূত হত্যায় লক্ষাধিক পরিবার ক্ষুব্ধ, বিপর্যস্ত। এ সমস্যা সমাধানে ‘সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন গঠন’ করা হবে।

২. নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বলা হয়েছে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে নারীর ওপর যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’দেখানো হবে। মামলাজট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বলা হয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে।

৩. ক্ষমতার ভারসাম্য
সংসদে একটি উচ্চকক্ষ সৃষ্টির কথা বলা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। বলা হয়, একটানা পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না। এ ছাড়া বলা হয়েছে বাংলাদেশে প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা পরীক্ষার জন্য একটি সর্বদলীয় জাতীয় কমিশন গঠন করবে ঐক্যফ্রন্ট।

৪. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের হাতে। পৌর এলাকায় সিটি গভর্নমেন্ট চালু করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।

৫. দুর্নীতি দমন এবং সুশাসন
দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতির বিধান (সরকারি চাকরি আইন-২০১৮) বাতিল করার প্রতিশ্রতি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া অর্থপাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনারো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওই জোট।

৬. কর্মসংস্থান ও শিক্ষা
পুলিশ ও সামরিকবাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোনো বয়সসীমা না রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিতে কোটার ব্যাপারে বলা হয়, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না।

এ ছাড়া পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থার কথা জানিয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথাও জানানো হয়।

৭. স্বাস্থ্য
তিন মাসের মধ্যে ওষুধ এবং ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করতে হবে বলে জানানো হয়।

৮. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন
দুই বছরের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে মানুষকে ভেজাল ও রাসায়নিক মুক্ত নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি করে ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলা হয়।

৯. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
প্রথম বছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য আগামী পাঁচ বছরে বাড়াবে না ঐক্যফ্রন্ট।

১০. প্রবাসী কল্যাণ
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া শ্রমশক্তি রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খোঁজার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।   

১১. নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার কথা বলা হয়। শহরে পরিবহন নীতি প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

১২. প্রতিরক্ষা ও পুলিশ
প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যুদ্ধাস্ত্র কেনার কথা বলা হয়। পুলিশদের ঝুঁকিভাতা বাড়ানো এবং জাতিসংঘ বাহিনীতে পুলিশের অংশগ্রহণ বাড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানানো হয়।

১৩. পররাষ্ট্র নীতি
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড, এর যেসব প্রকল্প দেশের জন্য লাভজনক, সেগুলো যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানানো হয়।

১৪. জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও ক্ষতিকর প্রভাব রোধে আন্তর্জাতিক সাহায্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করা এবং সেটার সদ্ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ