আজকের শিরোনাম :

‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২৯ | আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৪

মুক্তিযুদ্ধর চেতনা ভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক, কার্যকর গণতান্ত্রিক, শান্তির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের যাত্রা শুরু করেছে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া৷

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

৫ দফা দাবি: 

১। আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সকলের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা অর্থাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

২। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

৩। “কোটা সংস্কার” এবং “নিরাপদ সড়ক” আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না।

৪। নির্বাচনের ০১ (এক) মাস পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর ১০ (দশ) দিন পর্যন্ত মোট ৪০ (চল্লিশ) দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত করতে হবে।

৫। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমুখী করতে হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য:

১। বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং একব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের লক্ষ্যে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ যুগোপযোগী সংশোধন করা এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দোলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।

২। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন এবং ইতিপূর্বে দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

৩। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুব-সমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা।

৪। কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।

৫। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।

৬। রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

৭। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।

৮। “সকল দেশের সাথে বন্ধুত্ব-কারো সাথে শত্রুতা নয়” এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে পারস্পারিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৯। বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে যুক্তফ্রন্ট গঠনের ঘোষণা হয়। এরপর এই প্রক্রিয়ার সাথে ড. কামালের নেতৃত্বে গণফোরামও যুক্ত হয়।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ড. কামালের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে হঠাৎ যাত্রা বন্ধ করে দেন এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং তাদের ঐক্য প্রক্রিয়া ঘোষণা করেন।

এসময় আ স ম আব্দুর রব অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার৷ আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন আগামী বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে তারা শহীদ মিনার দখলে রাখতে না পারে৷

সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আ স ম আব্দুর রব, মাহামুদুর রহমান মান্না, ড. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বি. চৌধুরী অসুস্থতার কারণে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না৷ তবে তার পক্ষে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।

  

এবিএন/মাইকেল/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ