আজকের শিরোনাম :

বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করছে বাংলাদেশ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৭:২৩

ঢাকা, ১৯ জুলাই, এবিনিউজ : ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপায়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়া।  বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে হাতে লেখা পাসপোর্টের বদলে ২০১০ সালে সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় প্রবর্তিত হয়েছিল মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট।  কিন্তু মেশিন রিডেবল পাসপোর্টেও জালিয়াতি করা হচ্ছে বিধায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনাকে আরও নির্ভূল, সহজতর, সময়-সাশ্রয়ী ও স্বাচ্ছন্দময় করতে বিশ্বের ১১৮টি দেশ ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রদান করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ও জার্মানের সঙ্গে ই-পাসপোর্ট ও অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ব্যাবস্থাপনা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানীর সঙ্গে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জিটুজি’র ভিত্তিতে টার্ন কী পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে।

চুক্তি স্বাক্ষরটি অনুষ্ঠিত হয় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান ও ভেরিডোস কোম্পানীর সিইও কুনসের মধ্যে।

‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বিশেষ অতিথি জার্মানির পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নেইলস আনেন।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে থেমে নেই বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ২ কোটিরও বেশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বাংলাদেশী নাগরিকদের দেয়া হয়েছে এবং ১১ লক্ষ্যেরও বেশি মেশিন রিডেবল ভিসা বিদেশিদের দেয়া হয়েছে। তবে এমআরপি পাসপোর্ট এখন বন্ধ হয়ে যাবে না। ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণরুপে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এমআরপি চালু থাকবে। রোহিঙ্গাদেরকে এ দেশে থাকার সুযোগ দিয়ে মাদার অব হিউম্যানিটি আখ্যা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর রোহিঙ্গারা যেনো বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে তাই এই অধিদপ্তরটিই সফলতা দেখিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের ইলেকট্রনিক নিবন্ধনের কাজটিও সম্পাদন করেছে।

জার্মানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নেইলস অ্যানেন তার বক্তব্যে বলেন, খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার পর অগ্রগতি অর্জন করছে। এই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানী কোম্পানীর সহায়তায় বাংলাদেশ তার চ্যালেঞ্জের পক্ষে আরও এগিয়ে যাচ্ছে। জার্মানীর ভেরিডোস কোম্পানী বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এর আগেও আছে। আর আমরা বাংলাদেশিদের এ কাজে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবো।

জিটুজি প্রকল্পের আওতায় যে বিষয়গুলো রয়েছে তা হলো- জার্মানের ভেরিডোস কোম্পানী ৩ কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে। ঢাকার উত্তরায় বুকলেটের জন্য একটি অ্যাসেম্বলি কারখানা স্থাপন করা হবে। যাতে বুকলেটের খরচ অর্ধেকেরও কম হবে। ৫০ টি ইগেট প্রদান করা হবে। সকল সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক ১০ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ সেবা প্রদান করবে। একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ ডাটা সেন্টার ও একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার এবং অত্যাধুনিক পার্সোনালাইজেশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে ৮ টি প্রিন্টিং মেশিন থাকবে এবং যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রতি শিফটে ৩০ হাজারেরও বেশি পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে ৭২ টি পাসপোর্ট অফিস, বিদেশে ৮০ টি মিশন, ৭২ টি এসবি/ডিএসবি অফিস, ২২টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ সকল অফিসে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক প্রদান করবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে জার্মানে ২ সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

প্রকল্পটির মূল্য ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, ভেরিডসের সঙ্গে চুক্তি মূল্য ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট ও এআইটি ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং প্রকল্পটির ব্যয় ২০৭ কোটি টাকা।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ হবে বয়সভেদে ৫ ও ১০ বছর। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাঁকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

ই-পাসপোর্টের সকল তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্ণিয়া এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট সিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকে বিধায় তা কোনোভাবেই পরিবর্তন বা জাল করা সম্ভব না। এই পাসপোর্টের মাধ্যমে হয়রানীমূলকভাবে দেশ ভ্রমণ সম্ভব হবে। কেননা এই প্রক্রিয়ার কারণে ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি শূন্যের কোঠায় ঠেকবে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তরটি। আবার অটোমেটেড মেশিন নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় যেখানে জাল পাসপোর্টের কোনো স্থান নেই।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ