আজকের শিরোনাম :

মাদক মামলার বন্দিদের জন্য বিশেষ কারাগার করা হবে : বেনজীর

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৭

ঢাকা, ২৯ জুলাই, এবিনিউজ : র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সময় এসেছে মাদক মামলার বন্দিদের জন্য বিশেষ কারাগার করার। বঙ্গোপসাগরের কোন দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় সেই কারাগার হতে পারে।

বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি বিবেচনায় এনে মাদক মামলার বিচারে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আয়োজিত ‘মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা জানান।

বেনজীর আহমেদ বলেন, ৩৭ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতার জেলখানায় ৯০ হাজার বন্দি রয়েছে, এই বন্দিদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার আসামি। তার মানে জেলখানার ধারণক্ষমতার সমপরিমান মাদক সংশ্লিষ্টতায় বন্দি। সময় এসেছে এসব বন্দিদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোন দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় সে জেল হতে পারে। দয়া করে এটা করে দিন, যাতে মাদক মামলার আসামিদের আলাদা করতে পারি। এতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটাও সহজ হবে।

মাদক মামলার বিচারে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন: ৪ মে থেকে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে র‌্যাবের প্রায় ২ হাজার মামলা হয়েছে। আমি অবসরে চলে যাব, তখনও দেখা যাবে এসব মামলার বিচার শেষ হবে না। তাই ৫-৬ বছরের জন্য মাদক মামলার বিচারে প্রতি জেলায় বিশেষ আদালত গঠনের দাবি জানাচ্ছি। অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের দিয়ে প্রতি জেলায় একটা করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো কিছু শুরু করলে একশ্রেণীর মানুষ চিৎকার শুরু করেন। তারা আসলে কী পেতে চায়? জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও দেখেছি তারা রাতের পর রাত টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন। তাদের মধ্য থেকে কলোনিজমের ক্ষতটা শুকায়নি। তারা অন্যের সুরে সুর মেলান, পুতুলনাচের মতো অন্যের ইশারায় নাচতে থাকেন। তাদেরকে বলব এই কলোনিজম মনোনিবেশ থেকে বেরিয়ে আসেন।


তিনি বলেন, এ দেশ ১৬ কোটি মানুষের, মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধান্দাবাজের দেশ না।

কক্সবাজারে র‌্যাবের ৭টি ক্যাম্প রয়েছে জানিয়ে র‌্যাব ডিজি বলেন, এতে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ইয়াবার চালান কমেছে। কিন্তু বেলুনের মতো আরেকদিকে ফুলে উঠেছে, এখন শুরু হয়েছে সিলেট রুটে। র‌্যাব-পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই মিলে আমরা ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করব। দেখতে চাই মাদক ব্যবসায়ীরা কোথায় যায়?

মাদক আইনে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে র‌্যাব ডিজি বলেন, মাদকের সাথে জড়িতদের পানিশমেন্ট হতে হবে। মাদক বিক্রয়, সেবন সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার বিধান থাকতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যদি ৬০ লাখ মাদকসেবী হয়, তাহলে প্রতি ১৬ জনে একজন। তারা প্রতিদিন যদি একটি করেও ইয়াবা সেবন করে তাহলে ১৮০ কোটি টাকা, আর বছরে ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে হিরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল মিলে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য। বর্তমানে যুদ্ধটা হচ্ছে সাপ্লাই কাট পর্যায়, ডিমান্ড কাট আমাদের বড় চ্যালেঞ্চ।

বেনজীর বলেন, চাকরিতে প্রবেশের সময় ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্তটি অবশ্যই ভালো খবর। আমি চাই এটা রেনডমলি চালু হোক। পৃথিবীর কোন দেশই মাদকমুক্ত নয়, তবে এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এটা আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েই আমরা ঘরে ফিরব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মাদক আইনে পরিবর্তন আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান মাদক আইনে ধরা পড়ছে দুর্বলরা, যাদের কাছে ১০-১৫ পিস ইয়াবা রয়েছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে যারা রয়েছেন, যারা অর্থদাতা বা গডফাদাররা ধরা পড়ছে না। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদেরকেও নতুন আইনের আওতায় আনা হবে। মাদক বিরোধী নতুন আইনটি চূড়ান্ত হয়েছে, আশা করছি ২ সপ্তাহের মধ্যে এটি সংসদে উত্থাপন করতে পারব।

সভাপতির বক্তব্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের সক্ষমতা খুবই কম। তাই আমরা বিজিবি-কোস্টগার্ড, র‌্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা.অরূপ রতন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী।


এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ