আজকের শিরোনাম :

বাংলাদেশে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কেলেঙ্কারি: যতটা জানা যাচ্ছে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০১৮, ১৮:১৯

ঢাকা, ২৬ জুলাই, এবিনিউজ : বাংলাদেশের দিনাজপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা চুরির কেলেঙ্কারি সপ্তাহ-খানেক আগে ফাঁস হয়ে পড়ার পর সরকারের শীর্ষ মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দ্রুত বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চুরি ও দুর্নীতির মামলা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খনির চারজন শীর্ষ কর্মকর্তার দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

কীভাবে ফাঁস হলো এই দুর্নীতি

সরকারি এবং স্থানীয় বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই কয়লা চুরির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের প্রথম টনক নড়ে জুন মাসে যখন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে কয়লা সরবরাহে ঘাটতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে।

যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করতে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে খনির উৎপাদন কিছুদিনের বন্ধ থাকবে এই খবর পাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, খনি কর্তৃপক্ষ তখনও আশ্বাস দিয়েছিল, যথেষ্ট মজুদ তাদের রয়েছে। তবে প্রতিশ্রুতি মত কয়লা সরবরাহ করতে না পারায় জুলাইতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ করে দিতে হয়।

পরপরই জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত করা হয়। তখনই কর্তৃপক্ষ টের পান কয়লার প্রয়োজনীয় মজুদ আদৌ নেই।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি যখন সেই তদন্ত রিপোর্টটি বের হয়, তখন দেখা যায় ২০০৫ সাল থেকে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা উৎপাদন এবং সরবরাহের হিসাবের মধ্যে বিস্তর ফারাক। কাগজে কলমে এই ফারাক ১৪৪,৬৪৪ টন। অর্থাৎ ১৩ বছর ধরে খনি থেকে কয়লা চুরি হয়েছে।

কয়লার অভাবে পরে গত রোববার বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হয়।

নির্ভরযোগ্য একটি সূ্ত্ের জানা গেছে, যেহেতু চীনা একটি কোম্পানিকে কয়লা উত্তোলনের জন্য ফি দিতে হয়, সেজন্য উৎপাদনের হিসাবটি পেট্রোবাংলাকে কড়ায়-গণ্ডায় রাখতে হয়। সে কারণেই তদন্তে হিসাবের গরমিল সহজে ফাঁস হয়ে যায়।

তাৎক্ষণিক তৎপরতা

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ঐ তদন্তের পরে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে খনির শীর্ষ পর্যায়ের চারজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। দুজনকে ঢাকায় পেট্রোবাংলা সদর দপ্তরে বদলি করে দেওয়া হয়। পেট্রোবাংলা পুরো বিষয়টি এখন বিস্তারিতভাবে তদন্ত করছে।

মঙ্গলবার পার্বতীপুর থানায় একটি দুর্নীতির মামলা হয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষেরই একজন কর্মকর্তা মামলাটি করেছেন যেখানে ১৯ জন কর্মকর্তাকে আসামী করা হয়েছে।

পার্বতীপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ফখরুল ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন ঐ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে - "২০০৫ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৯শে জুলাই পর্যন্ত ১৪৪,৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা, যার আনুমানিক মূল্য ২৩০ কোটি টাকা, ঘাটতি বা চুরি হয়েছে বলে অনুমিত হয়েছে।"

মি. ইসলাম জানান, যেহেতু মামলাটি দুদকের তফশীলভূক্ত তাই পুলিশ মামলার নথিপত্র দুদকের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই কেলেঙ্কারি এখন তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন ।

একজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুদকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই তদন্ত দল দিনাজপুর যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কেলেঙ্কারি ফাঁসে বিস্মিত হননি অনেকেই

দিনাজপুরের সাংবাদিক আসাদুল্লাহ সরকার বলছেন, কয়লা চুরির এই ঘটনায় তিনি এবং স্থানীয় অনেকেই একবারেই বিস্মিত হননি।

"আমরা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে রিপোর্টও করেছি। এখানকার অনেকেই জানেন কীভাবে টেন্ডারে বিক্রির সময় অতিরিক্ত কয়লা খনির ইয়ার্ড থেকে বের হয়ে যায়। এখন আমরা শুধু চুরির একটা সংখ্যা পাচ্ছি।"

এই কয়লা খনি থেকে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৫ সালে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগে পাঁচ-চয় বছর ধরে কয়লা টেন্ডারে বিক্রি হতো। সারা দেশের ইটের ভাটাগুলো ছিল প্রধান ক্রেতা।

জানা গেছে, ইট পোড়ানোর মৌসুমে টেন্ডারের বাইরেও মন্ত্রী এম-পিদের কাছ থেকে ডি-ও (আদেশ) নিয়েও ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনতে আসতেন।

"এটা একরকম ওপেন সিক্রেট ছিল যে ব্যবসায়ী এবং খনির কিছু কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট কালোবাজারে কয়লা ছেড়ে দেয় ...এটা এখন কাগজে কলমে দেখা যাচ্ছে।"

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কী হবে?

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, খনির নতুন এলাকায় কয়লা উৎপাদন শুরু হবে আগস্ট মাসের শেষ। নাগাদ। তার আগে এই খনি থেকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা দেওয়া সম্ভব হবে না।

সরকার যদি জরুরী ভিত্তিতে ভারত বা অন্য কোথাও থেকে কয়লা না আনতে পারে, তাহলে ততদিন পর্যন্ত কম-বেশি ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ