আজকের শিরোনাম :

আজও সড়কে শিক্ষার্থীরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০১৮, ১১:৩৬ | আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৮, ১২:৫২

ঢাকা, ০১ আগস্ট, এবিনিউজ : বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো আজ বুধবারও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

আজ বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা রাজপথে অবস্থান নেওয়ায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অফিসগামী মানুষকে। 

জানা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব মোড়, উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকা, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে। তবে কোথায়ও কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট এলাকায় এসে অবস্থান নেয়। এতে সড়কের একপাশে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগের দিকে চলে যায়। শাহবাগে তারা বিভিন্ন বাসের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে দেখে। লাইসেন্স দেখার পর গাড়িগুলো ছেড়ে দিচ্ছে।

তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করলে। যানচলাচল করতে পারছে না।

উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক মানিক মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছেলেরা ১০টার দিকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করছে। ফলে যানবাহন চলতে পারছে না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় এসে অবস্থান নিয়েছে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ডা. মাহাবুবুর রহমান মোল্লা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধনিয়া কলেজ ইত্যাদি। তারা সেখানে বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে জাবালে নূরের ‘ঘাতক’ চালককে গ্রেপ্তার এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবি। একপর্যায়ে তারা ব্যস্ত সড়কে বসে পড়েন।

এদিকে বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

মহানগর পুলিশের শ্যামপুর জোনের সহকারী কমিশনার ফয়সল মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে রাখায় ঢাকায় ঢোকার বা বের হওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিআরটিএর একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অভিযান শুরু করে। বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি মোটরসাইকেল আটকিয়ে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। 

বিআরটিএ জানিয়েছে, একজন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে এখানে অভিযান চালানো হচ্ছে। মূলত দুটি বিষয় দেখা হচ্ছে- এক. গণপরিবহনের ফিটনেস আছে কি না আর চালকদের লাইসেন্স সঠিক কি না। নির্বাহী হাকিম আবদুর রহিম সুজন সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩০টি মামলা করেছেন এবং ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। সেখানে বিআরটিএ চেয়ারম্যানও রয়েছেন।

এরই মধ্যে সেখানে লাইসেন্স না থাকায় তিনজন চালককে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর ফার্মগেট, বাংলামোটর, উত্তরার হাউস বিল্ডিং, কদমতলীর হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

ফার্মগেট এলাকায় দেখা গেছে, মতিঝিল-মিরপুর রুটের চিড়িয়াখানা নামক একটি বাসের ড্রাইভার আমিনুর রহমানের কাছে তার নিজস্ব লাইসেন্স না থাকায় যাত্রীদের নামিয়ে বাসটির চাবি কেড়ে নেয় শিক্ষার্থীরা। সে সময় সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব ড্রাইভারদের লাইসেন্স নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকার তো করছে না। দায়িত্বটা আমরাই হাতে তুলে নিলাম। বাসটির মালিক না এলে আমরা চাবি দিচ্ছি না।’

ফার্মগেটের মোড় থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত লাইসেন্স চেক করে শিক্ষার্থীরা। চেক করতে করতে হাবিবুল ইসলাম বলেন, ফার্মগেট থেকে কমপক্ষে ৫০টি গাড়ির ড্রাইভারদের লাইসেন্স চেক করেছি। কয়েকজনের লাইসেন্স পাইনি। তাদের প্রথমে চাবি কেড়ে নিয়েছি। পরে খুব রিকোয়েস্ট করে বলেছে লাইসেন্স করে নেবে। তখন আমরা চাবি দিয়েছি।

খাজাবাবা নামক একটি বাসের ড্রাইভার এনাম হোসেন বলেন, যে কাজ করবে পুলিশ, সেই কাজ করছে পোলাপান। 

সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়েছে সেখানকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

 

প্রসঙ্গত গত রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হন।

 

নিহতরা হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির দিয়া খানম মিম। এ ঘটনায় দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম রোববার রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।

ওই ঘটনার পর দোষীদের বিচার চেয়ে ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ