আজকের শিরোনাম :

রাফালে চুক্তি কি হয়ে উঠতে পারে 'বিজেপির বফর্স'?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:০৭

ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ফ্রান্সে নির্মিত ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান কিনতে গিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস অভিযোগ করছে, সরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থাকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই চুক্তিতে অংশীদার করেছেন শিল্পপতি অনিল আম্বানির কোম্পানি রিলায়েন্স ডিফেন্সকে।

দিনকয়েক আগে সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলঁদ-ও এই একই দাবি করার পর তা নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, বিরোধীরা এখন গোটা ঘটনার সংসদীয় তদন্ত চাইছেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বিরোধীরা ঠিকমতো লেগে থাকতে পারলে আনুমানিক ষাট হাজার কোটি রুপির এই রাফালে চুক্তি বিজেপির জন্য বফর্স কেলেঙ্কারির মতোই মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

তিন দশক আগে ভারতীয় সেনার জন্য সুইডেনের বফর্স কামান কেনাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে যে কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল, তা ভারতীয় রাজনীতিতে ছিল একটা মাইলফলক।

ওই অভিযোগের পর কংগ্রেস আর কখনো একার সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দিল্লিতে সরকার গড়তে পারেনি।

আজ সেই একই দল কিন্তু মনে করছে, বফর্স-কান্ডের ৩১ বছর পর রাফালে প্রতিরক্ষা চুক্তি তাদের হাতে এমন এক হাতিয়ার তুলে দিয়েছে যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সততার ভাবমূর্তিকে চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

সিনিয়র কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা এদিন দলের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন, "আমাদের দলের আক্রমণের তীর খোদ প্রধানমন্ত্রীর দিকে। কারণ তিনি এই বিরাট অঙ্কের প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য অনিল আম্বানির যে সংস্থাকে বেছে নিয়েছেন তাদের এরোস্পেস প্রযুক্তিতে বা যুদ্ধবিমান বানানোর কোনও অভিজ্ঞতাই নেই।"

"এর মাধ্যমে তিনি নিজের শপথ ভঙ্গ করেছেন, গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন - কারণ একমাত্র তারই ক্ষমতা ছিল ফ্রান্সে গিয়ে সরকারি সংস্থা হ্যালকে চুক্তি থেকে বের করে দিয়ে রিলায়েন্সকে ঢুকিয়ে নেওয়ার, আর অনিল আম্বানিকে তিনি সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গিয়েছিলেন।"

অথচ ২০১৫তে নরেন্দ্র মোদীর ফ্রান্স সফরের ঠিক আগে রাফালে-র নির্মাতা সংস্থা ডাসঁ-র সঙ্গে হ্যালের সমঝোতা যে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল, কংগ্রেস তার সমর্থনে একটি ভিডিও-ও আজ প্রকাশ করেছে।

গত শুক্রবার তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলন্দ-ও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অফসেট কোম্পানি হিসেবে ভারত সরকারই রিলায়েন্সকে তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল - অন্য কোনও সংস্থাকে বেছে নেওয়ার সুযোগই তাদের ছিল না।

এই তথ্য সামনে আসার পর থেকেই বিজেপি সরকার রাফালে চুক্তিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে হিমশিম খাচ্ছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য এখনও দাবি করে চলেছেন, "ফরাসি সংস্থা ডাসঁ এভিয়েশনের কাছে হ্যালের প্রস্তাব যাতে যথেষ্ঠ আকর্ষণীয় হয়, সেই দায়িত্ব ছিল পূর্বতন ইউপিএ সরকারের।"

কাজেই তার মতে, "কেন হ্যাল চুক্তি থেকে বাদ পড়ল, সেই প্রশ্ন করা উচিত কংগ্রেসকেই - বিজেপিকে নয়!"

কিন্তু এই যুক্তিতে কি রাফালে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বিজেপি নিজেদের আড়াল করতে পারবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোমা চৌধুরী নিশ্চিত নন।

মিস চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "ভিপি সিং-রাম জেঠমালানিরা মিলে যেভাবে বফর্স নিয়ে ঝড় তুলেছিলেন, বিরোধীরা সে ধরনের রাজনৈতিক শক্তি দেখাতে পারলে রাফালেও কিন্তু বিজেপির বফর্স হয়ে উঠতে পারে।"

"কারণ এত বড় প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অংশীদার কে হবে সেটা বেছে নেওয়ার কোনও এক্তিয়ার তাদের ছিল না - সরকারের এই বক্তব্য খুব ফাঁপা শোনাচ্ছে।"

"আর রাহুল গান্ধীর পরিবার বফর্সে অভিযুক্ত বলে কংগ্রেস রাফালে দুর্নীতির কথা বলতে পারবে না এটা কোনও যুক্তি নয় - কারণ শিখ দাঙ্গা হয়েছিল বলে কি গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ তোলা যাবে না?", বলছেন সোমা চৌধুরী।

বিজেপি অবশ্য আজও দাবি করেছে, রাফালে চুক্তি কোনও দুর্নীতি নয় - এটা আসলে 'পারসেপসেন ব্যাটল' বা দৃষ্টিভঙ্গীর যুদ্ধ, আর তারাও বিষয়টাকে সেভাবেই মোকাবিলা করবে। বাসস। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ